কুরআন কারীমে বলেছেন,
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ (10) أُولَٰئِكَ الْمُقَرَّبُونَ (11) فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ (12) ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ (13) وَقَلِيلٌ مِّنَ الْآخِرِينَ (14)
অর্থাৎ, আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তী। তারাই হবে নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে সুখময় জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। (ওয়াকিয়াঃ ১০-১৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তার সাথে কেউ নেই। ইতিমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান। অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেস্ত প্রবেশ করবে।”
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেস্তী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেস্ত প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রসুল (ﷺ)-এর সাহাবা। কিছু লোক বলল, বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, “তোমরা কি ব্যাপারে আলোচনা করছ?” তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, “ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না, ঝাড়ফুঁক করায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।”
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন যে, (হে আল্লাহর রসূল!) আপনি আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!” তিনি বললেন, “তুমি তাদের মধ্যে একজন।” অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বললেন, “উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫, ৩৪১০; তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৬)
حَدَّثَنَا أَبُو حَصِينٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ يُونُسَ، كُوفِيٌّ حَدَّثَنَا عَبْثَرُ بْنُ الْقَاسِمِ، حَدَّثَنَا حُصَيْنٌ، هُوَ ابْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم جَعَلَ يَمُرُّ بِالنَّبِيِّ وَالنَّبِيَّيْنِ وَمَعَهُمُ الْقَوْمُ وَالنَّبِيِّ وَالنَّبِيَّيْنِ وَمَعَهُمُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيِّ وَالنَّبِيِّينَ وَلَيْسَ مَعَهُمْ أَحَدٌ حَتَّى مَرَّ بِسَوَادٍ عَظِيمٍ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قِيلَ مُوسَى وَقَوْمُهُ وَلَكِنِ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَانْظُرْ . قَالَ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ قَدْ سَدَّ الأُفُقَ مِنْ ذَا الْجَانِبِ وَمِنْ ذَا الْجَانِبِ فَقِيلَ هَؤُلاَءِ أُمَّتُكَ وَسِوَى هَؤُلاَءِ مِنْ أُمَّتِكَ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ . فَدَخَلَ وَلَمْ يَسْأَلُوهُ وَلَمْ يُفَسِّرْ لَهُمْ فَقَالُوا نَحْنُ هُمْ . وَقَالَ قَائِلُونَ هُمْ أَبْنَاؤُنَا الَّذِينَ وُلِدُوا عَلَى الْفِطْرَةِ وَالإِسْلاَمِ . فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " هُمُ الَّذِينَ لاَ يَكْتَوُونَ وَلاَ يَسْتَرْقُونَ وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ " . فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ أَنَا مِنْهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " نَعَمْ " . ثُمَّ قَامَ آخَرُ فَقَالَ أَنَا مِنْهُمْ فَقَالَ " سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ " .
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাত্রিতে যখন উর্ধারোহণ করলেন, তখন তিনি নবী ও নবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখতে পেলেন তাদের সাথে আছে তাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নবী ও তার সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নবীর সাথে কেউ নেই।
অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা (আঃ) ও তার উন্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেন, যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমি কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।
(তিরমিজি ২৪৪৬)
এখানে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কারীদের ৪ টি গুন বলা হয়েছেঃ
(ক) দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না,
(খ) অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না এবং
(গ) কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না,
(ঘ) বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।
সারাজীবন পরিপূর্ণ ভাবে নামাজ রোযা আদায় ও যাকাত হজ্জ (এ দুটি ফরজ হলে) পূর্ণ আদায় ও শরীয়তের যাবতীয় বিধিনিষেধ মানার পাশাপাশি উপরোক্ত চারটি গুন নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।