আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
771 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (7 points)
recategorized by
কোন আমল করে দোয়া করলে বা কোন সময় দোয়া করলে বা কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহর কাছে  দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে?

দোয়া কবুল হওয়ার শক্তিশালী আমল জানতে চায়।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। 
যেমন:

(০১) খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] 

ইবাদতে ও দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে হালাল খাদ্যের অনেক প্রভাব রয়েছে। খাদ্য হালাল না হলে ইবাদত ও দুআ কবুল হওয়ার যোগ্য হয় না। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

« أيها الناس إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين فقال ( يا أيها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا إنى بما تعملون عليم) وقال (يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم) ». ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يديه إلى السماء يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذى بالحرام فأنى يستجاب لذلك ».

তরজামা: হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা হলেন পবিত্র। আর তিনি পবিত্রতা ছাড়া কবুলই করেন না। আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রাসূলগণকে দিয়েছেন।  তিনি বলেছেন “হে রাসূলগণ পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত”। 
(সূরা মুমিনুন-৫২) 

তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি। (সূরা বাকারহ -১৭২)

 এরপর এক লোকের কথা বললেন যে দীর্ঘ সফর করে আসে। এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু‘ হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ারদেগার! ইয়া রব! । কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক- পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দেয়া কি করে কবুল হতে পারে?।  (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ২৩৯৩)

সূরা মুমিনুন-(৫২) এর উক্ত আয়াত বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য।  আল্লাহ তাআলা পয়গম্বরগণকে নিস্পাপ রেখেছিলেন। তঁদেরকেই যখন হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করার এবং সৎকর্ম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তখন উম্মতের জন্য এই আদেশ আরো পালনীয়।

হাদীসটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায় যে, কিছু কিছু শুভ মুহূর্ত রয়েছে যে সময়কার দুআ আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। দীর্ঘ সফর করে আসা ক্লান্ত শ্রান্ত আলোচ্য ব্যক্তির মধ্যে দুআ কবুল হওয়ার অনেক সবব ও  উপকরণ বিদ্যমান থাকলেও  যেহেতু তার  পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দুআ কবুল হওয়া সুদূর পরাহত।

হাদীসটির একটি ব্যাখ্যা
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. তাঁর বিখ্যাত ‘জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ গ্রন্থে বলেন-

* وفي هذا الحديث إشارةٌ إلى أنَّه لا يقبل العملُ ولا يزكو إلاَّ بأكل الحلال ، وإنَّ أكل الحرام يفسد العمل ، ويمنع قبولَه ، فإنَّه قال بعد تقريره : (( إنَّ الله لا يقبلُ إلاَّ طيباً )) إنَّ الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين ، فقال : { يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً } ، وقال : { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ } .
অর্থাৎ এ হাদীসে এ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হালাল ভক্ষণ ব্যতীত আমল গৃহীত হয়না এবং তা পরিশুদ্ধি লাভ করে না। হারাম ভক্ষণ আমলকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে বাধা প্রদান করে। …

কোন  আমল কবুল হওয়া না হওয়া সংক্রান্ত একটি মৌল কথা:

এ প্রসঙ্গে যাহেদ আবু আব্দুল্লাহ আননাজী  রহ. খুব চমৎকার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন-
          وقال أبو عبد الله الناجي الزاهد رحمه الله : خمسُ خصال بها تمامُ العمل : الإيمان بمعرفة الله – عز وجل – ، ومعرفةُ الحقِّ ، وإخلاصُ العمل للهِ ، والعمل على السُّنَّةِ ، وأكلُ الحلالِ، فإن فُقدَتْ واحدةٌ، لم يرتفع العملُ ، وذلك أنَّك إذا عرَفت الله – عز وجل – ، ولم تَعرف الحقَّ ، لم تنتفع ، وإذا عرفتَ الحقَّ ، ولم تَعْرِفِ الله ، لم تنتفع ، وإنْ عرفتَ الله ، وعرفت الحقَّ ، ولم تُخْلِصِ العمل ، لم تنتفع ، وإنْ عرفت الله ، وعرفت الحقَّ ، وأخلصت العمل ، ولم يكن على السُّنة ، لم تنتفع ، وإنْ تمَّتِ الأربع ، ولم يكن الأكلُ من حلال لم تنتفع .

পাঁচটি বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এমন যদ্বারা আমল পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। ১. আল্লাহ্ পাকের মারেফাতে বিশ্বাস স্থাপন করা। ২. হক ও হক্কানিয়াত জানা ও বুঝা। ৩. আমল সযত্নে নিষ্ঠায় একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য করা।৪.আমল (মনগড়া পদ্ধতিতে না করে)  সুন্নাত মোতাবেক করা। ৫. আহার্য হালাল হওয়া। যদি এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যর বত্যয় ঘটে তথা কোন একটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকে  তাহলে সে আমল উর্ধ্ব লোকে বিচরণ করবে না। (তথা আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত হবে না)। কারণ-
কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল অথচ হক ও হক্কানিয়াত চিনল না  তা উপকারে আসবে না। আবার কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল কিন্তু  ইখলাস ও নিষ্ঠায় সে রিক্ত  ও শূণ্য তাহলে  তা তার উপকারে আসবে না। কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল আবার  ইখলাস- নিষ্ঠায়ও  তার কমতি নেয় কিন্তু তার আমলের পদ্ধতিটি  সুন্নাহ সম্মত নয়  তাহলে এ আমল তার  উপকারে  আসবে না। যদি উক্ত চারও  বৈশিষ্ট্য পূর্ণ মাত্রায় পাওয়া যায় অথচ আহার্য হালাল  না হয় তাহলেও এ আমল উপকারে আসবে না।
(ইবনে রজব হাম্বলী -জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, হাদীস নং ১০.)

(০২) আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), 

(০৩) দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

(০৪) দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না  হওয়া; যেমনটি 
সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬)  এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। 

(০৫) আল্লাহ্র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর।”

(০৬) দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْجُمَحِيُّ، - وَهُوَ رَجُلٌ صَالِحٌ حَدَّثَنَا صَالِحٌ الْمُرِّيُّ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ لاَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءً مِنْ قَلْبٍ غَافِلٍ لاَهٍ "

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তা'আলার কাছে দুআ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দুআ কবুল করেন না।
(তিরমিজি ৩৩৭৯)

★★এমন কিছু মুহুর্ত আছে,যেই সময়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়া সংক্রান্ত হাদীস শরীফে এসেছে।
তার কিছু এখানে উল্লেখ করছিঃ 

(০১) রাতের শেষভাগে দোয়া করা। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَعَنْ أَبِي عَبْدِ اللهِ الأَغَرِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، فَيَقُولُ : مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ " .

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমাদের মহা মহীয়ান রবব প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করে বলেন, আছে কেউ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? আছে কেউ আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো? আছে কি কেউ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।
(বুখারী (অধ্যায় : তাহাজ্জুদ, অনুঃ রাতের শেষ ভাগে ও সলাতে দু‘আ করা, হাঃ ১১৪৫), মুসলিম (অধ্যায় : মুসাফিরের সলাত, অনুঃ রাতের শেষাংশে দু‘আ যিকিরে উৎসাহ দান) 
,
এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ
সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।
আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (আবু দাউদ)

(০২) জুমআর দিনের দোয়া 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পুরণ করবেন। 
(বুখারী)

(০৩) ফরজ নামাজের পরের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাতের শেষ সময় এবং ফরজ নামাজের পরে দোয়া কবুল হয়।’
(মুসলিম)

(০৪) কদরের রাতের দোয়া

(০৫) বৃষ্টি হওয়ার সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ)

(০৬) আরাফাতের দিনের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া।’ (তিরমিজি)

(০৭)  জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল অন্য যে কোনে দিনের আমলের চেয়ে উত্তম।’ (বুখারি)
রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘৩ ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। ন্যায় পরায়ন শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)

(০৮) ★ইফতারির সময় দোয়া কবুল হয়।

عن عبداللہ بن عمرو بن العاصؓ یقول سمعت رسول اللہ ﷺ یقول ان للصائم عند فطرہ لدعوۃ ما ترد کتاب الدعاء (ص۱۲۲۹ ج۲) فی اسنادہ اسحق بن عبداللہ مدنی و ھو مقبول و بقیۃ رجالہ حسن و قال ابن حجرؒ ھذا حیث حسن الفتوحات الربانیۃ و اخرجہ ابن ماجۃ عن ھشام بن عمار مثلاً فی الصیام باب فی الصائم لا ترد دعوتہ و فی الزوائد اسنادہ صحیح۔
যার সারমর্ম হলো ইফতারির সময়ে রোযাদারের দোয়া কবুল করা হয়।  

তবে দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন।

★পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা সেই দোয়া কবুল করবেন।

★বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা: বিনয়ের সঙ্গে দু’হাত তুলে দোয়া করা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ الْفَضْلِ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا عِيسَى، - يَعْنِي ابْنَ يُونُسَ حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، - يَعْنِي ابْنَ مَيْمُونٍ صَاحِبَ الأَنْمَاطِ حَدَّثَنِي أَبُو عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا "

সালমান ফারসী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রবব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জবোধ করেন।
(আবু দাউদ ১৪৮৮.ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : দু‘আ, অনুঃ দু‘আতে দু’ হাত উত্তোলন করা, হাঃ ৩৮৬৫)

★মিনতিভরা কন্ঠে দোয়া করা: মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، - يَعْنِي ابْنَ خَالِدٍ حَدَّثَنِي الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدِ بْنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ : الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ أَوْ نَحْوَهُمَا، وَالاِسْتِغْفَارُ أَنْ تُشِيرَ بِأُصْبُعٍ وَاحِدَةٍ وَالاِبْتِهَالُ أَنْ تَمُدَّ يَدَيْكَ جَمِيعًا 

ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু করে দু‘আ করবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং দু‘আতে কাকুতি মিনতির সময় দু’ হাত প্রসারিত করবে।
(আবু দাউদ ১৪৮৯)

★দু’হাত তুলে দোয়া করা: বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময় দু’হাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ حَفْصِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم كَانَ إِذَا دَعَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ مَسَحَ وَجْهَهُ بِيَدَيْهِ .

আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর সময় দু’ হাত উপরে উঠাতেন এবং দু’ হাত দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল মুছতেন।
(আবু দাউদ ১৪৯২)

★হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাওয়া। অতঃপর দু‘আ শেষে হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَيْمَنَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَعْقُوبَ بْنِ إِسْحَاقَ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِيِّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَا تَسْتُرُوا الْجُدُرَ، مَنْ نَظَرَ فِي كِتَابِ أَخِيهِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ فَإِنَّمَا يَنْظُرُ فِي النَّارِ، سَلُوا اللهَ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا، فَإِذَا فَرَغْتُمْ فَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ "
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে।
(আবু দাউদ ১৪৮৫.বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/২১২), হাকিম (৪/২৭০)।)

★আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা : আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা। এছাড়া ইসমে আজমের সহিত দোয়া করা উত্তম। 

ইসমে আজম সম্পর্কে  তিরমিজি, আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীসে এসেছেঃ  
হযরত বুরাইদা রাযি থেকে বর্ণিত
وَعَنْ بُرَيْدَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ، الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ فَقَالَ: " دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» " رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ، وَأَبُو دَاوُدَ.

রাসূলুল্লাহ সাঃ এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ، الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد
তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, ঐ ব্যক্তি ইসমে আ'জম দ্বারা ডাকছে।যে নাম দ্বারা ডাকলে,দেয়া হবে,এবং দু'আ করলে জবাব দেয়া হবে।(মিরকাত-২২৮৯)

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 138 views
0 votes
1 answer 256 views
...