بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
যে ঘরে
সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, সে ঘরকে
আঁতুর ঘর আবার কেউ কেউ আউজ ঘর বলে থাকে। সন্তান ভূমিষ্ঠের ঘরকে অনেকে নাপাক বা অপবিত্র
বলে মনে করে। বিভিন্ন
আঞ্চলের কিছু মানুষের ধারণা- যে ঘরে সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে ঘর চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপবিত্র
থাকে। চল্লিশ দিন পর্যন্ত সে ঘরে নামায আদায়সহ ইবাদাত-বন্দেগি করা যায় না।
প্রকৃতপক্ষে
এ কথার কোনো ভিত্তি নেই। এটি একটি ভুল ধারণা বা কুসংস্কার। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে
ঘর পবিত্র বা অপবিত্র হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
এমনিতে
ঘরের কোনো স্থানে যদি নাপাকি লেগে থাকে, তবে সে স্থান অপবিত্র। আবার নাপাকি পরিষ্কার
করে নিলেই সঙ্গে সঙ্গে তা পবিত্র হয়ে যায়। মূল কথা হলো- সন্তান ভূমিষ্ঠের সঙ্গে আঁতুর
ঘর চল্লিশ অপবিত্র থাকার কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।
ওয়াবিসা
ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ
ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ
: « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ
ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ
ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ
" ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ
."
তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ
সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি
নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ!
তখন তিনি
আমাকে বললেন,তুমি তোমার
অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর
গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে
অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ
বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন। (মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)
*সন্তান জন্মের ৭ম দিনে অভিভাবকের দায়িত্ব হল, সন্তানের আকীকা করা, মাথার চুল মুণ্ডন করা এবং তার সুন্দর নাম
রাখা।
হাদীস শরীফে
এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তান আকীকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে
পশু জবাই করবে, নাম রাখবে
ও মাথা মুণ্ডন করে দিবে।–(জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২২)
সপ্তম দিনে আকীকা করা, মাথা মুণ্ডন করা এবং নাম রাখা মুস্তাহাব।
তবে এ তিনটির কোনোটি অপরটি সাথে শর্তযুক্ত নয়। তাই কারো আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে
সে যদি ৭ম দিনে আকীকা করতে না পারে তাহলেও ঐ দিন সন্তানের মাথা মুণ্ডন করে দিবে এবং
নামও রাখবে। আকীকা করতে বিলম্ব হলেও এসব কাজে বিলম্ব করবে না। আর হাদীস শরীফে যেহেতু
সপ্তম দিনে মাথা মুণ্ডন করতে বলা হয়েছে তাই সপ্তম দিনের আগে মুণ্ডন না করাই উচিত। মাথা
মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা মুস্তাহাব।
হাদীস শরীফে
এসেছে,
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান রা.-এর আকীকা দিয়ে ফাতেমা রা.-কে বললেন, তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন
পরিমাণ রূপা সদকা করে দাও। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১৯ অপর এক হাদীসে রূপা বা স্বর্ণ
সদকা করার কথাও এসেছে। -(আলমুজামুল আওসাত, হাদীস ৫৫৮; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৬২০৪; ইলাউস সুনান ১৭/১১৯)
রূপা বা স্বর্ণ সদকা করার হেকমত সম্পর্কে জানতে চাওয়া
হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম কথা হল, উক্ত সদকার হেকমত সম্পর্কে হাদীস শরীফে যেহেতু কিছু বলা হয়নি
তাই এর রহস্য বা হেকমত অনুসন্ধানের পিছনে না পড়াই ভালো। বান্দার কাজ হল, বিধি-বিধানের হেকমতের পিছনে না পড়ে শরীয়তের
হুকুম পালন করে যাওয়া। অবশ্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রাহ.-এর একটি কারণ এই লিখেছেন
যে, সন্তান যে চুলসহ ভূমিষ্ট হয়েছিল
তা কেটে ফেলার মাধ্যমে সন্তান একটি অবস্থানে পদার্পণ করে। তাই এর শুকরিয়াস্বরূপ ঐ চুলের
বিনিময়ে সদকা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা ২/১৪৫)।
আর কোনো
কারণবশত বাচ্চার চুল যদি সপ্তম দিনে কাটা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে সপ্তম দিনের চুলের
ওযন অনুমানে রূপা বা স্বর্ণ সদকা করে দিবে।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
১. ঘরে
কোন বাহ্যিক নাপাকী থাকলে সেই অংশটুকু নাপাক। এবং তা পাক করে নিলেই তা পবিত্র হয়ে
যাবে। নাভী পড়ার সাথে ঘরের পাক নাপাকীর কোন সম্পর্কে নেই।
২. বাচ্ছা জন্মের পর ৪০ দিনের পূর্বে কোলে নিলে, সে নাপাক থাকে, তাকে কোলে নিলে গোসল ব্যতিত নামায হবে
না, এরকম কোনো কথা কুরআন হাদীসের
কোথাও নেই। বরং বাচ্ছার শরীরে কোনো প্রকার নাপাকি না থাকলে, বাচ্ছাকে পাক পবিত্র বলেই গণ্য করা হবে।
আর কোন
নাপাকী থাকলে তা পবিত্র করে নিলেই সে পাক হয়ে যাবে।
৩.
জ্বী মাথা মুণ্ডন করার পর চুলের ওজন পরিমাণ রূপা বা স্বর্ণ সদকা করা
মুস্তাহাব। কারো সামর্থ্য থাকলে উক্ত আমল করার সাওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ। আর সামর্থ্য
না থাকলে কোন সমস্যা নেই । এতে কোন গুনাহ হবে না।