আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
704 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (8 points)

আসসালামু আলাাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

  1. দেশের বাহিরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাবে? 
  2. অমুসলিম দেশে ঘুরতে যাওয়া হারাম কি?

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

ইসলাম এবং ভ্রমণ।
মহান আল্লাহ তা'আলা এ পৃথিবীকে কি অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।রংবেরং এর মানুষ,প্রাণীকুল ইত্যাদি দ্বারা এ পৃথিবীকে ঐষর্য্যময় করে সাঝিয়েছেন।পাহাড়-পর্বত নদী-নালা খাল-বিলকে ভারসাম্যপূর্ণ করে কতইনা সুনিপুণ ভাবে গড়েছেন।পৃথিবীকে স্বর্গের প্রেরণাকারী রূপে রূপায়িত করেছেন।সবই করেছেন একমাত্র মানুষের সেবার জন্যে।আর এ সবকিছইু আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের উপর প্রমাণ রাখে। আল্লাহর মাহাত্ম্যর প্রমাণের জন্য পৃথিবীর যে কোনো একটি প্রাণীই যথেষ্ট।আল্লাহ তা'আলার নিপুণ শিল্পে শিল্পায়িত এ পৃথিবীকে দেখা ও জানা এবং এ সম্পর্কে গবেষনা করা প্রতিটি মানুষের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
ﻗُﻞْ ﺳِﻴﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺎﻧﻈُﺮُﻭﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖَ ﺛُﻢَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﻨﺸِﺊُ ﺍﻟﻨَّﺸْﺄَﺓَ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ
তরজমাঃ- বলুন! তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ! কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন।অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন।নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা আনকাবুত-২০)

পৃথিবীকে ঘুরে দেখা ও তার কিছু মিথ্যা অধিবাসীদের উপর আল্লাহ তা'আলার আপতিত আযাব দেখে সত্যর শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ 
ﻗُﻞْ ﺳِﻴﺮُﻭﺍْ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﺛُﻢَّ ﺍﻧﻈُﺮُﻭﺍْ ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺎﻗِﺒَﺔُ ﺍﻟْﻤُﻜَﺬِّﺑِﻴﻦَ
তরজমাঃ-বলে দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতপর দেখ! মিথ্যারোপ কারীদের পরিণাম কি হয়েছে?(সূরা-আন'আম-১১)

তাফসীরে ক্বুরতুবী নামে প্রসিদ্ধ "আল জামে লি-আহকামিল কুরআন" এ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়,
ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺴﻔﺮ ﻣﻨﺪﻭﺏ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻻﻋﺘﺒﺎﺭ ﺑﺂﺛﺎﺭ ﻣﻦ ﺧﻼ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻢ ، ﻭﺃﻫﻞ ﺍﻟﺪﻳﺎﺭ ، ﻭﺍﻟﻌﺎﻗﺒﺔ ﺁﺧﺮ ﺍﻷﻣﺮ . 
তাওহীদের শিক্ষাগ্রহণার্তে পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠীদের উপর আপতিত আযাবের নিদর্শনবাহী এলাকা পরিভ্রমণ করা মুস্তাহাব।যাতে করে পরবর্তী উম্মত শিক্ষাগ্রহণ করতে সক্ষম হয়।

ভ্রমণের প্রকারভেদ সম্পর্কে চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " উল্লেখ করা হয়,
قسم الحنفية السفر من حيث حكمه إلى ثلاثة أقسام: سفر طاعة كالحج والجهاد، وسفر مباح كالتجارة، وسفر معصية كقطع الطريق وحج المرأة بلا محرم.
হানাফি উলামায়ে কেরামগণ সফরকে তিনভাগে ভাগ করে থাকেন।নেকীর সফর যেমনঃ- হজ্ব ও জিহাদের উদ্দেশ্যে সফর ও ইত্যাদি।বৈধ সফর যেমনঃ- ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফর ও ইত্যাদি।অবৈধ সফর যেমনঃ- ডাকাতি ও মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজ্বের সফর ও ইত্যাদি।(২৫/২৭)

অমুসলিম দেশ বা এমন মুসলিম দেশ যেখানে প্রকাশ্যে গোনাহ সংগঠিত হয়ে থাকে,এমন দেশ সমূহে সফর করা বৈধ হবে কি না?
এমন প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,এ সম্পর্কে বিন বায রাহ এর একটি ফাতাওয়া উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেনঃ মূলত অমুসলিম দেশ সমূহে না যাওয়াই ফিকহ সম্মত।তবে যদি প্রয়োজনবোধে যেতেই হয় তাহলে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে।
তিনটি শর্ত সাপেক্ষে অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করা বৈধঃ
  1. (১) ভ্রমণকারীর কাছে প্রয়োজনীয় ইল্ম বিদ্যমান থাকা, যার মাধ্যমে সকল সন্দেহ থেকে বিরত থাকা সম্ভব।
  2. (২) তার কাছে এমন দ্বীনদারী বিদ্যমান থাকা, যার মাধ্যমে সে নফসের প্রবৃত্তি দমনে সক্ষম হবে।
  3. (৩) অমুসলিম দেশে ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান থাকা।
উপরের শর্তগুলো পাওয়া না গেলে অমুসলিম দেশে সফর করা বৈধ নয়। কেননা এতে ফিতনার ভয় রয়েছে।এবং তাতে প্রচুর সম্পদও বিনষ্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া গোনাহের কাজ করা ও দেখা এবং তাতে যেকোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা নাজায়েজ।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
ﻭَﻗَﺪْ ﻧَﺰَّﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺃَﻥْ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻢْ ﺁﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﻜْﻔَﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻳُﺴْﺘَﻬْﺰَﺃُ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﻘْﻌُﺪُﻭﺍ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚٍ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺇِﺫًﺍ ﻣِﺜْﻠُﻬُﻢْ
তরজমাঃকোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে।(সূরা-নিসা-১৪০)তবে যদি প্রয়োজন দেখা দেয় যেমন চিকিৎসার জন্য অথবা শিক্ষা অর্জনের জন্য, যা অন্য কোন দেশে পাওয়া যায় না, তা হলে কোন অসুবিধা নেই।

পর্যটনের উদ্দেশ্যে অমুসলিম দেশে ভ্রমণ করার কোন দরকার নেই; বরং এমন ইসলামী দেশে যাওয়া যায় যেখানে ইসলামের বিধিবিধান পালন করা হয়। আমাদের ইসলামী দেশসমূহে আল্লাহর মেহেরবাণীতে যথেষ্ট পর্যটনের স্থান রয়েছে। সেখানে পর্যটনের জন্য যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে ছুটি কাটানো সম্ভব।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...