আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
260 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ

আমি বাংলাদেশের সুনামধন্য এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ রসায়ন এ চান্স পেয়েছিলাম আরো দুই বছর আগে‌।যেদিন প্রথম পা রাখি ক্লাসে এতো ছেলে দেখে আমি তখনি বুঝি এখানে আমি থাকতে পারবোনা।আল্লাহর রহমত এরপর পর ই করোনা শুরু।যা আমার জন্য রহমত ছিলো ছুটি টা।আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার বাসায় তা জানেনা।আমি ভার্সিটিতে গিয়ে কমনরুমে বসে থাকি।মেয়েরা যেখানে থাকে।সেখানে ইসলামি বই পড়ি।আরবি ভাষা ক্লাস করি। কুরআন পড়ি।এরকম।ফাইনাল পরিক্ষা হয়েছিলো।আমি একদম না পড়েই পরিক্ষা দিয়েছিলাম।ল্যাব ভাইভা কিছুই দেইনি। আলহামদুলিল্লাহ। রেজাল্ট এ আমার নাম ও নেই যেহেতু আমি পরিক্ষা দেইনি কিছু।আমার বাসায় এসব জানেনা।আমাকে রেজাল্ট এর কথা জিজ্ঞেস করে।আমি কিছু বলতে পারিনা।আমি যদি বাসায় বলি তাহলে আমাকে সাপোর্ট দেয়ার কেউ নেই।বুঝার কেউ নেই।অনেক অনেক অনেক বেশি জামেলা করবে।আমি জানি আপনারা হয়তো বলবেন আপনি কষ্ট হলেও পড়ে যান।উস্তাদ যারা যায় তারা জানে সেখানে পর্দা করে গেলেও ফিতনার ছোয়া লাগেই। দৃষ্টি র হিফাজত করা কতটা কঠিন আমি ক্লাস করে বুঝেছি।আমি আমার ইমানকে কোনোভাবেই রিস্ক এ ফেলতে পারবোনা। কিন্তু আপাতত বাসায় আমাকে এভাবে মেনে নেবে না।আমি তাও ঐ পরিবেশে পড়তে পারবোনা।আমি কি এখন তাদের মিথ্যা বলতে পারবো? রেজাল্ট নিয়ে?যে রেজাল্ট দিয়েছে।আর আমি এতো পেয়েছি। নূন্যতম একটা সিজি বলতে পারবো?তাহলে হয়তো আরো এক বছর আমাকে তারা পেরেশান করবেনা।আমার বাসায় একটা লোক ও আমাকে বুঝার সাপোর্ট দেয়ার মতো থাকলে আমি এ প্রশ্ন করতাম না।বাসায় বলে দিতাম।আমি জানি আমাকে কেউ সাপোর্ট করবেনা।অনেক ঝামেলা করবে।উস্তাদ আমি জানি ঐ পরিবেশে ইমান টিকানো কতটা মুশকিল।পর্দা করলেও ফিতষার পরিবেশে ফোটা লাগবেঈইই।এটা আমি জানি বুঝি।তাই প্লিজ আমার অবস্থা বুঝে আমাকে নাসিহা দিন।আমি দুআ করে যাচ্ছি একজন সাপোর্ট যেনো আমার রব পাঠিয়ে দেন। আমার বিশ্বাস সাহায্য আসবেই।ততদিন আমি কি করতে পারি উস্তাদ?আমি নিজেই হিফয করছি আলহামদুলিল্লাহ।আরবি ভাষাও শিখছি এক জায়গায়।আমি আমার জীবন রবের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছি।আমার কাছে আমার ইমান সবচেয়ে দামি।ঐ পরিবেশে যাওয়া অসম্ভব। আমাকে নাসিহা করুন উস্তাদ! ধৈর্য ধরে আছি।সাহায্য নিকটে আমি জানি।ততদিন কি করতে পারি?আমি কি তাদের মিথ্যা বলবো?যাতে আরো কতমাস আমাকে এসব প্রশ্ন না করে?

1 Answer

0 votes
by (566,400 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। 
নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম। 
শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে।
যদিও শরয়ী কিছু ওযরের কারনে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে তা বৈধ। 
তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে সত্য বলাই শরিয়তের মৌল দর্শনের দাবি।

পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে   
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١
তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}

হাদিস শরিফে এসেছে,
 সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,

قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )

রসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা বলতে পারে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

আরো জানুনঃ 

https://www.ifatwa.info/644 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ আছে যে,
ইমাম নববী রাহ বলেনঃ
ﻓﻜﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻳﻤﻜﻦ ﺗﺤﺼﻴﻠﻪ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻳﺤﺮﻡ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻓﻴﻪ، ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻤﻜﻦ ﺗﺤﺼﻴﻠﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ ﺟﺎﺯ ﺍﻟﻜﺬﺏ، ﺛﻢ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺗﺤﺼﻴﻞ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻜﺬﺏ ﻭﺍﺟﺒﺎ

প্রত্যেক ঐ প্রশংসনীয় মাকসাদ(উদ্দেশ্য)যাতে মিথ্যা ব্যতীত পৌছা সম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা হারাম।কিন্তু যদি তাতে মিথ্যা ব্যতীত পৌছা সম্ভব না হয়,তাহলে সেথায় মিথ্যা বলা জায়েয। যদি উক্ত মাকসাদ অর্জন করা মুবাহ হয় তাহলে মিথ্যা বলে উক্ত মাকসাদ অর্জন করা মুবাহ।আর যদি মাকসাদ অর্জন করা ওয়াজিব হয় তাহলে মিথ্যা বলে তা অর্জন করা ওয়াজিব।(রিয়াযুস সালেহিন-২৫৯)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা- হাদীসও উলামায়ে কেরামদের সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে আমরা নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।সত্য বলে নিজ মাকসাদকে অর্জন করা ও ক্ষতি থেকে বাচা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত  মিথ্যা বলার কোনো অবকাশ শরীয়তে নেই বরং মিথ্যা বলা হারাম ও জগন্যতম গর্হিত কাজ। কিন্তু চুরান্ত পর্যায়ের অপারগ হয়ে গেলে মিথ্যা বলা জায়েয।এমনকি সময়বেধে ওয়াজিবও হয়ে যায়।

★মিথ্যা বলা হারাম। কবিরা গোনাহ এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে ক্ষেত্রে বিশেষে মিথ্যা বলার সুযোগ রয়েছে। এতে করে গোনাহ হবে না। এর মাঝে একটি হল নিজের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে। নিজেকে জুলুম থেকে বাঁচাতে মিথ্যা বলা জায়েজ আছে।

الْكَذِبُ مُبَاحٌ لِإِحْيَاءِ حَقِّهِ وَدَفْعِ الظُّلْمِ عَنْ نَفْسِهِ وَالْمُرَادُ التَّعْرِيضُ لِأَنَّ عَيْنَ الْكَذِبِ حَرَامٌ (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/612، بزازية على هامش الهندية، كتاب الكراهية، الثالث فيما يتعلق بالمناهى-6/359

সারমর্মঃ

নিজের হক আদায়ের জন্য, জুলুম থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যা বলা জায়েজ। এখানে মিথ্যা দ্বারা  তা'রিজ উদ্দেশ্য, কেননা সরাসরি মিথ্যা হারাম।  

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,

আপনি প্রশ্নে উত্থাপিত পরিস্থিতিতে কষ্ট করে দৃষ্টি নত রেখে পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে আপাতত  শুধু পরীক্ষা গুলোতে উপস্থিত হোন।

যাতে বাবা মাকে মিথ্যা বলতে না হয়,তাদের দেয়া খরচ ইত্যাদি ঠিক ভাবেই ব্যায় হয়।

ফিতনাহ থেকে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে শুধুমাত্র পরীক্ষা দেয়া চালিয়ে যান ।

যদি শতচেষ্টা করার পরও যদি ফিতনাহ থেকে বাঁচতে  না পারেন,চেষ্টার পরেও এভাবে পরীক্ষা দেয়া যদি সম্ভব না হয়,আপনার নিকট মিথ্যা বলা ছাড়া ভিন্ন কোনো রাস্তা না থাকে, তাহলে আপনি ইস্তেগফারের সাথে আপনার বর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...