আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
767 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (-1 points)
আসসালামু আলাইকুম,

আলী (রা.) এর ব্যাপারে একটি হাদিস প্রচলিত আছে যা অধিকাংশ হক্কানী আলেমরা তাদের বয়ানে প্রায়ই বলে থাকেন।
হাদিসটি নিম্মরুপ:
আলী (রা.) একবার যুদ্ধের ময়দানে এক কাফেরের বুকের উপর উঠলেন তাকে হত্যা করার জন্য তখন কাফের তার মুখে থুথু দিলো,এরপর তিনি ঐ কাফেরকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন আমি এতক্ষন আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করেছি কিন্তু যখন তুমি আমাকে থুথু দিলে তখন এর কারনে আমার নিজের রাগ উঠেছে আর আমার নিজের রাগের জন্য তোমাকে হত্যা করতে চাই না।

প্রশ্ন: এই হাদিসটির কী কোনো বিশুদ্ধ দলিল আছে? নাকি এটি ভিত্তিহীন একটি হাদিস?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

এই ঘটনাটি কোনো ছহিহ হাদীস বা জয়ীফ হাদীস দ্বারা প্রমানীত নয়।
আহলে সুন্নাত  ওয়াল  জামায়াতের  কোনো হাদীসের কিতাবে এই ঘটনা নেই।
অবশ্য  শীয়াদের কিতাবে এই ঘটনা এসেছে।
এটি আমাদেত সমাজে অনেক বক্তারাই বলে থাকেন,তাই এটি প্রসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। 
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়  হলো এই যে এই ঘটনার পরের অংশ  যদিও শীয়াদের কিতাবে উল্লেখ  আছে,তবে সেটাকে সাধারণত আমাদের সমাজে নকল বা আলোচনা  করা হয়না।
সেখানে আছে যে রাগ ঠান্ডা  হয়ে যাওয়ার পর আলী রাঃ  তাকে হত্যা করেছিলেন।

★★শীয়াদের কিতাবেই শুধু এই ঘটনা এসেছে,আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কিতাবে এই ঘটনা নেই।
শীয়াদের কিতাব থেকে উল্লেখ করা হচ্ছেঃ     

ذکر ابْنُ شَهْرَآشُوبَ فِي الْمَنَاقِبِ، عَنْ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ قَالَ: لَمَّا أَدْرَكَ عَمْرَو بْنَ عَبْد وُدٍّ لَمْ يَضْرِبْهُ فَوَقَعُوا فِي عَلِيٍّ فَرَدَّ عَنْهُ حُذَيْفَةُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلی اللہ علیه وسلم: مَهْ يَاحُذَيْفَةُ! فَإِنَّ عَلِيّاً سَيَذْكُرُ سَبَبَ وَقْفَتِهِ ثُمَّ إِنَّهُ ضَرَبَهُ، فَلَمَّا جَاءَ سَأَلَهُ النَّبِيُّ صلی اللہ علیه وسلم عَنْ ذَلِكَ قَالَ: قَدْ كَانَ شَتَمَ أُمِّي وَتَفَلَ فِي وَجْهِي فَخَشِيتُ أَنْ أَضْرِبَهُ لِحَظِّ نَفْسِي فَتَرَكْتُهُ حَتَّى سَكَنَ مَا بِي ثُمَّ قَتَلْتُهُ فِي اللہِ. (مستدرك الوسائل ج:18، ص:28).

وخلاصة الحدث: أن علياً عليه السّلام يطرح بطل الأبطال على الأرض ويجلس على صدره ليحتز رأسه وهنا بصق عمرو في وجه علي عليه السّلام، فيقوم الإمام عليه السّلام من فوق صدره، ويأخذ بالسير بهدوء بالقرب منه وبعد فترة يعود فيجلس مرة أخرى على صدره ويهم بقطع رأسه فيسأله عمر عن سبب قيامه عليه السّلام أولاً ثم عودته ثانية؟ فماذا كان جواب الإمام عليه السّلام؟ لقد غضب الإمام عندما بصق اللعين في وجهه الشريف، وهنا تركه خشية من أنه إن قتله وهو غاضب فقد يحتمل أن يكون ذلك غضباً لنفسه لا لله، فقام عنه حتى هدأ عليه السّلام وعاد فقتله لله تعالى لا لغيره.
(من محاضرات “الهجره والجهاد” للشهيد مطهري مع الاختصار والتصرف).
যার সারমর্ম হলো হযরত আলী রাঃ থুথু দেওয়ার কারনে উক্ত কাফেরকে তৎক্ষনাৎ হত্যা করেননি,তবে পরে তাকে হত্যা করেছিলেন।   
রাসুল সাঃ তাকে এই বিষয়ে যখন জিজ্ঞাসা করেন,তখন আলী রাঃ উত্তর দিয়েছিলেন যে উক্ত কাফের আমার মাকে গালী দিয়েছিলো,আমার চেহারায় থুথু নিক্ষেপ করেছিলো,তাই তখন আমি তাকে হত্যা করিনি।
কিন্তু রাগ যখন চলে গিয়েছিল, তখন আমি তাকে হত্যা করে দিয়েছি।       

★এই ঘটনা আমাদের সমাজের লোকেরা যেই ভাবে বয়ান করে থাকেঃ
এক জিহাদের ময়দানে মুসলমান বাহিনীর সাথে কাফেরদের প্রচন্ড যুদ্ধ চলছিল।
হযরত আলী কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনি এক কাফেরকে ধরাশায়ী করে তার বুকের উপর চড়ে বসেছেন। হাতে নগ্ন তরবারী। এখনি তার বুকে বসিয়ে দিবেন।
সহসা ধরাশায়ী অমুসলিম সৈনিকটি তার শেষ অস্ত্র চালাতে গিয়ে বুকের ওপর চেপে বসা হযরত কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মুখ মুবারকে থুথু নিক্ষেপ করলেন। হযরত আলী কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম সংগে সংগে তার বুকের উপর থেকে উঠে গেলেন।
তরবারি দূরে নিক্ষেপ করে বললেন, “যাও, তুমি মুক্ত।”
কাফের সৈনিকটি তো হতবাক। সে যে একটি যুদ্ধের ময়দানে রয়েছে একথা ভুলে গেল।
সে জিজ্ঞাসা করলোঃ হে আলী কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম আপনার কি হয়েছে? আমাকে অমন হাতের মুঠোয় পেয়েও ছেড়ে দিলেন!
হযরত কাররামাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেনঃ ময়দানে তোমাদের সাথে যে যুদ্ধ চলছিল সেটা চলছিল ইসলামের জন্য । কিন্তু যে মুহুর্তে তুমি আমার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলে, তখন তোমার ওপর আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ সৃষ্টি হলো।
এই আক্রোশের ফলে এখন তোমাকে হত্যা করা ঠিক হবে না। তাই তোমাকে মুক্ত করে দিলাম।
কাফের লোক টি তৎক্ষণাত বললোঃ “যে ধর্ম মানুষ কে এমন কঠিন মুহুর্তেও আত্মসংযম শিক্ষা দেয় আমিও আজ থেকে এই পবিত্র ধর্মেরই ছায়াতলে থাকতে চাই
এই বলে লোকটি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন।
,
আরো কেহ কেহ কিছুটা ভিন্নভাবে  এই ঘটনা বলে থাকেনঃ

কোন এক যুদ্ধে হযরত আলী (রা:) এক কাফেরের বুকের উপর বসে তার শিরোচ্ছেদ করার পূর্ব মুহুর্তে কাফেরটি তাঁর পবিত্র মুখমন্ডলে থুথু নিক্ষেপ করে। সাথে সাথে আলী (রা:) তাকে ছেড়ে দেন। লোকটি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপার তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে কেন? উত্তরে আলী (রা:) বললেন, তুমি আল্লাহর দুশমন, আমি আল্লাহর সন্তুুষ্টির জন্য তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তুু যখন তুমি আমার মুখে থুথু ছুড়লে তখন তোমার প্রতি আমার ব্যক্তিগত ক্রোধ চলে আসে ঐ। অবস্থায় আমি যদি তোমাকে হত্যা করতাম, তাহলে কেয়ামতের ময়দানে আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হতো।
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...