আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
248 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (27 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমার কাছে পরীক্ষা অনেকটা আতঙ্কের বিষয়ের মতো। আজকে আমি আমার একাডেমিক পরীক্ষার ডেট শুনে অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই কারন আমার বই ভালোভাবে শেষ হয়নি। তারপর আমার মনে হলো যে আখিরাতের পরীক্ষা তো আরো ভয়ানক। তাই শুধু মনে হচ্ছে যে এমন কি কোনো উপায় আছে যে আখিরাতে পার পাওয়া যাবে যাতে করে আমাকে পরীক্ষা দিতে মানে দুনিয়ায় কী করেছি না করেছি এটার হিসাব না দিতে হয়? যদি এরুপ কোনো উপায় বা আমল থাকে দয়া করে আমাকে বলবেন।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


কুরআন কারীমে বলেছেন,

وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ (10) أُولَٰئِكَ الْمُقَرَّبُونَ (11) فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ (12) ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِينَ (13) وَقَلِيلٌ مِّنَ الْآخِرِينَ (14)

অর্থাৎ, আর অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তী। তারাই হবে নৈকট্যপ্রাপ্ত। তারা থাকবে সুখময় জান্নাতসমূহে। বহুসংখ্যক হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। (ওয়াকিয়াঃ ১০-১৪)


হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তার সাথে কেউ নেই। ইতিমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান। অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেস্ত প্রবেশ করবে।”
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেস্তী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেস্ত প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রসুল (ﷺ)-এর সাহাবা। কিছু লোক বলল, বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি। আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, “তোমরা কি ব্যাপারে আলোচনা করছ?” তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, “ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না, ঝাড়ফুঁক করায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।”
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন যে, (হে আল্লাহর রসূল!) আপনি আমার জন্য দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!” তিনি বললেন, “তুমি তাদের মধ্যে একজন।” অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি আমার জন্যও দুআ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন। তিনি বললেন, “উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭০৫, ৩৪১০; তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৬)

حَدَّثَنَا أَبُو حَصِينٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ يُونُسَ، كُوفِيٌّ حَدَّثَنَا عَبْثَرُ بْنُ الْقَاسِمِ، حَدَّثَنَا حُصَيْنٌ، هُوَ ابْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ لَمَّا أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم جَعَلَ يَمُرُّ بِالنَّبِيِّ وَالنَّبِيَّيْنِ وَمَعَهُمُ الْقَوْمُ وَالنَّبِيِّ وَالنَّبِيَّيْنِ وَمَعَهُمُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيِّ وَالنَّبِيِّينَ وَلَيْسَ مَعَهُمْ أَحَدٌ حَتَّى مَرَّ بِسَوَادٍ عَظِيمٍ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قِيلَ مُوسَى وَقَوْمُهُ وَلَكِنِ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَانْظُرْ . قَالَ فَإِذَا سَوَادٌ عَظِيمٌ قَدْ سَدَّ الأُفُقَ مِنْ ذَا الْجَانِبِ وَمِنْ ذَا الْجَانِبِ فَقِيلَ هَؤُلاَءِ أُمَّتُكَ وَسِوَى هَؤُلاَءِ مِنْ أُمَّتِكَ سَبْعُونَ أَلْفًا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ . فَدَخَلَ وَلَمْ يَسْأَلُوهُ وَلَمْ يُفَسِّرْ لَهُمْ فَقَالُوا نَحْنُ هُمْ . وَقَالَ قَائِلُونَ هُمْ أَبْنَاؤُنَا الَّذِينَ وُلِدُوا عَلَى الْفِطْرَةِ وَالإِسْلاَمِ . فَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " هُمُ الَّذِينَ لاَ يَكْتَوُونَ وَلاَ يَسْتَرْقُونَ وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ " . فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ أَنَا مِنْهُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " نَعَمْ " . ثُمَّ قَامَ آخَرُ فَقَالَ أَنَا مِنْهُمْ فَقَالَ " سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ " .

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাত্রিতে যখন উর্ধারোহণ করলেন, তখন তিনি নবী ও নবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখতে পেলেন তাদের সাথে আছে তাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নবী ও তার সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নবীর সাথে কেউ নেই।

অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা (আঃ) ও তার উন্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতোমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেন, যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমি কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে।
(তিরমিজি ২৪৪৬)

এখানে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কারীদের ৪ টি গুন বলা হয়েছেঃ
(ক) দাগ কেটে রোগের চিকিৎসা করায় না,
(খ) অন্যের কাছে রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না এবং
(গ) কোনো জিনিসকে অশুভ লক্ষণ বলে মনে করে না,
(ঘ) বরং তারা শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সারাজীবন পরিপূর্ণ ভাবে নামাজ রোযা আদায় ও যাকাত হজ্জ (এ দুটি ফরজ হলে) পূর্ণ আদায় ও শরীয়তের যাবতীয় বিধিনিষেধ মানার পাশাপাশি উপরোক্ত চারটি গুন নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

তাহলেই মহান আল্লাহ তায়ালা বিনা হিসেবে জান্নাতে দিবেন,ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...