বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস
সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)। এর আভিধানিক
অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত
ব্যক্তিকে দান করা।
ঈসালে সওয়াবের কিছু পদ্ধতি
এক. হজ্ব: হজ্বের
ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। এটা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিছু হাদীস এই-
১. বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল, ...আমার মা হজ্ব না করে ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি
তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব? তিনি বললেন, (হাঁ), তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৪৯
بينا أنا جالس عند رسول
الله صلى الله عليه وسلم، إذ أتته امرأة، فقالت: إني تصدقت على أمي بجارية، وإنها
ماتت إنها لم تحج قط، أفأحج عنها؟ قال: حجي عنها.
দুই. উমরা: উমরা করেও
ঈসালে সওয়াব করা জায়েয।
আবু রাযীন উকায়লী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা খুবই বৃদ্ধ। তিনি
হজ্ব, উমরা এমনকি
সফর করতেও সক্ষম নন। নবীজী বললেন, তুমি তার
পক্ষ থেকে হজ্ব ও উমরা করো। -সুনানে তিরমিযী, হাদীস ৯৩০
عن أبي رزين العقيلي
أنه أتى النبي صلى الله عليه وسلم، فقال : يا رسول الله، إن أبي شيخ كبير، لا يستطيع
الحج والعمرة، ولا الظعن، قال : حج عن أبيك واعتمر.
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট যে, মাযূরের
পক্ষ থেকে নায়েব হিসেবে উমরা করা জায়েয। সুতরাং নিজে উমরা করে মাইয়িতকে সওয়াব
পৌঁছানোও জায়েয হবে। কারণ ‘নিয়াবতে’র চেয়ে ঈসালে সওয়াব হালকা।
তিন. কুরবানী: বিভিন্ন হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত যে, কুরবানীর
ঈসালে সওয়াব করা জায়েয।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জন্য কালো পা, কালো পেট ও কালো ভ্রু বিশিষ্ট দুম্বা আনার
নির্দেশ দিলেন। আনা হলে তিনি আয়েশা রা.-কে বললেন, একটি ছুরি এনে পাথরে ঘষে ধারালো কর। তিনি তা-ই করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাকে শুইয়ে যবাহ করার জন্য প্রস্তুত হলেন
এবং বললেন,
باسم الله، اللهم تقبل
من محمد وآل محمد، ومن أمة محمد.
‘আল্লাহর নামে যবাহ করছি। হে আল্লাহ! আপনি তা কবুল করুন মুহাম্মদ ও তার
পরিবারের পক্ষ থেকে এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে।’ তারপর কুরবানী করলেন। -সহীহ
মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭
চার. রোযা: রোযার
সওয়াবরেসানি করা বৈধ।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ রোযা
জিম্মায় রেখে মারা গেলে তার অভিভাবক যেন তার পক্ষ থেকে রোযা রাখে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৫২
পাঁচ. নামায: ইবনে কুদামা
রাহ. (৬২০হি.) দুআ, ইস্তিগফার, হজ্ব ও রোযার ঈসালে সওয়াব সংক্রান্ত কিছু
হাদীস উল্লেখ করে বলেন,
وهذه أحاديث صحاح،
وفيها دلالة على انتفاع الميت بسائر القرب؛ لأن الصوم والحج والدعاء والاستغفار
عبادات بدنية، وقد أوصل الله نفعها إلى الميت، فكذلك ما سواها.
এগুলো সহীহ হাদীস এবং এ থেকে বোঝা যায় যে, সকল নেক আমল মাইয়িতের উপকারে আসবে। কারণ রোযা, হজ্ব, দুআ ও ইস্তিগফার
ইবাদাতে বাদানিয়া হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ এর কল্যাণ মৃত ব্যক্তিকে পৌঁছান। সুতরাং
অন্যান্য নেক আমলের হুকুমও একই হবে। -আলমুগনী ৩/৫২১
ছয়. কুরআন তিলাওয়াত
মাকিল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মাইয়িতের জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ
কর। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১২১
সাত. যে কোনো নেক আমল
নেক আমলের জগৎ অনেক বিস্তৃত। এগুলো কোথাও ‘আলআমালুস সালিহ’র শিরোনামে বর্ণিত
হয়েছে, কোথাও
‘আলবির’র শিরোনামে, কোথাও
‘আলহাসানা’র শিরোনামে, কোথাও
‘আলখাইর’র শিরোনামে। কখনো বা বিশেষ শিরোনাম ছাড়া বর্ণিত হয়েছে। কুরআন-সুন্নাহয়
যেসব নেক কাজ সুস্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর তালিকাও বেশ লম্বা।
(আংশিক কপি)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মৃত
ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের নিয়ত করে পড়লেই হবে। আর যদি সকল কবরবাসীর ঈসালে সওয়াবের
নিয়ত করে পড়েন তাহলে তাও হবে। তখন তারাও সওয়াব পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।