জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শরীয়তের বিধান হলো বিনা ওজরে কাশি দেওয়া। অপ্রয়োজনে কাশি দেওয়ার দ্বারা নামাজ ভেঙে যায়। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৬১৮, মারাকিল ফালাহ ১/১২১, আল বাহরুর রায়েক ২/৫)
,
তবে প্রয়োজনে কাশি দিলে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
তবে অতিরিক্ত যেনো না হয়,বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
(০২)
পর্দা ইসলামের এক ফরজ বিধান।
আল্লাহ তায়াল বলেনঃ
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
,
তবে আপনার মা পর্দা না করে বাহিরে বের হলে,আপনি যদি তার সাথে যান,আপনার হাজারো বুঝানোর পরেও যদি আপনার মা তা না শোনেন,তাহলে আপনার কোনো গুনাহ হবেনা।
কুরআন শরীফে এসেছেঃ
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ
আল্লাহ তায়ালা কাহারো গুনাহের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেননা।
(সুরা ফাতির ১৮)
,
তবে আপনি যদি আপনার মা কে বুঝান যে আপনি পর্দা না করলে আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা,তাহলে হয়তোবা কোনো একদিন এই এক কারনে হলেও আপনার মা পর্দা করতে পারে,তাই এই দিম খেয়াল করে আপনার জন্য তার সাথে বেপর্দা অবস্থায় বাহিরে না যাওয়াটাই ভালো।
,
(০৩)
একে অপরের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে বহু রকমের বিব্রতকর ও বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
যথা-
★ঘরে কখনো একান্ত ব্যক্তিগত কাজ করা হয় যা অন্য কারো দৃষ্টিগোচর হওয়া ঘরের বাসিন্দার অপছন্দ।
★কখনো একান্ত জরুরি কাপড় ছাড়া অন্য কাপড় খুলে রাখা হয় (বা খুলে যায়)। এ অবস্থায় বিনা অনুমতিতে কেউ প্রবেশ করে ফেললে সে বিব্রত বোধ করে।
★আবার কখনো কোনো বিষয়ে গভীর মনোনিবেশ করা হয়। এক্ষেত্রে অকস্মাৎ কেউ এসে পড়লে সে চমকে উঠে; দিল-দেমাগের উপর চোট পড়ার আশংকা থাকে। এ সমস্যাগুলো কারো একান্ত কক্ষে বিনা অনুমতিতে প্রবেশের দ্বারা ঘটতে পারে।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাহরাম আত্মীয়দের (যাদের পারস্পরিক বিবাহ হারাম) পরস্পরের মধ্যে পর্দার বিধান না থাকলেও একে অপরের ‘সতর’ দেখা নাজায়েয। আর ব্যক্তিগত কাজ, অবস্থা ও অবস্থান তো প্রত্যেকেরই কমবেশি থাকে। এ কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মাহরামদেরও একে অন্যের ঘরে গেলে সর্বদা অনুমতি নেওয়া উচিত। পিতা-মাতা, প্রাপ্তবয়স্ক ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে সকল মাহরামের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য।
তবে সাবালকত্বে পৌঁছেনি এমন শিশুরা যেহেতু সাধারণত ঘরে ছোটাছুটি করে তাই তারা শুধু ঐ সময়গুলোতে অনুমতি নিবে যে সময়গুলোতে বড়রা বিশ্রাম ও একান্তে অবস্থান করে। এছাড়া অন্য সময়ে তাদের অনুমতি নিতে হবে না। বড়দের কর্তব্য নিজেদের বিশ্রাম ও একান্তে অবস্থানের সময়গুলোতে শিশুদের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করার শিক্ষা দেওয়া ও উদ্বুদ্ধ করা। যাতে এ সময়গুলোতে তারাও অনুমতি ছাড়া বড়দের ঘরে প্রবেশ না করে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِیَسْتَاْذِنْكُمُ الَّذِیْنَ مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْ وَ الَّذِیْنَ لَمْ یَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنْكُمْ ثَلٰثَ مَرّٰتٍ مِنْ قَبْلِ صَلٰوةِ الْفَجْرِ وَ حِیْنَ تَضَعُوْنَ ثِیَابَكُمْ مِّنَ الظَّهِیْرَةِ وَ مِنْۢ بَعْدِ صَلٰوةِ الْعِشَآءِ ثَلٰثُ عَوْرٰتٍ لَّكُمْ لَیْسَ عَلَیْكُمْ وَ لَا عَلَیْهِمْ جُنَاحٌۢ بَعْدَهُنَّ طَوّٰفُوْنَ عَلَیْكُمْ بَعْضُكُمْ عَلٰی بَعْضٍ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللهُ لَكُمُ الْاٰیٰتِ وَ اللهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ . وَ اِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْیَسْتَاْذِنُوْا كَمَا اسْتَاْذَنَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذٰلِكَ یُبَیِّنُ اللهُ لَكُمْ اٰیٰتِهٖ وَ اللهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ.
হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনো সাবালকত্বে পৌঁছেনি সেই শিশুরা যেন তিনটি সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে- ফজরের নামাযের আগে, দুপুর বেলা যখন তোমরা পোশাক খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এ তিনটি তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এ তিন সময় ছাড়া অন্য সময়ে তোমাদের ও তাদের প্রতি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তো সার্বক্ষণিক যাতায়াত থাকেই। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের কাছে তার আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তোমাদের শিশুরা সাবালক হয়ে গেলে যেন অনুমতি গ্রহণ করে, যেমন তাদের আগের বয়ঃপ্রাপ্তরা অনুমতি গ্রহণ করে আসছে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। -সূরা নূর (২৪) : ৫৮-৫৯
এখানে বিশেষ তিনটি সময়ে শিশুদেরকেও অনুমতি নিয়ে প্রবেশের আদেশ করা হয়েছে। কারণ, এ সময়গুলোতে সাধারণত মানুষ একটু খোলামেলা থাকতে পছন্দ করে। এ অবস্থায় হঠাৎ কেউ উপস্থিত হয়ে গেলে পর্দাহীনতার আশংকা থাকে আর আরাম-বিশ্রামের তো বিঘœ ঘটেই। কিন্তু অন্য সময়ে যেহেতু এসব ভয় থাকে না আবার তারা বেশি বেশি যাতায়াতও করে তাই তখন তারা বিনা অনুমতিতেও প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু সাবালকত্বে পৌঁছে যাওয়া ছেলে-মেয়ে এবং বড়দের অনুমতির বিষয়টি এ তিন সময়ে সীমাবদ্ধ না করে তাদেরকে সাধারণভাবে অনুমতি নেওয়ার আদেশ করা হয়েছে।
আলকামা থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি মায়ের কাছে গেলে অনুমতি নিব? বললেন, সব অবস্থায় তোমার তাকে দেখা পছন্দ হবে না। -আলআদাবুল মুফরাদ, বর্ণনা ১০৫৯
আতা ইবনে আবী রাবাহ থেকে বর্ণিত, আমি ইবনে আব্বাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, বোনের কাছে গেলে কি আমি অনুমতি নিব? বললেন, হাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, আমার প্রতিপালনে দুটি বোন আছে, আমি তাদের দেখাশোনা করি এবং তাদের জন্য খরচ করি, তাদের কাছে গেলেও কি আমার অনুমতি নিতে হবে? বললেন, হাঁ। তোমার কি তাদেরকে বিবস্ত্র দেখা পছন্দ হবে? এরপর তিনি সূরা নূরের ৫৮ ও ৫৯ নং আয়াত পাঠ করে বলেন, সকলের জন্য অনুমতি নেওয়া জরুরি। (-আল আদাবুল মুফরাদ, বর্ণনা ১০৬৩)
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বাবার রুমে প্রবেশ করতে হলে সালাম বা গলা আওয়াজ করে হলেও একটু জানা দিতে হবে।