আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
445 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (10 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম।
শায়েখ,

আমি বেশ কয়েকমাস যাবত OCD রোগে ভুগছি। ওয়াসওয়াসা বা কোন মানসিক রোগ ও বলতে পারেন। যার দরুন আমার মনে বিভিন্ন ধরনের নেগেটিভ বা নোংরা চিন্তা আসতে থাকে সবসময়। বিশেষ করে ধর্ম সক্রান্ত খারাপ চিন্তা বেশি আসে। যাকে মেডিকেল ভাষায় Religious OCD বলে।

(১) আল্লাহকে নিয়ে কোরআন কে নিয়ে আমার এতটায় নোংরা চিন্তা ভাবনা আমার চলে আসে যার জন্য আমার মনে হয় আমি কাফের হয়ে গেছি। কোন খারাপ কিছু শুনলে আমি সেটাকে আল্লাহর সাথে কল্পনা করে ফেলি। হিন্দুদের কোন কিছু দেখলে মনে হয় আমার হিন্দু হওয়া ভাল ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ বলে কেউ নেই। নিজের ঈমান নিয়ে সন্দেহে ভুগি।  নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। এছাড়া আল্লাহকে নিয়ে এতটায় ভয়াবহ নোংরা কথা মনে আসে যা আমি বলতে বা লিখতে পারবো না। যখনি আমার আল্লাহকে নিয়ে এসব নোংরা কথা মনে আসে আমি তখনি কপালে বাড়ি মারি। এমন চিন্তা আমার মাথায় আসে যেটা আমার বিশ্বাসের পরিপন্থি। শুধু এতটুকুই বলবো শায়েখ একটা মানুষ যতটা নোংরা চিন্তা করতে পারে আমার আল্লাহকে নিয়ে ঠিক সেসব চিন্তা চলে আসছে যা আমি কন্টোল করতে পারছি না। মনে সবসময় সন্দেহ ও ভয় কাজ করে মনে হয় আল্লাহ মনে হয় আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমাকে কিছু পরামর্শ দিন শায়েখ। আমার কি ঈমান আছে??

(২) তালাক নিয়ে ও আমি ওসিডিতে ভুগছি। সারাদিন মনের ভিতর তালাক,তালাক চলতে থাকে। ওয়াফের সাথে নরমাল কথাবার্তা বলার সময় মনের ভিতর তালাক, তালাক আসতে থাকে। যা আমাকে সবসময় পেরেশান করে রাখে।
গত রাতে আমি আমার ওয়াইফকে রাতে ঘুম থেকে উঠতে বলছি, সে উঠতে একটু দেরি করাতে আমার মুখ দিয়ে মনে হচ্ছে তালাক বেরিয়ে যাবে, বেরিয়ে গেছিলো কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন । মনে মনে বলছি না উচ্চারন করছি আমি নিজেই সন্দিহান। মনে হয় তালাক বলার জন্য আমাকে কেউ ফোর্স করছে। তাছাড়া হাচি দেবার সময়,কিছু খাওয়ার সময়, গোছলের সময় এমনকি মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হলেও মনে হচ্ছে তালাক বলে ফেললাম। এভাবে ভয় আর সন্দেহ নিয়ে আমার দিন কাটে। তালাক দেবার ইচ্ছা নাই, তবুও তালাক, তালাক আমি মনে সবসময় আসতে থাকে । এসব আমি ভুলতে পারি না। এই চিন্তার কষ্ট আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। তালাকের সন্দেহ আমার মনে এমন ভাবে বাসা বেধেছে যে, সবকিছুতই তালাক হয়ে গেল মনে হয়। ছোট ছোট বিষয়ে আমার সন্দেহ হয়। যেমন :

-ওয়াইফ ডিম ভাজবে কিনা আমাকে জিগ্গাসা করছে ।
-আমি বললাম, যা খুশি তাই করো। যখন বললাম তখন আমার মনে তালাক চলে আসলো। এবং মনে হলো এটা তো কেনায়া শব্দ। আমি যে তালাকের নিয়তে বলিনি সেটা মনকে বুঝ দেবার জন্য আবার বললাম যে,  যা খুশি তাই কর। ডিম ভাজলে ভাজো অথবা অন্য কিছু করলে করো। এমন কোন সাধারন কথাবার্তা বলার ভিতর যদি যা খুশি তাই করো বলি তাহলে মনে হয় আমি তালাকের নিয়তে বললাম। তখন ভয় লাগা শুরু হয়। আর কোন কাজে শান্তি পায় না।
ওয়াইফকে কোন সময় যদি এক জায়গা থেকে একটু সরে যাবার জন্য সরো বলি, তাতেও মনে হয় কেনায়া শব্দ হয়ে গেল কিনা।

(৩) ifatwa.info তে দেখলাম একজন প্রশ্ন করেছে শোশুরকে যদি কেউ বলে আপনার মেয়ের সাথে সংসার করবো না, তাহলে কি তালাক পতিত হবে? এটা দেখার পর আমার মনে সন্দেহ হচ্ছে, আমার তো অনেক আগে এক সময় আমার ওয়াইফের সাথে ঝামেলা চলছিল। তখন কি আমি কখনো আমার শশুর শাশুড়িকে এমন কথা বলেছি?
এসব ভেবে আবার মনের ভিতর অশান্তি লাগছে। এমন অবস্থায় আমি কি করবে শায়েখ ???

(৪) আজ সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মনের ভিতর আসলো যে,,,  তোমাকে তালাক দিলাম। মনে এটা আসার পর আমি বুঝতে পারছি না, এটা কি আমি মুখে উচ্চারন করলাম। না মনে মনে বললাম। এমন সন্দেহ আমার সবসময় কষ্ট দেয়। মনে মনে কিছু বললে সেটা আমার কাছে এতটায় রিয়েল মনে হয় যেন আমি উচ্চারন করে বললাম। এভাবে সন্দেহ নিয়ে বেচে থাকা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে শায়েখ। 

আমার আগের প্রশ্ন ও আপনাদের জবাব : দেখবেন দয়া করে।

https://ifatwa.info/56005/
https://ifatwa.info/55576/

(৪) শায়েখের কাছে আমার প্রশ্ন আমার যদি কোন সময় তালাক মুখ দিয়ে উচ্চারন হয়ে যায় তাহলে কি তালাক কার্যকর হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

 يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ ، فَيَقُولَ : مَنْ خَلَقَ كَذَا وَكَذَا ؟ حَتَّى يَقُولَ لَهُ : مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ ؟ فَإِذَا بَلَغَ ذَلِكَ ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ 
শয়তান তোমাদের কারো নিকট আসে এবং বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে, ওটা কে সৃষ্টি করেছে? পরিশেষে এ প্রশ্নও করে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যায়ে পৌঁছলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর এবং এ ধরণের ভাবনা থেকে বিরত হও। ( বুখারী ৩২৭ )

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার মনে যে আল্লাহকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা চলে আসে,প্রশ্নে উল্লেখিত যাবতীয় সব বিষয় শয়তানের ওয়াসওয়াসা। 

হাদিস শরিফে  এসেছে, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلُوهُ: إِنَّا نَجِدُ فِي أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ، قَالَ: وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ؟ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ.
সারমর্মঃ
একবার সাহাবায়ে কেরমের একদল রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা আমাদের অন্তরে কখনো কখনো এমন বিষয় অনুভব করি, যা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা আমাদের কাছে খুব কঠিন মনে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সত্যিই কি তোমরা এরকম পেয়ে থাক? তাঁরা বললেন হ্যাঁ, আমরা এরকম অনুভব করে থাকি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ذَاكَ صَرِيحُ الْإِيمَانِ এটি তোমাদের ঈমানের স্পষ্ট প্রমাণ। (মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ: অন্তরের ওয়াসওয়াসা)
,
সুতরাং এইসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করবে তখন স্মরণ করুন যে, এটা ঈমানের আলামত। শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। 

আপনি নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। এদিকে বেশি মনোযোগ দিবেন না। কেননা, এইসব অবাঞ্ছিত চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে তা দূর করা যায় এ চিন্তায় পড়ে গেলে আপনি এখানেই আটকা পড়ে যাবেন। সামনে অগ্রসর হওয়া আর সম্ভব হবে না। এভাবে শয়তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।
,
যে কোনো ওয়াসওয়াসার প্রধান চিকিৎসা এটাই যে, একে গুরুত্ব না দেয়া। কী চিন্তা আসল, কী চিন্তা গেল-তা না ভেবে নিজের কাজে মশগুল থাকুন। কেননা, এটা মূলত শয়তানের কাজ। 

আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا وَلَيْسَ بِضَارِّهِمْ شَيْئًا إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

এই ওয়াসওয়াসা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার জন্যে। তবে (এই ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে) সে মুমিনদেরকে চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না, আল্লাহর হুকুম ছাড়া। মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা। (সূরা মুজাদালাহ ১০)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
পরামর্শ থাকবে, দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে যুক্ত হয়ে চিল্লায় যাওয়ার।
আপনার জন্য এহেন চিন্তা মাথায় আসলেই অন্য মনস্ক হয়ে যাওয়া জরুরি জরুরি  ।
এসব চিন্তা আসলেই নিজেকে কোনো কাজে লিপ্ত করে দেয়া।
মাথায় এগুলো আসতেই দিবেননা।
বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন। 

এসব চিন্তা মাথায় আসলেই আপনি آمنت بالله ورسوله পড়ে নিবেন।
لا حول ولا قوة الا بالله العلي العظيم  পড়বেন। বাম দিকে তিন বার থুথু নিক্ষেপ করতে পারেন।

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم পড়বেন।

(০২)
প্রশ্নের বিবরণ মতে তালাক হবেনা। 

(০৩)
বিষয়টিকে পাত্তা দিবেননা।
এড়িয়ে চলুন।

(০৪)
এতে তালাক হবেনা।
আপনি নিশ্চিত থাকুন। 

(০৫)

এসব ফতোয়াতে বিজ্ঞ মুফতী সাহেবগন পূর্বেই আপনাকে ওয়াসওয়াসার রুগী দের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
সুতরাং আপনার তালাক হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...