আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,073 views
in সালাত(Prayer) by (22 points)
নামাজে যদি সূরা পড়ার সময় আগে পিছনের দিকের সূরা পড়া হয় এবং পরের রাকাতে সামনের দিকে সূরা পড়া হয় অর্থাৎ আগের রাকাতে সূরা নাস পড়লাম এবং এরপরের রাকাতে সূরা ফালাক্ব পড়লাম তাহলে কি গুনাহ হবে??

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

নামাযের রাকাতসমূহে সূরা পড়ার ক্ষেত্রে মৌলিক কয়েকটি কথা স্বরণ রাখলে এ সংক্রান্ত সমস্ত মাসয়ালা পরিস্কার হয়ে যাবে। 

যেমন-
সূরা মিলানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কমপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করা হয়। তিন আয়াতের সীমা হল, কমপক্ষে ত্রিশ হরফ হতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
★আমর ইবনে মাইমুন রাহ. বলেন-

صَلّى بِنَا عُمَرُ الْفَجْرَ فِي السّفَرِ، فَقَرَأ بِـ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، و قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ.

হযরত উমর রা. সফরের সময় আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামাযে তিনি قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ (সূরা কাফিরূন) এবং قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) তিলাওয়াত করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৩৩, ২৭৩৫

অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত উমর রা. সফরের সময় ফজরের নামাযে সূরা ‘ফীল’ ও সূরা ‘কুরাইশ’ তিলাওয়াত করেছেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০২

★আবু ওয়া’ইল রাহ. বলেন-

صَلّى بِنَا ابْنُ مَسْعُودٍ الْفَجْرَ فِي السّفَرِ، فَقَرَأ بِآخِرِ بَنِي إِسْرَائِيلَ: الْحَمْدُ لِلهِ الّذي لَمْ يَتّخِذْ وَلَدًا، ثُمّ رَكَعَ.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সফরে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামাযে তিনি সূরা ‘বানী ইসরাঈল’-এর শেষ আয়াত  الْحَمْدُ لِلهِ الَّذي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا তিলাওয়াত করলেন। এরপর রুকুতে চলে গেলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৬

★ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন-

كَانَ أصْحَابُ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم يَقْرَؤُوْنَ فِي السّفَرِ بِالسّوَرِ القِصَارِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সফরে ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৪

★আমর ইবনে মাইমূন রাহ. বলেন-

أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمّا طُعِنَ، قَدّمُوا عَبْدَ الرّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ، صَلّى بِهمُ الْفَجْرَ، فَقَرَأَ: إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ، وَ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ.

হযরত উমর রা. যখন আহত হলেন, তখন তারা হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. কে আগে বাড়িয়ে দিলেন। তিনি ফজরের নামায পড়ালেন। নামাযে তিনি إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ (সূরা নাছ্র) এবং إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (সূরা কাউসার) তিলাওয়াত করলেন। -সুনানে বাইহাকী খ. ২ পৃ. ৩৯০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৪০

(تنبيه) لم ار من قدر ادنى ما يكفى بحد مقدر من الآية الطويلة…….. وَقَدْرُهَا مِنْ حَيْثُ الْكَلِمَاتُ عَشْرٌ، وَمِنْ حَيْثُ الْحُرُوفُ ثَلَاثُونَ، فَلَوْ قَرَأَ – {اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ} [البقرة: 255]- يَبْلُغُ مِقْدَارَ هَذِهِ الْآيَاتِ الثَّلَاثِ، فَعَلَى مَا قُلْنَاهُ لَوْ اقْتَصَرَ عَلَى هَذَا الْقَدْرِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ كَفَى عَنْ الْوَاجِبِ، وَلَمْ أَرَ مَنْ تَعَرَّضَ لِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ فَلْيُتَأَمَّلْ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فصل فى القراءة قبيل مطلب فى الفرق بين فرض العين وفرض الكفاية-)
যার সারমর্ম হলো কেহ যদি নামাজের ভিতর  প্রত্যেক রাকাতে
{اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ} পরিমান কেরাত পড়ে,তাহলে যথেষ্ট হবে। 

এক সূরা পড়ার পর মাঝখানে এক সূরা বাদ দিয়ে পরের সূরা পড়া মাকরূহ্ তবে দুই সূরা বাদ দিয়ে পড়াতে কোন সমস্যা নেই।

যেমন, প্রথম রাকাতে সূরা ফীল পড়ার পর, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কুরাইশ বাদ দিয়ে সূরা মা’ঊন পড়া মাকরূহ। কিন্তু সূরা কাউসার বা কাফিরূন বা এর পরের সূরাগুলো পড়াতে কোন সমস্যা নেই।

তবে ভুলে এমন হলে সমস্যা নেই।

ويكره فصله بسورة بين سورتين قرأهما فى ركعتين لما فيه من شبهة التفضيل والهجر، (مراقى الفلاح على هامش الطحطاوى، فصل فى المكروهات-287، الدر المختار مع الشامى- 2/269)
যার সারমর্ম হলো দুই সূরার মাঝখানে এক সূরা বাদ দিয়ে পরের সূরা পড়া মাকরূহ্।

প্রথম রাকাতে যে সূরা পড়বে, পরের রাকাতে তার পরবর্তী সূরা পড়বে। কিন্তু প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে, পরের রাকাতে উক্ত সূরা আগের কোন সূরা পড়া মাকরূহ। তাই প্রথম সূরা শুরু করবে, যেন উক্ত সূরার পর পরের রাকাতে পড়ার মত কোন সূরা থাকে।

যেমন প্রথম রাকাতে সূরা সূরা ফীল পড়া আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা হুমাজাহ পড়া মাকরূহ। কারণ এতে কুরআনের তারতীব পাল্টে দেয়া হচ্ছে।

তবে যদি ভুলে এমনটি করে তাহলে সমস্যা নেই।

কখনো ভুলে যদি সূরা নাস পড়ে ফেলে। তাহলে পরবর্তী সকল রাকাতে সূরা নাসই পড়বে। পূর্বের অন্য কোন সূরা পড়বে না। ভুলে অন্য সূরা পড়লে কোন সমস্যা নেই।

وَيُكْرَهُ الْفَصْلُ بِسُورَةٍ قَصِيرَةٍ وَأَنْ يَقْرَأَ مَنْكُوسًا إلَّا إذَا خَتَمَ فَيَقْرَأُ مِنْ الْبَقَرَةِ. وَفِي الْقُنْيَةِ قَرَأَ فِي الْأُولَى الْكَافِرُونَ وَفِي الثَّانِيَةِ – أَلَمْ تَرَ – أَوْ – تَبَّتْ – ثُمَّ ذَكَرَ يُتِمُّ وَقِيلَ يَقْطَعُ وَيَبْدَأُ، 
وقال ابن عابدين الشامى رح: (قَوْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ يُتِمُّ) أَفَادَ أَنَّ التَّنْكِيسَ أَوْ الْفَصْلَ بِالْقَصِيرَةِ إنَّمَا يُكْرَهُ إذَا كَانَ عَنْ قَصْدٍ، فَلَوْ سَهْوًا فَلَا كَمَا فِي شَرْحِ الْمُنْيَةِ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فروع يجب الاستماع القراءت مطلقا-2/269)

قَرَأَ فِي الْأُولَى – {قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ} [الناس: 1]- أَعَادَهَا فِي الثَّانِيَةِ إنْ لَمْ يَخْتِمْ نَهْرٌ لِأَنَّ التَّكْرَارَ أَهْوَنُ مِنْ الْقِرَاءَةِ مَنْكُوسًا بَزَّازِيَّةٌ، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب  صفة الصلاة-2/268)
যার সারমর্ম হলো ভুলক্রমে এমনটি হলে মাকরুহ হবেনা।
যদি কেহ প্রথম রাকাতে সুরা নাস পড়ে,তাহলে পরের রাকাতেও সুরা নাস পড়বে।  

বড় সূরা মাঝখান থেকে কিছু অংশ পড়া, আর পরের রাকাতে আরেক সূরার মাঝখান থেকে পড়া অনুত্তম। বরং তারতীব ঠিক রেখে পড়তে হবে।

এক্ষেত্রে ভুলক্রমে তারতীব উল্টাপাল্টা হয়ে গেলে সমস্যা নেই। তবে ইচ্ছেকৃত এমন করা যাবে না।

لَوْ قَرَأَ فِي الْأُولَى مِنْ وَسَطِ سُورَةٍ أَوْ مِنْ سُورَةٍ أَوَّلَهَا ثُمَّ قَرَأَ فِي الثَّانِيَةِ مِنْ وَسَطِ سُورَةِ أُخْرَى أَوْ مِنْ أَوَّلِهَا أَوْ سُورَةً قَصِيرَةً الْأَصَحُّ أَنَّهُ لَا يُكْرَهُ، لَكِنْ الْأَوْلَى أَنْ لَا يَفْعَلَ مِنْ غَيْرِ ضَرُورَةٍ (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صفة الصلاة، فروع يجب الاستماع للقراءت مطلقا-2/268-269)
যার সারমর্ম হলো   প্রথম রাকাতে এক সূরার মাঝখান থেকে কিছু অংশ পড়া, আর পরের রাকাতে আরেক সূরার মাঝখান থেকে পড়া অনুত্তম। 
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত "নামাজে যদি সূরা পড়ার সময় আগে পিছনের দিকের সূরা পড়া হয় এবং পরের রাকাতে সামনের দিকে সূরা পড়া হয়"
তাহলে এটা মাকরুহ হবে।
,
ভুলক্রমে এমনটি হলে কোনো সমস্যা নেই।
,
উল্লেখ্য যে  প্রথম রাকাতে সুরা নাস  পড়লে ঐ নামাজের পরবর্তী সমস্ত রাকাতেও সুরা নাসই পড়তে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...