আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
218 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (13 points)
মানুষ যদি পাপ না করতো, তাহলে তাদের ধ্বংস করে আমি(আল্লাহ) এমন এক জাতি নিয়ে আসতাম যে গুনাহ করতো আর তওবা করতো

কাউকে গুনাহ করতে দেখলে তাদের মানা করলে অনেকে এই হাদিসটার কথা বলে আর গুনাহ করে।

১. হাদিসটার একটু রেফারেন্স দিবেন

২. হাদিসটার কন্টেক্সট বা ব্যাখ্যাটা/প্রসঙ্গ কি

৩. অনেকে যারা এই হাদিস বলে ইচ্ছে করে গুনাহ করে তাদের ব্যাপারে আপনি কি বলেন।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللَّهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ» . رَوَاهُ مُسلم

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সরিয়ে এমন জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করত ও আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চাইত। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন।

(সহীহ : মুসলিম ২৭৪৯, শু‘আবূল ঈমান ৬৭০০, সহীহাহ্ ১৯৫০, সহীহ আত্ তারগীব ৩১৪৯.মিশকাতুল মাসাবিহ ২৩২৮।)

(০২)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা:
(وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ) অর্থাৎ- অবশ্যই তোমাদেরকে নিয়ে চলে যেতেন এবং তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিতেন এবং তোমাদের মধ্য থেকেই বা তোমাদের ছাড়া অন্যদের থেকে অন্য আরেকটি সম্প্রদায় বের করতেন। (يُذْنِبُونَ) অর্থাৎ- তাদের থেকে গুনাহ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব হত।

(فَيَغْفِرُ لَهُمْ) অর্থাৎ- غفار এবং غفور সিফাতের কারণে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা অত্যন্ত ক্ষমাশীল’’- (সূরা নূহ ৭১ : ১০)। 

উপাস্যগত বৈশিষ্ট্যের আবশ্যকতার কারণে মানব জাতির মাঝে অবাধ্যতার উপস্থিতি। অর্থাৎ- তোমরাও যদি মালায়িকাহর (ফেরেশতাদের) মতো গুনাহমুক্ত থাকতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের এ পৃথিবী থেকে নিয়ে চলে যেতেন এবং এমন জাতি নিয়ে আসতেন যাদের থেকে গুনাহ সংঘটিত হত যাতে الغفران এবং العفو গুণের অর্থ নষ্ট না হয়। সুতরাং এ হাদীসে গুনাহে ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়নি।

তুরবিশতী বলেনঃ এ হাদীস থেকে উদ্দেশ্য হল, নিশ্চয়ই আল্লাহ যেমন দয়াকারীর প্রতি দয়া করতে ভালবাসেন তেমনি পাপীর পাপ এড়িয়ে চলাও পছন্দ করেন। আর এর উপর প্রমাণ বহন করে আল্লাহর একাধিক নাম, গাফফার, তাওয়াব, হালীম এবং ‘আফুব্যু। 

সুতরাং আল্লাহ এমন নন যে, বান্দাদেরকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে মালায়িকাহর (ফেরেশতার) মতো তাদেরকে একই গুণের উপর সৃষ্টি করবেন। বরং তাদের মাঝে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে তার স্বভাব অনুযায়ী প্রবৃত্তির দিকে ঝুকবে ফিতনাহগ্রস্ত হবে এবং প্রবৃত্তির প্রতি সংশয়পূর্ণ হবে। অতঃপর তাকে তা থেকে বেঁচে থাকতে তাকে দায়িত্ব দিবেন, অপরাধী হওয়া থেকে তাকে সতর্ক করবে। পরীক্ষায় পতিত করার পর তাকে তাওবার সাথে পরিচিত করবো। সুতরাং বান্দা যদি আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে তাহলে তার পুণ্য আল্লাহর কাছে থাকবে। পক্ষান্তরে পথ ভুল করলে তার সামনে তাওবাহ্ করার সুযোগ থাকবে।

সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)’কে যে বৈশিষ্ট্যের উপর তৈরি করেছেন তোমাদেরকে যদি সে বৈশিষ্ট্যের উপর তৈরি করা হত, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ এমন জাতি নিয়ে আসতেন যাদের দ্বারা গুনাহ সম্পাদিত হত। অতঃপর আল্লাহ কৌশলের চাহিদা মোতাবেক তাদের কাছে ঐ সমস্ত গুণাবলী নিয়ে প্রকাশ পেতেন, কেননা তিনি গাফফার যার বৈশিষ্ট্য ক্ষমা করা, যেমনি তিনি রাজ্জাক যার বৈশিষ্ট্য দান করা।

(০৩)
যারা এই হাদীস বলে ইচ্ছা করে গুনাহ করে,তাদের একাজটি মারাত্মক অপরাধ হচ্ছে।
গুনাহ করার পর তওবা নসিব হওয়ার গ্যারান্টি কারো রয়েছে?

আবার তওবা করলেও সেই তওবা যে আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেনই,এমন গ্যারান্টিও কারো কাছেই নেই।

সুতরাং উক্ত হাদীস বলে গুনাহ করা কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
গুনাহ থেকে পূর্ণ হেফাজতে থাকা চাই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...