জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মাহরাম থাকা সফরের জন্য শর্ত। হজ্বের জন্য নয়। তাইতো সফরের দূরত্ব থেকে কম দূরত্বে থাকা মহিলাদের জন্য হজ্ব ফরয হতে মাহরাম থাকা জরুরী নয়। সে সকল মহিলা মাহরাম পুরুষ ছাড়াই একাকি হজ্ব করতে পারবে।
তবে সফরের দূরত্ব (৭৮ কি.মি.) পরিমাণ দূরে যে সকল মহিলারা বসবাস করে যেমন বাংলাদেশী মহিলা, তাদের উপর হজ্ব আদায় করা ফরয হয়না মাহরাম না থাকলে, কিন্তু হজ্বের অন্যান্য শর্ত পাওয়া গেলে মূল হজ্ব তার উপর আবশ্যক হয়, কিন্তু আদায় করা ফরয হয়না।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل لإمرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تسافر سفرا يكون ثلاثة أيام فصاعدا إلا ومعها أبوها أو ابنها أو زوجها أو أخوها أو ذو محرم منها
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখেএমন কোন মহিলার জন্য জায়েজ নয়, তিন দিন বা এর চেয়ে অধিক দিনের সফর করে অথচ তার সাথে তার পিতা, তার ছেলে, বা তার স্বামী বা তার ভাই কিংবা কোন মাহরাম না থাকে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪২৩}
فى الهندية- وَمِنْهَا الْمَحْرَمُ لِلْمَرْأَةِ شَابَّةً كانت أو عَجُوزًاإذَا كانت بَيْنَهَا وَبَيْنَ مَكَّةَ مَسِيرَةُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ هَكَذَا في الْمُحِيطِ وَإِنْ كان أَقَلَّ من ذلك حَجَّتْ بِغَيْرِ مَحْرَمٍ كَذَا في الْبَدَائِعِ (الفتوى الهندية-2/218-219
যার সারমর্ম হলো হজ ফরজ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত হলো মাহরাম থাকা,,,,
( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/২১৮-২১৯)
বাদায়েউস সানায়ে-৩/৪৬৫
আল বাহরুর রায়েক-২/৫৫২
يُشْتَرَطُ فِي حَجِّ الْمَرْأَةِ مِنْ سَفَرِ زَوْجٍ أَوْ مَحْرَمٍ بَالِغٍ عَاقِلٍ غَيْرِ مَجُوسِيٍّ وَلَا فَاسِقٍ مَعَ النَّفَقَةِ عَلَيْهِ وَأَطْلَقَ الْمَرْأَةَ فَشَمِلَ الشَّابَّةَ وَالْعَجُوزَ لِإِطْلَاقِ النُّصُوصِ (البحر الرائق، كتاب الحج-2/552، المحيط البرهانى، كتاب الحج، الفصل الأول-3/394
হজের সফরে মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা প্রাপ্ত বয়স্ক জ্ঞানী মাহরাম থাকা শর্ত,,,,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত ""কোন মহিলার স্বামী যদি সৌদি প্রবাসী হয়। সে মহিলা বাংলাদেশ থেকে একাকী সফর করে হজ্ব বা উমরাহর জন্য সৌদিতে যেতে পারবেনা।
এটি নাজায়েজ।
,
(০২)
মহিলারা কোনো অবস্থাতেই মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবেন না। আর প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ইমাম সাহেব মাহরাম নয়। তার সঙ্গে হজে যাওয়া মহিলাদের জন্য জায়েজ নয়। সুতরাং উক্ত মহিলার নিজের মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে। কারণ, হজে প্রত্যেক মহিলার সঙ্গে তার নিজ মাহরাম থাকতেই হয়।
হাদীস শরীফে এসেছে, ইবনে আববাস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ বলেছেন,
لاَ تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ، وَلاَ يَدْخُلُ عَلَيْهَا رَجُلٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ ”. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ فِي جَيْشِ كَذَا وَكَذَا، وَامْرَأَتِي تُرِيدُ الْحَجَّ. فَقَالَ ” اخْرُجْ مَعَهَا
কোনো মহিলা তার মাহরাম ব্যতিরেকে সফর করবে না এবং কোনো পুরুষ মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলার নিকট যাবে না। অতপর এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সৈন্যদলের সাথে জিহাদে যেতে চাই আর আমার স্ত্রী হজে যেতে চায়। নবী করীম ﷺ বললেন, তুমিও তার সাথে হজে যাও। (সহীহ বুখারী ১৭৪০)
,
(বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৪; মুখতাসারুত তহাবী ৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; যুবদাতুল মানাসিক ৩২)
পর্দা একটি ফরজ বিধান। এটি লঙ্ঘণ করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। এ কারণেই মহিলাদের উপর হজ্ব আদায় করা ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম থাকা শর্ত। যদি কোন মহিলার মাহরাম আত্মীয় না থাকে, তাহলে হজ্বের যাবতীয় খরচ থাকা সত্বেও তার উপর হজ্ব আদায় করা ফরজ হয় না।
পরপুরুষের হাত ধরা, শরীর স্পর্শ করা সবই মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ। হজ্ব কবুল হওয়ার জন্য এসব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীসে এরশাদ হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَجَّ هَذَا البَيْتَ، فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব করেছে এবং তাতে কোনরূপ অশ্লীল কথা বলেনি, এবং কোন গোনাহের কাজ করেনি, সেই ব্যক্তি হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করবে গোনাহহীন অবস্থায়, যেমন গোনাহহীন ছিল যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৮১৯, ১৭২৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৫০}
এ কারণে মাহরাম ছাড়া অন্য কারো সাথে হজ্জ বা উমরা পালন করলে বা গোনাহের কাজ করার দ্বারা গোনাহ হলেও তা মাকরূহের সাথে আদায় হয়ে যায়। বাকি কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইলে দয়ালু আল্লাহ তাআলা আশা করি উক্ত হজ্জ বা উমরাটি কবুল করতে পারেন।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ (سورة النساء-48
যার সারমর্ম হলোঃ আল্লাহ তায়ালা শিরক ব্যাতিত সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন,,,,
وَلَوْ حَجَّتْ بِلَا مَحْرَمٍ جَازَ مَعَ الْكَرَاهَةِ الخ- (قَوْلُهُ مَعَ الْكَرَاهَةِ) أَيْ التَّحْرِيمِيَّةِ لِلنَّهْيِ فِي حَدِيثِ الصَّحِيحَيْنِ «لَا تُسَافِرْ امْرَأَةٌ ثَلَاثًا إلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ» زَادَ مُسْلِمٌ فِي رِوَايَةٍ «أَوْ زَوْجٌ» (رد المحتار، كتاب الحج، مطبع كراچى-2/465
যদি মাহরাম ছাড়াই হজ আদায় করে,তাহলে মাকরুহ এর সহিত হজ আদায় হয়ে যাবে।
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত ""আজকাল আমাদের দেশে কিছু মহিলা যেমন ১০-১২ জন একটা গ্রুপ করে। পরে একজন ইমামের অধীনে হজ্বে গমন করে। এটা নাজায়েজ।
,
যদিও এর দ্বারা হজ মাকরুহের সহিত আদায় হয়ে যাবে,তবে কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইলে দয়ালু আল্লাহ তাআলা আশা করি উক্ত হজ্জ কবুল করতে পারেন।