আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
777 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আমার এক সহপাঠী এক নাস্তিক লেখকের বই পড়ে কিছু প্রশ্ন করেছে। প্রশ্নগুলো এমন:

আল্লাহ্ আদম (আঃ) কে কেন আগে বানালেন? হাওয়া(আঃ) কে কেন না? তার অংশ থেকেই কেন হাওয়া (আঃ) কে বানানো হলো? আমাদের ধর্মীয় সব বাণী গুলো কেন পুরুষ নবীর দ্বারা আসলো? কেন কোন মেয়ে নবীর দ্বারা না?
এভাবে কিছুটা পুরুষের সম্মান বাড়িয়ে দেওয়া হলো না? যদিও নারীদের অনেক সম্মান দেয়া হয়েছে অন্যভাবে।

এর জবাবে আমার কী বলা উচিত আর তারসাথে আমার আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
by (20 points)
এরপর সহপাঠী প্রশ্ন করতে পারে যে খলিফা বানানোর ঘোষণা দিয়ে পুরুষকেই কেন বানালো? কেন নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করা হলো? উলটা সিস্টেম কেন বানালো হলো না। মূলত এগুলো হলো বক্র চিন্তা। আল্লাহ যদি সত্যিই এসব বিভ্রান্ত চিন্তার মানুষদের মতো করেও নারীকে সৃষ্টি করতেন পুরুষের স্থলে তখন বক্র চিন্তার পুরুষেরা তখন নারীদেরকে নিয়েও একই প্রশ্ন করত। তাই যদি অন্তরে অবাধ্য হতেই হবে এমন নিয়ত থাকে তাহলে আল্লাহ যেভাবেই বানান না কেন ঠিক বিপরীত প্রশ্ন সে করবেই। কিন্তু সবকিছু তার ইচ্ছা মতো কেন হতে হবে? তার অথোরিটি কী? আল্লাহ বলেন, 

তারা কি শূন্য থেকেই সৃষ্টি হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই নিজেদের স্রষ্টা? না তারা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছে?বরং তারা বিশ্বাস করে না” (সূরা আত্ব-তূর, ৫২:৩৫-৩৬)

1 Answer

+2 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

আল্লাহ তা‘আলা যখন ফিরেশতাদের সামনে ঘোষণা করলেন-
إني جاعل في الأرض خليفة 
পৃথিবীতে আমি খলীফাহ বানাতে চাই। (সূরা বাকারা (২) : ৩০)

তখন প্রকৃতপক্ষে   সেটা শুধু একজন পুরুষ (বা হযরত আদম আ.)কে সৃষ্টি করার ঘোষণা ছিলো না, বরং নর ও নারী সম্মিলিতরূপে যে ‘মানব’ সেই মানব সৃষ্টির ঘোষণা ছিলো। অর্থাৎ সেটা হযরত আদম ও হযরত হাওয়া উভয়ের সৃষ্টির ঘোষণা ছিলো। কারণ পৃথিবীতে মানবজাতির বিস্তার ও খেলাফত শুধু পুরুষ দ্বারা সম্ভব ছিলো না। আদমের খেলাফতে হযরত হাওয়ার ভূমিকা ছিলো অনিবার্য ও অপরিহার্য। 
,
তাই পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও সৃষ্টি করা হয়েছে।
তবে যেহেতু এই পৃথিবীর নেতৃত্ব (নবী,হওয়া,ইমাম হওয়া,সমাজ প্রধান হওয়া) পুরুষরাই দিবে,তাই পুরুষকেই আগে সৃষ্টি করা হয়েছে।
,
নারীকে নবী, সমাজ প্রধান বানানো হয়নি,কারন 
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী একজন নবী, সমাজ প্রধানকে নামাজের ইমামতি করতে হয়। 

আর আপনারা জানেন, নামাজে বেশ কিছু অঙ্গভঙ্গি রয়েছে যেমন- কিয়াম, রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি। যদি একজন নারী নবী নামাজের নেতৃত্ব দিত তবে জামাআতের পেছনে যে সকল পুরুষ সলাত আদায় করত এটা তাদের এবং ইমাম উভয়ের জন্যই বেশ বিব্রতকর হত। এখানে আরো অনেক ব্যাপার রয়েছে। যেমন- একজন নবীকে সাধারণ মানুষের সাথে সর্বদা দেখা সাক্ষাৎ করতে হয়। কিন্তু এটা একজন মহিলা নবীর পক্ষে অসম্ভব। 

কারণ ইসলাম নারী-পুরুষ পরস্পরের মেলামেশার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। যদি মহিলা নবী হতো এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সে যদি গর্ভবতী হতো, তবে তার পক্ষে কয়েক মাস নবুওয়াতের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হতো না। অপরদিকে একজন পুরুষের পক্ষে পিতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা একজন মহিলার মাতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা থেকে তুলনামূলক সহজ। কিন্তু আপনি যদি নবী বলতে শুধু বোঝেন, এমন একজন ব্যক্তি যিনি আল্লাহ পছন্দের এবং যিনি পবিত্র ও খাঁটি ব্যক্তি, তবে সেখানে কিছু নারীর উদাহরণ রয়েছে- আমি এখানে উত্তম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করব মারইয়াম আ. এর নাম। তিনি ছিলেন মনোনীত এবং পরিশুদ্ধ। তিনি ছিলেন ঈসা [আ.] -এর মা। 

সুরা আল ইমরানের ৪২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে- ‘যখন ফেরেশতারা বলেছিল, হে মারইয়াম! আল্লাহ আপনাকে মনোনীত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন বিশ্বজগতের নারীদের ওপর।’ এছাড়াও সুরাহ তাহরিম-এ ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়ার কথা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন- ‘আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রীর (আছিয়া) অবস্থা বর্ণনা করেছেন।’ ফিরাউনের স্ত্রী আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন- ‘হে আমার রব! আমার জন্য বেহেশতের মধ্যে আপনার সন্নিকটে ঘর নির্মাণ করে দিন, আর আমাকে ফেরাউন থেকে এবং তার (কুফুরি) আচরণ থেকে রক্ষা করুন, আর আমাকে সমস্ত অত্যাচারী লোকজন থেকে হিফাজত করুন। [আত-তাহরিম, আয়াত ১১।] 
,
★★ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ 
মৌলিক মানবিক অধিকারের ক্ষেত্রে এবং দ্বীন ও ধর্মের যাবতীয় কর্মের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
বিকৃত ইহুদিধর্ম ও খৃস্টধর্ম যেখানে আদমের বিচ্যুতির জন্য হাওয়াকে অপরাধী সাব্যস্ত করেছে ইসলাম সেখানে আদম ও হাওয়া দুজনকে ভুল ও ক্ষমা প্রার্থনা উভয়ক্ষেত্রে অভিন্ন সাব্যস্ত করেছে। 

ইরশাদ হয়েছে-
فأزلهما الشيطن عنها
শয়তান উভয়কে তা থেকে বিচ্যুত করেছে। (সূরা বাকারা : ৩৬)
ভুল শোধরানো সম্পর্কে বলা হয়েছে-
قالا ربنا ظلمنا أنفسنا
তারা উভয়ে বললো, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। (সূরা আরাফ : ২৩)
তবে যেহেতু পরিচালক হিসাবে আদমের দায়িত্ব ছিলো বেশী সেহেতু এককভাবে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে-
فنسى ولم نجد له عزما
সে ভুলে গিয়েছিল। আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি। (সূরা ত্বহা : ১১৫)
নারী ও পুরুষের মৌলিকভাবে সমান অধিকার ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে-
هن لباس لكم و أنتم لباس لهن
এবং নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। তবে তাদের উপর পুরুষদের এক পর্যায়ের প্রাধান্য রয়েছে। আল্লাহ পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারা : ২২৮)

এই এক পর্যায়ের প্রাধান্য হল, অভিভাবক ও তত্ত্বাবধানের মর্যাদা, যা সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আর এটি স্বামী-স্ত্রীর জীবন চলার পথে একটি অপরিহার্য বিষয়।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
إنما النساء شقائق الرجال
অর্থাৎ নারীরা হলো পুরুষের সমতুল্য। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১)

আরো ইরশাদ হয়েছে-
من كانت له أنثى فلم يئدها و لم يهنها و لم يؤثر ولده الذكور عليها أدخلها الله الجنة
যে ব্যক্তি কন্যসন্তানকে জ্যান্ত দাফন করবে না এবং তার অমর্যাদা করবে না এবং পুত্রসন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার দেবে না আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখেল করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১০৩)

দ্বীন ও ধর্মের যাবতীয় কর্মে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
و من عمل صلحا من ذكر أو أنثى و هو مؤمن فأؤلئك يدخلون الجنة يرزقون فيها بغير حساب
আর যে কোন পুরুষ বা নারী নেক আমল করবে, আর সে মুমিন হবে, তাহলে তারা জান্নাতে দাখেল হবে এবং সেখানে তাদেরকে বেলা হিসাব রিযিক দান করা হবে। (সূরা মুমিন : ৪০)

আরো ইরশাদ হয়েছে-
فاستجاب لهم ربهم أني لا أضيع عمل عمل منكم من ذكر أو أنثى, بعضكم من بعض
অনন্তর তাদের প্রতিপালক তাদের দু‘আ কবুল করলেন (আর বললেন) যে, আমি তোমাদের কোন আমলকারীর আমল নষ্ট করবো না, সে পুরুষ হোক, বা নারী। তোমরা তো পরস্পরের অংশবিশেষ। (সূরা আলইমরান : ১৯৫)

নারীর সঙ্গে পুরুষের যতগুলো সম্পর্ক হতে পারে প্রতিটি সম্পর্ককে ইসলাম অনন্য মর্যাদা ও মহিমায় অধিষ্ঠিত করেছে। এক্ষেত্রে নারীকে শুধু সমমর্যাদা নয়, বরং অগ্রমর্যাদা দান করেছে।
প্রথম সম্পর্ক হলো মা হিসাবে। তো ইসলাম ও তার নবীর কাছে মায়ের যে মর্যাদা তা পৃথিবীর কোন ধর্ম ও সভ্যতা এমনকি আধুনিক সভ্যতাও কল্পনা করতে পারেনি। 

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
ووصينا الانسان بوالديه احسانا حملته امه كرها ووضعته كرها
‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারের আদেশ করেছি। (কারণ) তার মা তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের সঙ্গে প্রসব করেছে।’ (সূরা আহকাফ : ১৫)

এখানে পিতা-মাতা উভয়ের সঙ্গে সদাচার কেন করতে হবে তার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে পিতার কোন অবদানের কথা বলা হয়নি, শুধু মায়ের ত্যাগ ও কষ্টের কথা বলা হয়েছে। অথচ পিতারও বিরাট অবদান রয়েছে সন্তানের জীবনে। এটা এদিকেই ইঙ্গিত করে যে, মাতার ত্যাগ ও কষ্টের তুলনায় পিতার ত্যাগ ও কষ্ট খুবই সামান্য।

হাদীছ শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সদাচারের বেশী হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। ছাহাবী বললেন, এর পর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। ছাহাবী বললেন, এর পর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। ছাহাবী বললেন, এর পর কে? তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর পর তোমার বাবা। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭১)

 অন্য এক হাদীছে বর্ণিত আছে, এক ছাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জিহাদে গমন করতে চাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি মা আছেন? ছাহাবী বললেন, আছেন। তখন তিনি বললেন, যাও তার কাছে বসে থাকো, কেননা জান্নাত তার পায়েরই কাছে। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/৮০)

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘জান্নাত হলো মায়েদের কদমের নীচে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৩৩০)
দ্বিতীয় সম্পর্ক হলো স্ত্রী হিসাবে। 

তো এ সম্পর্কে দেখুন, কোরআন  শরীফে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-
و عاشروهن بالمعروف, فإن كرهتموهن فعسى أن تكرهوا شيأ و يجعل الله فيه خيرا كثيرا
আর তোমরা স্ত্রীলোকদের সঙ্গে বসবাস করো সদাচারের সাথে। আর যদি (কোন কারণে) তোমরা তাদেরকে অপছন্দ করো তাহলে হতে পারে যে, তোমরা এমন কোন কিছুকে অপছন্দ করলে, আর আল্লাহ তাতে প্রচুর কল্যাণ রেখে দিলেন। (সূরা নিসা : ১৯)

এ বিষয়টি হাদীছ শরীফে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন, ‘কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে যেন সম্পূর্ণ অপছন্দ না করে। কারণ তার একটি স্বভাব অপছন্দ হলে, আরেকটি স্বভাব অবশ্যই পছন্দনীয় হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৯৭৯)

নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই যে তার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের জন্য সর্বোত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃ. ১৪২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬২)

একটি হাদীছে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
استوصوا بالنساء خيرا
আমি তোমাদেরকে স্ত্রীলোকদের সম্পর্কে উত্তম আচরণের উপদেশ দিচ্ছি; তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করো। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬৩)

কন্যা ও ভগ্নি হিসাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীছ শুনুন, যার খোলাছা হলো, কারো ঘরে যদি তিনজন বা দুজন কন্যা বা ভগ্নি থাকে, আর সে তাদের উত্তম শিক্ষাদীক্ষা দান করে, তারপর তাদেরকে উত্তম পাত্রে বিবাহ দেয় তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম) কোন কোন বর্ণনায় আছে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। কোন বর্ণনায় আছে, তাহলে সে আর আমি জান্নাতে এরূপ পাশাপাশি থাকবো। তারপর তিনি দুই আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে ইশারা করলেন।

এক হাদীছে আছে-
لا تكرهوا البنات, فإنهن المؤنسات الغاليات
তোমরা মেয়েদের অপছন্দ করো না। কারণ তারা অন্তরঙ্গতা পোষণকারী মূল্যবান সম্পদ। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৩০৬)

 ইরশাদ করেছেন-
حبب إلي من دنياكم الطيب و النساء و جعلت قرة عيني في الصلوة
তোমাদের দুনিয়াতে সুগন্ধি ও নারীকে আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে, আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে ছালাতের মধ্যে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১২২৩৩)

আল্লাহই নর-নারীকে সৃষ্টি করেছেন, স্রষ্টা হিসেবে তিনি জানেন কিসে মানুষের জন্য উপকার। যদি মেয়েরা নবী হত তাহলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হত।
মহান স্রষ্টা এ বিশাল পৃথিবীকে সৃষ্টি করে তা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকের জন্য সুপরিকল্পিত ও সুসংহত কর্মসংস্থান ও দায়িত্বসমূহ নিরূপণ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কিছু কিছু কর্মক্ষেত্র এমন রয়েছে, যেগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান, যেমন-শিক্ষাগ্রহণ- শিক্ষাদান দ্বীন প্রসারে দাওয়াত ও তাবলীগ ইত্যাদি। তবে তা অবশ্যই শরী‘আত অনুমোদিত পন্থায় হতে হবে। আবার কিছু কিছু কর্মক্ষেত্র এমন, যা কেবলমাত্র পুরুষদের জন্য নির্ধারিত। যেখানে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে না। যেমন-নামাযের ইমামতী। আবার কিছু কর্মক্ষেত্র এমন রয়েছে, যা শুধু নারীদের জন্য নির্ধারিত। যেখানে পুরুষদের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। যেমন-সন্তান ধারণ।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-পুরুষরা মহিলাদের কর্তা বা পরিচালক এ ভিত্তিতে যে, আল্লাহ তা‘আলা এককে (পুরুষ) অপরের (মহিলা) উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। [সূত্র : সূরা নিসা :৩৪]

পবিত্র কুরআনে মহিলাদের প্রতি নির্দেশ করে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থানরত থাক। অন্ধযুগের মহিলাদের ন্যায় বাহিরে (বেপর্দায়) ঘোরাফেরা করো না”। [সূত্র: সূরা আল আহযাব, আয়াত-৩৩]
পারস্য সম্রাট কিসরার পতনের পর তথায় একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়ার সংবাদ শুনে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,- “ঐ জাতি কখনো কামিয়াব হবে না, যে জাতির পরিচালক মহিলা হবে”। [ সূত্র :বুখারী]

অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে- বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “পুরুষগণ যখন মহিলাদের নেতৃত্ব স্বীকার করবে, তখন তাদের ধ্বংস অনিবার্য”। [সূত্র: মুস্তাদরাকে হাকিম, ৪/২১৯]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “মহিলাদের উপর জিহাদ, জুমু‘আ ও জানাযার নামায ফরয নয়। (মাযমাউয যাওয়ায়িদ ২/২৭০) এ সকল ইবাদতগুলো মহিলাগণের উপর ফরয না হওয়ার মূল কারণ হলো তাদের পর্দা রক্ষা করে চলার ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখা। উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা শরী‘আতে মহিলাগণের পর্দার গুরুত্ব ও অবস্থান সহজেই অনুমেয়। আর নেতৃত্ব এমন একটি দায়িত্ব যা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পাশাপাশি পর্দা রক্ষা আদৌ সম্ভব নয়। বরং নেতৃত্ব পর্দা লঙ্ঘনের হাজারো দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।

,
একজন নবীকে নামাজের ইমামতি করতে হয়। আর আপনারা জানেন, নামাজে বেশ কিছু অঙ্গভঙ্গি রয়েছে যেমন- কিয়াম, রুকু, সাজদাহ ইত্যাদি। যদি একজন নারী নবী নামাজের নেতৃত্ব দিত তবে জামাআতের পেছনে যে সকল পুরুষ সলাত আদায় করত এটা তাদের এবং ইমাম উভয়ের জন্যই বেশ বিব্রতকর হত। এখানে আরো অনেক ব্যাপার রয়েছে। যেমন- একজন নবীকে সাধারণ মানুষের সাথে সর্বদা দেখা সাক্ষাৎ করতে হয়। কিন্তু এটা একজন মহিলা নবীর পক্ষে অসম্ভব। কারণ ইসলাম নারী-পুরুষ পরস্পরের মেলামেশার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। যদি মহিলা নবী হতো এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সে যদি গর্ভবতী হতো, তবে তার পক্ষে কয়েক মাস নবুওয়াতের স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হতো না। অপরদিকে একজন পুরুষের পক্ষে পিতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা একজন মহিলার মাতৃত্ব এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করা থেকে তুলনামূলক সহজ। কিন্তু আপনি যদি নবী বলতে শুধু বোঝেন, এমন একজন ব্যক্তি যিনি আল্লাহ পছন্দের এবং যিনি পবিত্র ও খাঁটি ব্যক্তি, তবে সেখানে কিছু নারীর উদাহরণ রয়েছে- আমি এখানে উত্তম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করব মারইয়াম আ. এর নাম। তিনি ছিলেন মনোনীত এবং পরিশুদ্ধ। তিনি ছিলেন ঈসা [আ.] -এর মা। সুরা আল ইমরানের ৪২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে- ‘যখন ফেরেশতারা বলেছিল, হে মারইয়াম! আল্লাহ আপনাকে মনোনীত করেছেন, পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন বিশ্বজগতের নারীদের ওপর।’ এছাড়াও সুরাহ তাহরিম-এ ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়ার কথা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন- ‘আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউনের স্ত্রীর (আছিয়া) অবস্থা বর্ণনা করেছেন।’ ফিরাউনের স্ত্রী আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন- ‘হে আমার রব! আমার জন্য বেহেশতের মধ্যে আপনার সন্নিকটে ঘর নির্মাণ করে দিন, আর আমাকে ফেরাউন থেকে এবং তার (কুফুরি) আচরণ থেকে রক্ষা করুন, আর আমাকে সমস্ত অত্যাচারী লোকজন থেকে হিফাজত করুন। [আত-তাহরিম, আয়াত ১১।] 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...