আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
728 views
in সালাত(Prayer) by (51 points)
আসসালামু আলাইকুম,
সালাতে সূরা ফাতিহা এর পরে কিরাতের পরিমাণ

বড় আয়াত হলে এক আয়াত ই যথেষ্ট আর ছোট আয়াত হলে তিন আয়াত।   এটা ছোটোকালে শিখেছিলাম। কিন্তু অনেক সময় ইমাম 2 আয়াত পড়ে থাকেন।

 আবার কিছুদিন আগে এক বইয়ে পড়েছি  ন্যুনতম  ১৮ অক্ষর পরিমাণ পড়া সুন্নাহ।
এ ব্যাপারে এক্টু বিস্তারিত জানতে চাচ্ছিলাম

1 Answer

+1 vote
by (573,870 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো সর্বনিম্ন একটি বড় আয়াত বা তিনটি ছোট আয়াত সুরা ফাতেহার সাথে পড়ে নিলেই নামাযের কেরাতের ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যায়।
নামায বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
তবে সেটা সুন্নাতের খেলাফ হবে।
,
আদ্দুররুল মুখতার এবং ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ      
وضم أقصر سورة کالکوثر أو ما قام مقامھا وھو ثلاث آیات قصار نحو ثُمَّ نَظَرَ․ ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ․ ثُمَّ اَدْبَرَ وَاسْتَکْبَرَ․ وکذا لو کانت الآیة أو الآیتان تعدل ثلاثًا قصارًا، وفي الشامیة: وھی ثلاثون حرفاً، فلو قرأ آیة طویلة قدر ثلاثین حرفا یکون قد أتی بقدر ثلاث آیات

সুরা ফাতেহার সাথে ছোট তিন আয়াত ثمَّ نَظَرَ․ ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ․ ثُمَّ اَدْبَرَ وَاسْتَکْبَرَ․ বা এই পরিমান এক আয়াত হলেও নামাজ হয়ে যাবে।
কেহ যদি বড় আয়াত ৩০ হরফ (অক্ষর) সমপরিমাণ তেলাওয়াত করে,তাহলে তার কিরাআতের ফরযিয়্যাত আদায় হয়ে যাবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
★আমর ইবনে মাইমুন রাহ. বলেন-
صَلّى بِنَا عُمَرُ الْفَجْرَ فِي السّفَرِ، فَقَرَأ بِـ: قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، و قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ.
হযরত উমর রা. সফরের সময় আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামাযে তিনি قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ (সূরা কাফিরূন) এবং قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ (সূরা ইখলাস) তিলাওয়াত করলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৩৩, ২৭৩৫

অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত উমর রা. সফরের সময় ফজরের নামাযে সূরা ‘ফীল’ ও সূরা ‘কুরাইশ’ তিলাওয়াত করেছেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৩৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০২

★আবু ওয়া’ইল রাহ. বলেন-
صَلّى بِنَا ابْنُ مَسْعُودٍ الْفَجْرَ فِي السّفَرِ، فَقَرَأ بِآخِرِ بَنِي إِسْرَائِيلَ: الْحَمْدُ لِلهِ الّذي لَمْ يَتّخِذْ وَلَدًا، ثُمّ رَكَعَ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সফরে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামাযে তিনি সূরা ‘বানী ইসরাঈল’-এর শেষ আয়াত  الْحَمْدُ لِلهِ الَّذي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا তিলাওয়াত করলেন। এরপর রুকুতে চলে গেলেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৬

★ইবরাহীম নাখাঈ রাহ. বলেন-
كَانَ أصْحَابُ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم يَقْرَؤُوْنَ فِي السّفَرِ بِالسّوَرِ القِصَارِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ সফরে ছোট ছোট সূরা তিলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৭০৪

★আমর ইবনে মাইমূন রাহ. বলেন-
أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ لَمّا طُعِنَ، قَدّمُوا عَبْدَ الرّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ، صَلّى بِهمُ الْفَجْرَ، فَقَرَأَ: إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ، وَ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ.
হযরত উমর রা. যখন আহত হলেন, তখন তারা হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. কে আগে বাড়িয়ে দিলেন। তিনি ফজরের নামায পড়ালেন। নামাযে তিনি إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللهِ (সূরা নাছ্র) এবং إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ (সূরা কাউসার) তিলাওয়াত করলেন। -সুনানে বাইহাকী খ. ২ পৃ. ৩৯০; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২৭৪০
এখানে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. ফজরের  কেরাত সংক্ষিপ্ত করেছেন।

এসব বর্ণনা থেকে একথা প্রমাণিত হল যে, বিশেষ কোনো অবস্থার প্রেক্ষাপটে ফজর বা অন্য যেকোনো নামাযে ছোট ছোট সূরা পড়া হলে কোনো সমস্যা নেই।
সুতরাং সেটাকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন যে ছোট তিন আয়াত,আর বড় এক আয়াত,যেটা ৩০ হরফ সম্বলিত হবে,তাহলেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে।  
,
তবে বিশেষ প্রয়োজন ব্যাতিত এই রকম তেলাওয়াত করা ঠিক নয়।
এইরকম তেলাওয়াত করলে মাসনুন কেরাত হবেনা।
    
★ফরয নামাযে সুন্নত কেরাতের পরিমাণ কতটুকু এবং কোন্ নামাযে কোন্ সূরা তিলাওয়াত করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের আমল হিসেবে প্রমাণিত।
ফজর,জোহর নামাজে তেওয়ালে মুফাসসাল পড়তে হয়,আছর আর মাগরীবে আওছাতে মুফাসসল পড়তে হয়,আর মাগরীব নামাজে কিসারে মুফাসসল পড়তে হয়।

তিওয়ালে মুফাসসাল, আওসাতে মুফাসসাল ও  কিসারে মুফাসসাল। 
সূরা হুজুরাত থেকে সূরা اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّت পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’। 

সূরা বুরূজ থেকে সূরা ক্বাদ্র পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ 

এবং  সূরা বায়্যিনাহ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাগুলি হচ্ছে ‘কিসারে মুফাসসাল’। 

-মানাহিলুল ইরফান ফী উলূমিল কুরআন খ. ১ পৃ. ২৮৭;  আলবাহরুর রায়েক খ. ১ পৃ. ৫৯৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া খ. ১ পৃ. ৭৭; হাশিয়া ইবনে আবিদীন খ. ৩ পৃ. ৪৫৮-৪৬০; সি‘আয়াহ খ. ২ পৃ. ২৮৬

ইবনে উসমান রাহ. শারীক ইবনে আবী নামির রাহ. থেকে বর্ণনা করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: مَا صَلّيْتُ وَرَاءَ أَحَدٍ أَشْبَهَ صَلَاةً بِرَسُولِ اللهِ صلّى الله عليه وسلم مِنْ هَذَا الْفَتَى، يَعْنِي: عُمَرَ بْنَ عَبْدِالْعَزِيزِ. قَالَ الضّحّاكُ: فَكُنْتُ أُصَلِّي وَرَاءَهُ، فَيُطِيلُ الْأَوّلَتَيْنِ مِنَ الظّهْرِ، وَيُخَفِّفُ الْآخِرَتَيْنِ، وَيُخِفّ الْعَصْرَ، وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ بِوَسَطِ الْمُفَصّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الصّبْحِ بِطِوَالِ الْمُفَصّلِ.
হযরত আনাস রা. উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এর ব্যাপারে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সদৃশ নামায আদায় করার ক্ষেত্রে এই যুবক থেকে অগ্রগামী আর কারো পিছনে নামায পড়িনি।
যাহহাক রাহ. বলেন, আমি উমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ.-এর পিছনে নামায পড়তাম। তিনি যোহরের প্রথম দুই রাকাত দীর্ঘ করতেন এবং শেষের দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আসরের নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। মাগরিবের নামাযে ‘কিসারে মুফাসসাল’ পড়তেন। ইশার নামাযে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ পড়তেন। ফজরের নামাযে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ পড়তেন। -তাবাকাতে ইবনে সা‘দ খ. ৫ পৃ. ১৬১-১৬২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩৬৬

 সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রাহ. বলেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّهُ قَالَ: مَا رَأَيْتُ رَجُلًا أَشْبَهَ صَلَاةً بِرَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مِنْ فُلَانٍ، لِإِمَامٍ كَانَ بِالْمَدِينَةِ، قَالَ سُلَيْمَانُ بْنُ يَسَارٍ: فَصَلّيْتُ خَلْفَهُ، فَكَانَ يُطِيلُ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الظّهْرِ، وَيُخَفِّفُ الْأُخْرَيَيْنِ، وَيُخَفِّفُ الْعَصْرَ، وَيَقْرَأُ فِي الْأُولَيَيْنِ مِنَ الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الْأُولَيَيْنِ مِنَ الْعِشَاءِ مِنْ وَسَطِ الْمُفَصّلِ، وَيَقْرَأُ فِي الْغَدَاةِ بِطِوَالِ الْمُفَصّلِ.
হযরত আবু হুরাইরা রা. মদীনার এক আমীর স¤পর্কে বললেন, আমি তার থেকে অধিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সদৃশ নামায আদায়কারী আর কাউকে দেখিনি।
সুলাইমান ইবনে ইয়াসার রাহ. বলেন, আমি ঐ আমীরের পিছনে নামায পড়েছি। তিনি যোহরের প্রথম দুই রাকাত দীর্ঘ করতেন এবং শেষের দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আসরের নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। মাগরিবের প্রথম দুই রাকাতে ‘কিসারে মুফাসসাল’ পড়তেন। ইশার প্রথম দুই রাকাতে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ পড়তেন। ফজরের নামাযে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ পড়তেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩৬৬, ৭৯৯১; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৯৮২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ৫২০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৮৩৭; শারহু মা‘আনিল আসার, হাদীস ১২৭৯, ১২৮০

★উল্লেখ্য, এই বিষয়গুলো পেশ করার উদ্দেশ্য এই নামাজ গুলোতে অন্যান্য সুরা পড়তে অনুৎসাহিত করা নয়; বরং শুধু এতটুকু বলা যে, যদি এই নামাজ গুলোতে আওসাতে মুফাসসাল,তেওয়ালে মুফাসসাল,কিসারে মুফাসসাল থেকে বা তার সমপরিমাণ পড়া হয় তাহলে এটাকে সুন্নত পরিপন্থী বা সুন্নতের লঙ্ঘন বলা যাবে না। কারণ এটাও  মাসনূন কেরাতের শামিল। দেখুন, ইলাউস সুনান ৪/২১,৩১


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...