বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
অন্যায়ভাবে কোনো মুসলমান নিহত হলে তাকে হুকমান তথা আখেরাত হিসেবে তাকে শহিদ বলা যাবে।অর্থাৎ আখেরাতে তাকে শহিদের মর্যাদা দেয়া হবে।তবে দুনিয়াতে তাকে সাধারণ মুসলমানের মত গোসল এবং কাপন পড়িয়ে দাফন করা হবে।
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "(২৯/১৭৪) এ বর্ণিত রয়েছে,
" ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﻟﻠﻈﻠﻢ ﺃﺛﺮﺍً ﻓﻲ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻘﺘﻮﻝ ﺑﺄﻧﻪ ﺷﻬﻴﺪ ، ﻭﻳُﻘﺼﺪ ﺑﻪ ﻏﻴﺮ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﻤﻌﺮﻛﺔ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ، ﻭﻣِﻦ ﺻﻮَﺭ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎً : ﻗﺘﻴﻞ ﺍﻟﻠﺼﻮﺹ ، ﻭﺍﻟﺒﻐﺎﺓ ، ﻭﻗﻄَّﺎﻉ ﺍﻟﻄﺮﻕ ، ﺃﻭ ﻣَﻦ ﻗُﺘﻞ ﻣﺪﺍﻓﻌﺎً ﻋﻦ ﻧﻔﺴﻪ ، ﺃﻭ ﻣﺎﻟﻪ ، ﺃﻭ ﺩﻣﻪ ، ﺃﻭ ﺩِﻳﻨﻪ ، ﺃﻭ ﺃﻫﻠﻪ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ، ﺃﻭ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻣﺔ ، ﺃﻭ ﻣَﻦ ﻗﺘﻞ ﺩﻭﻥ ﻣﻈﻠﻤﺔ ، ﺃﻭ ﻣﺎﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺠﻦ ﻭﻗﺪ ﺣﺒﺲ ﻇﻠﻤﺎً .
ﻭﺍﺧﺘﻠﻔﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻋﺘﺒﺎﺭﻩ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ ، ﺃﻭ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﻘﻂ ؟ .
ﻓﺬﻫﺐ ﺟﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﺇﻟﻰ ﺃﻥ ﻣَﻦ ﻗُﺘﻞ ﻇﻠﻤﺎً : ﻳُﻌﺘﺒﺮ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﻘﻂ ، ﻟﻪ ﺣﻜﻢ ﺷﻬﻴﺪ ﺍﻟﻤﻌﺮﻛﺔ ﻣﻊ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﻲ ﺍﻵﺧﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ ، ﻭﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺣﻜﻤﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ، ﻓﻴُﻐﺴَّﻞ ، ﻭﻳﺼﻠَّﻰ ﻋﻠﻴﻪ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
জুমহুর ফুকাহায়ে কিরাম মনে করেন,জুলুম-নির্যাতনে নিহত ব্যক্তির ব্যপারে শহীদের হুকুম আরোপ করা হবে।তবে এ শহীদ সে শহীদ নয়, যে কাফিরদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হবে।
কোন প্রকারের জুলুম-নির্যাতনে নিহত হলে তাকে মাধ্যমে শহীদ কাকে বলা যাবে?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায় যে,
চুরের হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
ডাকাতের হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
খেলাফত বিদ্রোহীর হাতে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
আত্মরক্ষার্তে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
নিজ মাল, দ্বীন, পরিবারবর্গ বা মুসলমানদের অথবা (যিম্মিদের) আশ্রয়প্রার্থীদের রক্ষার্তে নিহত ব্যক্তি শহীদ।
অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি জেলে মারা গেলে সেও শহীদ।
এখন ফুকাহায়ে কিরামের নিকট এ ব্যাপারে মাতানৈক্য হয়েছে যে,তাকে কি শুধু আখেরাত হিসেবে শহীদ বলা হবে না দুনিয়া-আখেরাত উভয় হিসেবে শহীদ বলা হবে।
জুমহুর ফুকাহায়ে কেরাম মনে করেন যে, অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র আখেরাত হিসেবে শহীদ বলা হবে।হ্যা অবশ্যই সে কাফিরের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
তবে শহীদের দুনিয়াবি হুকুম তথা গোসল কাপন তার উপর আরোপিত হবে না।বরং তাকে গোসল দিয়ে কাফন পড়িয়ে তারপর দাফন করা হবে।
[আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "২৯/১৭৪]
তাকে শহীদ বলা হবে।এর প্রমাণ হল,যে আমরা জানি, ফযরের নামাযে ইমামতি অবস্থায় হযরত উমর রাযি কে অগ্নিপূজক আবু লুলু চাকু দ্বারা আগাত করে হত্যা করেছিল।এবং হযরত উসমান রাযি কে কিছুসংখ্যক বিদ্রোহীরা ঘরের ভিতর প্রবেশ করে হত্যা করেছিলো।
এতদ্বসত্তে উভয়জনকে রাসূলুল্লাহ সাঃ শহীদ বলেছেন।
যেমনঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عنْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ : ﺻَﻌِﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻟَﻰ " ﺃُﺣُﺪٍ " ﻭَﻣَﻌَﻪُ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻭَﻋُﻤَﺮُ ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﻓَﺮَﺟَﻒَ ﺑِﻬِﻢْ ، ﻓَﻀَﺮَﺑَﻪُ ﺑِﺮِﺟْﻠِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ( ﺍﺛْﺒُﺖْ ﺃُﺣُﺪُ ، ﻓَﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺇِﻻَّ ﻧَﺒِﻲٌّ ، ﺃَﻭْ ﺻِﺪِّﻳﻖٌ ، ﺃَﻭْ ﺷَﻬِﻴﺪَﺍﻥِ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ উহুদের পাহাড় বেয়ে উঠতেছিলেন,
উনার সাথে আবু বকর রাযি. এবং উমর রাযি. এবং উসমান রাযি. ছিলেন।তৎক্ষণাৎ উহুদ পাহাড়ে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেলো।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ পা দ্বারা পাহাড়ের গায়ে আগাত করে বললেন,হে উহুদ! শান্ত হয়ে যাও।
তোমার উপর আর কেউ নয় বরং রাসূলুল্লাহ সাঃ, সিদ্দিক,এবং দুই শহীদ অবস্থান করছেন।
সহীহ বুখারী-৩৪৮৩
উক্ত হাদীসে নবী দ্বারা উদ্দেশ্য 'মুহাম্মদ সাঃ,' সিদ্দিক দ্বারা উদ্দেশ্য 'আবু-বকর রাযি,' এবং দুই শহীদ দ্বারা উদ্দেশ্য 'উমর রাযি.' এবং 'উসমান রাযি.'।
শরহু রিয়াযুস-সালিহিন-৪/১২৯-১৩০
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,আমাদের ভাই 'আবরার' সে আখেরাতে শহীদের মর্যাদা পাবে,এবং এ মর্যাদা আফগান, ফিলিস্তিন, কাস্মীর, ইত্যাদির যুদ্ধক্ষেত্রে কাফিরদের সাথে নিহত শহীদের মর্যাদার চেয়ে কম হবে না ইনশা'আল্লাহ।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ