بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
কাউকে শুধু
ঋণ দিয়ে এর থেকে অতিরিক্ত কোন ফায়দা গ্রহণ বৈধ নয়। তা সুদ বলে গণ্য হবে। হ্যাঁ, যদি আপনি মুদারাবা চুক্তি করে নিতেন, তাহলে আপনার জন্য টাকা নেয়া বৈধ হতো।
মুদারাবা
চুক্তি বলা হয়, কাউকে টাকা
দেয়া এ শর্তে যে, সে উক্ত
টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে, তারপর যা
লাভ হবে তা নির্দিষ্ট হারে উভয়ে বন্টন করে নিবে। এ পদ্ধতি জায়েজ। কিন্তু শুধুমাত্র
ঋণ দিয়ে তা থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, সুবিধা নেয়া কোনটিই বৈধ নয়।
عَلِيًّا يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
«كُلُّ قَرْضٍ جَرَّ مَنْفَعَةً فَهُوَ رِبًا
হযরত আলী
রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি ঋণ যে উপকারীতা সৃষ্টি করে, তা’ই সুদ। [মুসনাদুল হারেছ, হাদীস নং-৪৩৭, সুনানে সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৯৭১, মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২০৬৯০}
ঋণের আদান-প্রদানে ঋণগ্রহীতা ঋণের
টাকা নিয়ে যেমন উপকৃত হয় এবং তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে, তেমনি ঋণদাতাও এর মধ্য দিয়ে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সাহায্যে এগিয়ে
আসে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে একদিকে ঋণ প্রদানকে
উৎসাহিত করা হয়েছে, অপরদিকে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে
যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করবে
তাদের জন্যে হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে।
ঋণ যথারীতি পরিশোধের বিষয়টি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ প্রদান করে ঋণদাতা গ্রহীতাকে উপকার ও অনুগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঋণ
পরিশোধ কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং ঋণগ্রহীতার ওপর এক
অবধারিত দায়িত্ব। ঋণগ্রহীতার ওপর এটি ঋণদাতার অধিকার। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ
করার পূর্বে মারা যায়, তাহলে কাফন-দাফনের পর
প্রথমেই তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত
কিছু থাকে, তাহলেই কেবল তার ওয়ারিশদের মাঝে তা
বণ্টন করা হবে এবং তাতে তার অসিয়ত কার্যকর হবে।
ঋণ পরিশোধের বিষয়টি একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি হাদিস শরিফে এর ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রকারান্তরে
যথারীতি ঋণ পরিশোধের প্রতি উৎসাহিতও করা হয়েছে। সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু
আনহুর বর্ণনা, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করে
দেওয়ার নিয়তে কারও নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে
দেন। ’ -সহিহ বোখারি: ২৩৮৭
যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া কেবল
পাওনা আদায় নয়, বরং এটা ওয়াদা রক্ষা করার অন্তর্ভুক্ত।
সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া যায় এজন্যে হাদিসে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা
বলা হয়েছে। ইমাম বোখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন,
হজরত আবু যর (রা.) বলেছেন, আমি একদিন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একপর্যায়ে
উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেন,
‘আমি চাই না-
উহুদ পাহাড় আমার জন্যে স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়া হলেও এর একটি দিনার আমার নিকট তিনদিনের
বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্যে রেখে দিই সেটা ভিন্ন।
-সহিহ বোখারি: ২৩৮৮
সময়মতো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ঋণ পরিশোধ
করে দেওয়া মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ঋণগ্রহীতা যেন এ দায়িত্ব যথাযথ পালন
করতে পারে সেজন্যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের দোয়াও শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো-
দোয়া:
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ ،
وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা
অান হারামিক, ওয়া আগনিনী বিফাজলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার
হালাল বিষয়ের মাধ্যমে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার দয়া ও করুণা দিয়ে অন্যদের থেকে
আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন। -জামে তিরমিজি: ৩৫৬৩
অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে
ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে থাকে। কাজটি সুস্পষ্ট অন্যায়। ঋণগ্রহীতার মনে রাখা উচিত- ঋণদাতা
তার ওপর অনুগ্রহ করেছে, এ অনুগ্রহের পরিবর্তে
তার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করাই কর্তব্য। সময়মতো
যদি তার ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে,
তাহলে সে সৌজন্য রক্ষা করে ঋণদাতাকে তা জানাতে পারে, তার কাছ থেকে আরও কয়েকদিন সময় চেয়ে নিতে পারে। কিন্তু সামর্থ্য
থাকা সত্ত্বেও ঋণ যথাসময়ে আদায়ে টালবাহানা
করা- হাদিসে একে সরাসরি জুলুম বলা হয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়। -সহিহ বোখারি:
২৪০০
সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে পাওনাদার
অনেক সময় কটুকথাও বলে। ইসলামের শিক্ষা হলো- পাওনা টাকার জন্যে তাগাদা করার সময় ঋণদাতা
যেন সহজ ও কোমল আচরণ করে, কোনো কটুবাক্য ব্যবহার
না করে। কিন্তু এরপরও যদি সে কটুকথা বলে,
অসুন্দর আচরণ করে, তাহলে ঋণগ্রহীতার উচিত তার সঙ্গে বাদানুবাদে কিংবা ঝগড়া-তর্কে
জড়িয়ে না পড়া।
বোখারি শরিফে আছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কিছু ঋণ নিয়েছিলেন।
সে এসে তার সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতে লাগল। তা দেখে সাহাবায়ে কেরাম তাকে মারতে উদ্যত
হচ্ছিলেন। কিন্তু হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের একটু কথা বলার অধিকার রয়েছে। -সহিহ বোখারি: ২৪০১
ঋণপরিশোধের সময় ঋণগ্রহীতা ইচ্ছা করলে
ঋণদাতার অনুগ্রহের বদলাস্বরূপ তাকে কিছু টাকা বাড়িয়েও দিতে পারে কিংবা যে মানের সম্পদ ঋণ নিয়েছিল তাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের
জিনিস ফেরত দিতে পারে। বাড়িয়ে দেয়ার যদি স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট কোনো পূর্ব কথা না থাকে, তাহলে এটা নিষিদ্ধ সুদের অন্তর্ভুক্তও হবে না। অনুগ্রহের বিনিময়
তো অনুগ্রহ দিয়েই হতে পারে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনালেখ্য
থেকেও আমরা এ অনুগ্রহের শিক্ষা পাই।
সাহাবি হজরত জাবের (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে
যখন তিনি তা আমাকে পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার চেয়েও
বাড়িয়ে দিলেন। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৪৯
পাওনা পরিশোধকালে পাওনাদারের কৃতজ্ঞতা
জানানো এবং তার জন্যে কল্যাণের দোয়া করা ইসলামের এক অনন্য শিক্ষা।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবি
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি রবিয়া (রা.)-এর থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ করেছিলেন। যখন তা
পরিশোধ করলেন, তখন তিনি তার জন্য এ দোয়া করলেন, আল্লাহতায়ালা তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন।
-সুনানে নাসায়ি: ৪৬৮৩
* আমরা অনেক দোকানের সামনে
বা তাদের কাগজপত্রে লেখা দেখতে পাই,
বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া
হয় না, এর পক্ষে যত যুক্তিই থাকুক;
আপনি যদি বিক্রীত পণ্য
ফেরত নেন, তাহলে বিরাট বড় সওয়াবের ভাগী হওয়ার পাশাপাশি একটি মানবিক কাজ
করলেন। হাদিসে এসেছে, বিক্রীত পণ্য ফেরত নেওয়া; কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন (সুনানে আবু দাউদ।
হা. ৩৪৬০)।
একজন মানুষ তার যে কোনো প্রয়োজনেই
কেনা পণ্যটি ফেরত দিতে আসতে পারে। আপনার বিবেচনায় যদি পণ্যটি ফেরত নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে তা ফেরত নেবেন। বিষয়টি যদিও ঐচ্ছিক; তবে এর প্রতিদান বিরাট বড়। কেয়ামতের দিন যখন আপনার জন্য বাঁচার
কোনো উপায় থাকবে না; বিক্রীত পণ্যটি ফেরত নেওয়ার
মাধ্যমে আপনি সেই কঠিন বিপদের দিনে এর উসিলায় পার পেয়ে যেতে পারেন। এক হাদিসে এসেছে, যে দুনিয়াতে কারও বিপদ দূর করবে, আখেরাতে আল্লাহ তার বিপদ দূর করবেন (মুজামে আওসাত ২/৮৬)।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. উক্ত ছুরতটি সুদের অন্তর্ভুক্ত
হওয়াই এমন কোম্পানীতে জব না করাই শ্রেয়। যথা সম্ভব চেষ্টা করা হালাল কর্মসংস্থানে শ্রম
দিয়ে উপার্জন করা।
২. যদি উক্ত ব্যাক্তি বাকী টাকা পরিশোধ
করতে ব্যর্থ হয় এবং বিক্রিত পণ্য ফেরত দিতে চায় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয আছে। একজন মানুষ সাধারণত বিপদে পড়েই কেনা পণ্য ফেরত দিতে আসে। এ জন্য আমরা যদি বিক্রীত
পণ্য ফেরত নিই, তাহলে হাদিসে ঘোষিত বিরাট
ফজিলতের অংশীদার হতে পারব। আল্লাহতায়ালা আমাদের হাদিসের শিক্ষার ওপর আমল করার তাওফিক
দান করুন।