আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
274 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (60 points)
আসসালামু আলাইকুম।


মুহতারাম, আমি স্বপ্নে দেখি আমার মোবাইলে যেসব মেসেজ আছে সেগুলো কোনো একজন পড়ে ফেলেছে।ফলে সে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।


এই স্বপ্ন দেখার পর আমি ঘুম থেকে উঠেই মেসেজগুলো ডিলিট করে দিই।

কাজটি কি শির্ক সংগঠিত করে?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  শিরক দুই প্রকার। তথা-
১-শিরকে আকবর তথা বড় শিরক বা মৌলিক শিরক। এটি আবার কয়েক প্রকার। 

১-শিরক ফিজজাত
শিরক ফিজজাত। তথা আল্লাহ আল্লাহ তাআলা সত্বায় কাউকে শরীক করা। আরেক শব্দে বললে বলা যায় যে, আল্লাহ তাআলার সত্বার মাঝে কাউকে অংশিদার সাব্যস্ত করা। যেমন এক আল্লাহর বদলে দুই আল্লাহ বা তিন আল্লাহ বা একাধিক আল্লাহ বিশ্বাস করা। আল্লাহ তাআলার জন্য সন্তান, স্ত্রী, পিতা-মাতা ইত্যাদি সাব্যস্ত করা। যেমন খৃষ্টান ও হিন্দুদের আক্বিদা। এসবই শিরক ফিত তাওহীদ।

২-শিরক ফিস সিফাত 
শিরক ফিসসিফাত হল আল্লাহ তাআলার সাথে খাস সিফাত বা গুণের মাঝে কাউকে অংশিদার মনে করা। যা কিছু করার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা নিজের হাতে রেখেছেন সেটার মাঝে কোন বান্দা বা অন্য কোন সৃষ্টিকে অংশিদার মনে করা।
যেমন গোনাহ মাফ করা, রিজিক দেয়া, সন্তান দেয়া, সুস্থ্যতা দেয়া, অসুস্থ্যতা দেয়া, হিদায়াত দেয়া ইত্যাদি। এসবের মাঝে যেকোন ব্যক্তিকে চাই উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দাই হোক না আল্লাহ তাআলার এসব খাস সিফাতে শরীক বা অংশিদার মনে শিরক ফিসসিফাত।
 
৩-শিরক ফিলহুকুক
শিরক ফিলহুকুক তথা আল্লাহ তাআলার সাথে খাস হককে কোন বান্দা বা কোন সৃষ্টির জন্য মনে করা শিরক ফিলহুকুক। যেমন ইবাদত, সেজদা, রোজা, দুআ, কুরবানী, জবাই, মান্নত এবং কসম ইত্যাদি সবই আল্লাহ তাআলার সাথে খাস হক। এসব হকের মাঝে কাউকে শরীক করা। অর্থাৎ এসব আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন বান্দা বা সৃষ্টির নামে করা শিরক ফিলহুকুক।
এই প্রকারের শিরক যারা করেন, তারা মুসলমানিত্ব থেকে খারিজ হয়ে যান। তওবা করে পুনরায় মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

২-
শিরকে আসগার তথা ছোট শিরক বা শিরকের মত কাজ।
এ প্রকার ব্যক্তিগণ ইসলাম থেকে বের হয়ে যান না। তবে কাজটি জঘন্য ও মারাত্মক। 


হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، حَدَّثَنِي ابْنُ الْهَادِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خَبَّابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ رُؤْيَا يُحِبُّهَا فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللَّهِ، فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا، وَلْيُحَدِّثْ بِهَا، وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ، فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ ".

আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এ জন্য আল্লাহ্র প্রশংসা করে এবং অন্যের কাছে তা বর্ণনা করে। আর যদি এর বিপরীত অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই সে যেন এর ক্ষতি থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় চায়। আর কারো কাছে যেন তা বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না। (বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৪)

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ ـ وَأَثْنَى عَلَيْهِ خَيْرًا لَقِيتُهُ بِالْيَمَامَةِ ـ عَنْ أَبِيهِ، حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللَّهِ، وَالْحُلْمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا حَلَمَ فَلْيَتَعَوَّذْ مِنْهُ وَلْيَبْصُقْ عَنْ شِمَالِهِ، فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ ". وَعَنْ أَبِيهِ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ.

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেনঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই যখন কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে তখন যেন তার থেকে আশ্রয় চায় এবং বাম দিকে থু থু ফেলে। তাহলে স্বপ্ন আর তার কোন ক্ষতি করবে না।
 [৩২৭২]
আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইয়াহ্ইয়া ইব্নু আবূ কাসীর).....ক্বাতাদাহ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে একই রূপ বর্ণনা করেছেন। (বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৫)

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦

নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা,ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। {সূরা নিসা-১১৬}

শিরকের গোনাহ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এর দ্বারা ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়। তাই এমন কপালপোড়া ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই শিরকে গোনাহ করার সাথে সাথেই তওবা করে নিতে হবে।

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ।

আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}

তওবা করার পদ্ধতি হল-

সুতরাং বুঝা গেল গোনাহ করে ফেললে মাফ করানোর পদ্ধতি হল খালেস দিলে তওবা করা। তওবা সহীহ হবার জন্য ৩টি শর্ত। যথা-

১-সাথে সাথে গোনাহের কাজটি ছেড়ে দিতে হবে।

২-ভবিষ্যতে এই গোনাহটি না করার দৃঢ় সংকল্প করা।

৩-গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

এই ৩টি শর্ত পাওয়া গেলে তওবা সঠিক হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يلج النار رجل بكي من خشية الله حتى يعود اللبن في الضرع ولا يجتمع غبار في سبيل الله ودخان جنهم 

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। (নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪২৭)
,
.
★★আগের প্রশ্নে উল্লেখ ছিলো যে এই স্বপ্নটি মনের ধারনা থেকেই এসেছে।
তাই এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই।
,

উল্লেখিত স্বপ্ন দেখার পর আপনি যে ঘুম থেকে উঠেই মেসেজগুলো ডিলিট করে দিয়েছেন,এটা আসলে আপনি এই ধারনা নিয়ে করেছেন যে এই মেসেজ গুলো যেনো কেউ দেখতে পারেনা।
,
সুতরাং এই কাজটি কোনো ভাবেই শিরক হতে পারেনা।শিরকের বিস্তারিত ছুরত উপরে উল্লেখ রয়েছে।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...