আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
343 views
in সালাত(Prayer) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম।
১.আমার খুব হতাশ লাগছে। মনে হচ্ছে আমার নামাজ, রোজা কিছুই সহীহ হয় নাই এতদিন। আমি ছোটবেলা থেকে দেখতেছি সবাই ঠোট নাড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলে আওয়াজ করে না।  আমিও সেইভাবেই পড়েছি এতদিন। আপনাদের কথামত আমার নামাজ ই হয় নাই। আমার কি ওই নামাজগুলো আবার কাজা পড়তে হবে?

২. আমার নাক সবসময় বন্ধ থাকে,,,,ড্রপ দিয়ে খোলা রাখতে হয়। গুমানোর আগে ড্রপ না দিলে গুম আসে না। আমি রোজার সময়ও ড্রপ নাকে দিতাম কিন্তু গিলতাম না। ড্রপ দিয়ে সাথে সাথে ফেলে দেই,, তাতে নাক খোলে। ড্রপ না দিলে নাক পুরো বন্ধ থাকে। নিঃশ্বাস নিতে পারি না নাক দিয়ে ফলে মুখ দিয়ে নিতে হয়। গলা শুকিয়ে যায়। নাক জ্বলে ইত্যাদি  সমস্যা হয়। আমি শুনেছি নাকে ড্রপ দিলে রোজা ভেঙ্গে যায়। তাহলে আমার রোজাও হয় নাই। নামাজও হয় নাই। কিছুই হয় নাই। আমি দুনিয়াও পেলাম না। আমি কত মেয়ের পিছে ঘুরেছি, তারা কেউ আমাকে পছন্দ করে নি। কারন আমি চিকন, দেখতে সুন্দর না।একজনের পর আরেকজনের পিছে ঘুরেছি। প্রতিটা মেয়ের পিছে ঘুরার সময় নিয়ত থাকতো তাকে বিয়ে করবো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাকে হেদায়েত দেওয়ার পর আমি মেয়েদের পিছে ঘুরা ছেড়েছি,,,রাসুলুল্লাহর সুন্নাহ পালন করার সর্বোচ্চ চেস্টা করি। এখন শুধু আখিরাতের চিন্তা করি। কবরের আজাব থেকে বাঁচতে চাই। আমি দুনিয়া চাই না,, আখিরাত চাই। কিন্তু পরিশেষে মনে হয় আমি কিছুই পেলাম না। দুনিয়াও পেলাম না কারন পছন্দের মেয়েদের মধ্যে কাউকেই পেলাম না। আবার আখিরাত ও পেলাম না মনে হচ্ছে কারন রোজার বেশীরভাগ গুলোই হয় নাই ড্রপ ব্যাবহারের কারনে। নামাজ ও হয় নাই তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় আওয়াজ না করাতে,,,আবার আমি দুর্বল, চিকন এসব চিন্তায় আমি পুরোই হতাশ৷ দুনিয়াবি ক্ষতিকে আমি তেমন গুরতর মনে করি না কিন্তু আমার নামাজ রোজাও হয় নাই তাই আমি হতাশ,,,,চিন্তিত, খিদা নাই খাবারের প্রতি।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 
,
(০১)
কুরআন কারীম বর্ণিত আছেঃ 

বলে দাও, তোমরা আল্লাহ বা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন, সব সুন্দর নাম তো তাঁরই। নামাজে তোমাদের স্বর খুব উচ্চ বা অতিশয় ক্ষীণ করো না, বরং এ দুইয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন করো। [সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১০
,
নামাজে আস্তে পড়ার ব্যাপারে আগে বিস্তারিত জানুনঃ  
সিররি কিরাআতের অর্থ বুঝতে অনেকে ভুল করে,অনেকে নামাজে মনে মনে কিরাআত পড়ে,তাই আস্তে আওয়াজে কিরাআত পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট করছিঃ-

যে সমস্ত নামাযে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সে সকল নামাযে অনেককে দেখা যায়, মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সূরা কেরাত পড়েন। হয়তো তারা এই ভুল ধারণা করে আছেন যে, আস্তে আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া।

এটি ঠিক নয়। কারণ যে সকল নামাযে কেরাত আস্তে পড়তে বলা হয়েছে, তার অর্থ হল, নিচু স্বরে তিলাওয়াত করা। আর এতো খুবই সহজ কথা যে, মনে মনে পড়া কোনোক্রমেই নিচু স্বরে পড়া নয়।

ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদি থেকেও বোঝা যায় যে, আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হল এমনভাবে পড়া, যেন সে নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যই জরুরি যে, সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া  দেখা যাবে। 
,
একটি হাদীসে আছে যে, যোহর ও আসর নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়ে কেরামও কখনো কখনো শুনতে পেতেন। হযরত আবু মামার বলেন, আমরা হযরত খাববাব রা.কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ও আসর নামাযে কুরআন পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কীভাবে বুঝতেন? তিনি বললেন, ‘বিজতিরাবি লিহয়াতিহী’-তাঁর দাঁড়ি মোবারক নড়াচড়া দ্বারা। (সহীহ বুখারী-ফাতহুল বারী ২/২৮৪-২৮৭)

অতএব কেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।
,
হাদীসটির পুরো রুপঃ 
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ. قُلْنَا بِأَىِّ شَىْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ.

আবূ মা‘মার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাববাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও ‘আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কী করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়। (বুখারী শরীফ ৭৪৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭২৪)
,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]
,
আস্তে আস্তে কিরাআতের নামাজে সুরা সমূহ জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।
,
(০২) নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে যদি তা পেটে পৌঁছে তবে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
অন্যথায় রোযা ভেঙ্গে যাবেনা। 

কেননা লাক্বীত বিন সাবুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন,
وَبَالِغْ فِي الِاسْتِنْشَاقِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا
ছিয়াম অবস্থায় না থাকলে ওযুর ক্ষেত্রে নাকে অতিরিক্ত পানি নিবে।
[আবু দাঊদ, অধ্যায়: নাক ঝাড়া, ১৪২। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিও্বতা, অনুচ্ছেদঃ আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ নাকে পানি নেয়ায় বাড়াবাড়ি করা। ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: আঙ্গুল খিলাল করার বর্ণনা। ]

অতএব পেটে পৌঁছে এরকম করে রোযাদারের নাকে ড্রপ ব্যবহার করা জায়েয নয়।
ব্যবহার করলে তা যদি শুধু  নাকেই প্রবেশ করে কিন্তু পেট পর্যন্ত পৌঁছে না। তাহলে ইহা ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। এতে রোযা ভঙ্গও হবে না। 
,
★সুতরাং আশা করছি আপনি আর হতাশায় ভুগবেননা।
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সর্বদায় দ্বীনের উপর  অটল অবিচল থাকার তওফিক দান করুন।
আমিন 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...