আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
597 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (6 points)
সূরা আরাফের ৭ আয়াতে বলা হয়েছে
আর তাদের মধ্যে থাকবে পর্দা এবং আরাফের* উপর থাকবে কিছু লোক, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে। আর তারা জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাকবে যে, তোমাদের উপর সালাম । তারা (এখনো) তাতে প্রবেশ করেনি তবে তারা আশা করবে। আল-বায়ান

উভয় দলের মাঝে আছে পর্দা আর আরাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী অংশ) কিছু লোক থাকবে যারা প্রত্যেক লোককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে (যে সে জান্নাতের বাসিন্দা না জাহান্নামের)। জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে তারা বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম। তারা (আরাফবাসীরা) তখনও জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা আশা করছে।   তাইসিরুল

এই উভয় শ্রেণীর লোকদের মাঝে পার্থক্যকারী একটি পর্দা রয়েছে। এবং আরাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের ঊর্ধ্বস্থানে) কিছু লোক থাকবে, তারা প্রত্যেককে লক্ষণ ও চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে। তারা জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক; তখনো তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি বটে, কিন্তু তারা প্রবেশ করার আকাংখা করবে।  মুজিবুর রহমান

শাইখ এই আয়াতের দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে একটু সম্পূর্ন ব্যখ্যা করে বললে উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
by (566,790 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

সুরা আরাফে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ  
بَیۡنَہُمَا حِجَابٌ ۚ وَ عَلَی الۡاَعۡرَافِ رِجَالٌ یَّعۡرِفُوۡنَ کُلًّۢا بِسِیۡمٰہُمۡ ۚ وَ نَادَوۡا اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ اَنۡ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۟ لَمۡ یَدۡخُلُوۡہَا وَ ہُمۡ یَطۡمَعُوۡنَ ﴿۴۶﴾

উভয়ের (জান্নাতি ও জাহান্নামিদের) মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে। আরাফে কিছু লোক থাকবে, যারা প্রত্যেককে তাদের চিহ্ন দিয়ে চিনে নেবে। তারা জান্নাতিদের ডেকে বলবে, 'তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।' তখনো তারা জান্নাতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু (প্রবেশ করার ব্যাপারে) আগ্রহী হবে। (সুরা আরাফ ৪৬)
,
যখন তাদের দৃষ্টি জাহান্নামিদের প্রতি ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তখন তারা বলবে, 'হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের (এ) জালিমদের সঙ্গী কোরো না।'
(সুরা আরাফ ৪৭)

 আরাফবাসীরা যাদেরকে তাদের (কাফির হওয়ার) চিহ্ন দিয়ে চিনতে পারবে, তাদের ডেকে (উপহাস করে) বলবে, 'তোমাদের দলবল ও অহংকার তোমাদের কোনো কাজে আসেনি।' 
(সুরা আরাফ ৪৮)

এরা (মুসলমানরা) কি তারাই, যাদের সম্পর্কে তোমরা (কাফিররা) শপথ করে বলতে যে আল্লাহ এদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন না? (তারপর আরাফবাসীদের বলা হবে,) 'জান্নাতে প্রবেশ করো। তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।' (সুরা আরাফ :৪৯)
,
উল্লিখিত আয়াতগুলো আরাফবাসীদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। তারা হবে এমন এক দল, যাদের পাপ-পুণ্য সমান হবে। ফলে তারা জান্নাতবাসীদের সঙ্গেও মিলিত হতে পারবে না, আবার জাহান্নামেও নিক্ষিপ্ত হবে না। তাদের অবস্থা হবে সমান সমান। তারা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের অপেক্ষায় থাকবে। তারা জান্নাতবাসীদের তাদের চেহারায় বিদ্যমান শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতার কারণে চিনতে পারবে। আবার জাহান্নামবাসীদেরও চিনতে পারবে তাদের কলুষিত ও কালিমালিপ্ত চেহারা দেখে। এসব আরাফবাসী জান্নাতিদের সালাম দিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বুকভরা আশা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকবে। যেন তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। কিন্তু তাদের দৃষ্টি যখন জাহান্নামিদের ওপর নিক্ষিপ্ত হবে, 
তখন তাদের ভয়াবহ আজাব দেখে আরাফবাসীরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে, যেন তাদের ঠিকানা ওদের সঙ্গে না হয়। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা আরাফবাসীদের প্রতি দয়া করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
,
জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি প্রাচীর ও বেষ্টনী হবে। এ বেষ্টনীর উপরিভাগের নাম আরাফ। কেননা আরাফ 'ওরফ' শব্দের বহুবচন। এর অর্থ প্রতিটি বস্তুর উপরিভাগ। কারণ দূর থেকে বস্তুর এ ভাগই 'মারুফ' তথা খ্যাত হয়ে থাকে। এ ব্যাখ্যা থেকে জানা গেল যে আরাফ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান। প্রাচীর বেষ্টনীর উপরিভাগকে আরাফ বলা হয়। উল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে আরাফ নামের স্থানে হাশরের দিন কিছু লোক থাকবে। তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকের অবস্থা নিরীক্ষণ করবে এবং উভয় পক্ষের লোকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর ও কথাবার্তা বলার সুযোগ পাবে। আরাফবাসীরা জান্নাতবাসীদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করবে। এতে বোঝা যায় যে সালাম এমন এক ইবাদত, যা জান্নাতেও অবশিষ্ট থাকবে।
,
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আরাফ উঁচু টাওয়ারের মত যা জান্নাত এবং জাহান্নামের মাঝখানে থাকবে। গোনাহগার কিছু বান্দাকে সেখানে রেখে দেয়া হবে। কেউ কেউ বলেনঃ আরাফ নামকরণ এজন্য করা হয়েছে যে, এখান থেকে তারা একে অপরকে চিনতে পারবে।
,
ইবন জারীর ও অন্যান্য তাফসীরবিদের মতে এ আয়াতে উল্লেখিত أعراف বলে ঐ প্রাচীর বেষ্টনীকেই বুঝানো হয়েছে। এ প্রাচীর বেষ্টনীর উপরিভাগের নামই আরাফ। কেননা, أعراف শব্দটি عرف এর বহুবচন। এর অর্থ প্রত্যেক বস্তুর উপরিভাগ। এ ব্যাখ্যা থেকে জানা গেল, জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী প্রাচীরবেষ্টনীর উপরিভাগকে আরাফ বলা হয়। আয়াতে বলা হয়েছে যে, হাশরে এ স্থানে কিছুসংখ্যাক লোক থাকবে। তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় দিকের অবস্থা নিরীক্ষণ করবে এবং উভয়পক্ষের লোকদের সাথে প্রশ্নোত্তর ও কথাবার্তা বলবে। 
,
★আরাফের অধিবাসীঃ

এখানে প্রণিধানযোগ্য যে আরাফবাসী তারাই, যাদের পাপ ও পুণ্য ওজন সমান সমান হবে। তারা পুণ্যের কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে; কিন্তু পাপের কারণে তখনো জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে না। তবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে তারাও জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)
ইবন জারীর বলেন, তাদের সম্পর্কে এটা বলাই বেশী সঠিক যে, তারা হচ্ছে এমন কিছু লোক যারা জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে তাদের নিদর্শনের মাধ্যমে চিনতে পারবে। [তাবারী]

তাফসিরে কুরতুবিতে এই ব্যাপারে ১২ টি মত উল্লেখ রয়েছে।
উদাহরণ স্বরুপঃ
কিছু উলামায়ে কেরামদের মত হলো এখানে কিছু শহীদ,মুমিনে কামেল,অথবা ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে হবেন,তারা আরাফে থাকবেন।
নিজেদের বিশেষ মর্যাদার কারনে দোযখ এবং বেহেশতের হালত দেখার জন্য সেখানে ভ্রমন করবেন, তারপর নিজের স্থান জান্নাতে দেখে খুশি হবেন।
,
কিন্তু ছহীহ কওল হলো যেটা হযরত হুযাইফা রাঃ, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, ইবনে মাসউদ রাঃ বলেছেন,সেটা হলো যাদের গুনাহ ও পুণ্য ওজন সমান সমান হবে।
আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সেজদাহ করতে আদেশ করবেন,তারা সেজদাহ করবে,একটি নেক আমল বেশি হওয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
(উমদাতুল ফিকাহ ৯৬)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...