ইমাম আবু হানিফা রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আল্লাহ কোথায়? তিনি বললেন :
كان الله تعالى ولا مكان، كان قبل أن يخلق الخلق، كان ولم يكن أين ولا خلق ولا شىء، وهو خالق كل شىء
যখন কোনো স্থানই ছিল না, তখনো আল্লাহ ছিলেন। সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে তিনি ছিলেন। তিনি তখনো ছিলেন, যখন ‘কোথায়’ বলার মতো জায়গা ছিল না, কোনো সৃষ্টি ছিল না এবং কোনো বস্তুই ছিল না। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা।
(আল-ফিকহুল আবসাত : ৫৭)
ইমাম আবু হানিফা রহ. আরও বলেন :
نقر بأن الله على العرش استوى من غير أن يكون له حاجة إليه واستقرار عليه وهو الحافظ للعرش وغير العرش، فلو كان محتاجا لما قدر على إيجاد العالم وتدبيره كالمخلوق ولو كان محتاجا إلى الجلوس والقرار فقبل خلق العرش أين كان الله تعالى! تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا.
আমরা স্বীকার করি যে, আল্লাহ তাআলা আরশের ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশের প্রতি কোনো ধরনের প্রয়োজন ও তার ওপর স্থিতিগ্রহণ ব্যতিরেকেই তার ওপর ইসতিওয়া করেছেন। তিনি আরশ ও আরশ ছাড়া অন্য সব সৃষ্টির সংরক্ষণকারী কোনো ধরনের মুখাপেক্ষিতা ব্যতিরেকে। তিনি যদি মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে সৃষ্টিজীবের মতো মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনা করতে সক্ষম হতেন না। তিনি যদি আরশের ওপর সমাসীন হওয়া এবং স্থির হওয়ার দিকে মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে আরশ সৃষ্টির পূর্বে তিনি কোথায় ছিলেন? আল্লাহ এসব বিষয় থেকে সম্পূর্ণ ঊর্ধ্বে।
(আল-ওসিয়্যাহ : ২)
ইমাম ইবনু আবদুস সালাম রহ. ইমাম আবু হানিফা থেকে উদ্ধৃত করেন :
من قال لا أعرف الله تعالى في السماء هو أم في الأرض كفر، لأن هذا القول يوهم أن للحق مكانا ومن توهم أن للحق مكانا فهو مشبه
যে ব্যক্তি বলবে, আমি জানি না, আল্লাহ তাআলা আকাশে আছেন নাকি পৃথিবীতে, সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, এই কথাটি এ সংশয় সৃষ্টি করে যে, আল্লাহ তাআলার জন্য কোনো স্থান রয়েছে। যে ব্যক্তি এ ধারণা রাখবে যে, আল্লাহ জন্য কোনো স্থান রয়েছে, সে একজন মুশাব্বিহা।
(শারহুল ফিকহিল আকবার, মোল্লা আলি কারি)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এ সংক্রান্ত ইমাম আবু হানিফা রহঃ থেকে যে সমস্ত কওল পেয়েছি,তাতে আর্মস বাক্য নেই।
,
এটি এমন কোনো বিষয় নয়,যাহা না জানলে আমাদের ঈমানের কোনো সমস্যা হবে।
সুতরাং আপনার দ্বারা কোন কুফরি হয়নি।
আর এ সংক্রান্ত আলোচনা থেকে হাদীসে নিষেধ এসেছে।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ
তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।
ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}
আরো জানুনঃ
(০৩)
নামাযে রা'কাত বা সেজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে,যে ঐ ব্যক্তির কি এটা প্রথম হয়েছে না মাঝেমধ্যে এমন হয়।যদি প্রথমবার বা কদাচিৎ হয়ে তাহলে উনি আবার প্রথম থেকে শুরু করে নতুনভাবে পড়ে নিবেন।কিন্তু যদি কারো প্রায় এরকম সন্দেহ হয়,তাহলে উনার বিধান হলো,
"وإن كثر الشك" تحرى و "عمل" أي أخذ "بغالب ظنه" لقوله صلى الله عليه وسلم: "إذا شك أحدكم فليتحر الصواب فليتم عليه" وحمل على ما إذا كثر الشك للرواية السابقة "فإن لم يغلب له ظن أخذ بالأقل" لقوله صلى الله عليه وسلم: "إذا سها أحدكم في صلاته فلم يدر واحدة صلى أو اثنتين فليبن على واحدة فإن لم يدر اثنتين صلى أو ثلاثا فليبن على اثنتين فإن لم يدر ثلاثا صلى أو أربعا فليبن على ثلاث ويسجد سجدتين قبل أن يسلم"
যদি কারো নামাযে সংখ্যা নিয়ে প্রায় সন্দেহ হয়,তাহলে উনি তাহাররি(সঠিক বিষয়ে পৌছার জন্য চিন্তাভাবনা করা) করে গালিবে যান্ন(প্রবল ধারণা) এর উপর আ'মল করবেন।কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কেউ নামাযে সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ করে,তাহলে সে যেন সঠিক বিষয়ে পৌছার চেষ্টা করে সে হিসেবে নামাযকে সম্পন্ন করে।তবে যদি চিন্তাভাবনার পরও কোনো সংখ্যার দিকে মনে প্রবল ধারণা না জন্মে, তাহলে সে যেন,কম সংখ্যাকে ধরে নিয়ে সেই হিসেবে নামাযকে সম্পন্ন করে।কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কেউ নামাযে সন্দেহ করে,এক রা'কাত পড়েছে না দুই রা'কাত পড়েছে? তাহলে সে যেন এক রা'কাত ধরে নিয়ে সেই হিসেবে নামাযকে সম্পন্ন করে।এভাবে দুই/তিন বা তিন/চার নিয়ে সন্দেহ হলে কম সংখ্যাকে ধরে নিয়ে সে নামাযকে সম্পন্ন করবে।এবং শেষে যেন সে সেজদায়ে সাহু দেয়।(মারাকিল ফালাহ-১/৪৭৭)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তারপরও আরেকটি সিজদা বা রুকু করে সাহু সিজদাহ দিলে নামাজ হবে।
তবে এভাবে রুকু সেজদাহ করেছেন,বলে জানার পরেও শুধু শুধু সন্দেহ করা,আবারো রুকু সেজদাহ করা ঠিক নয়।
যদি আপনি সাহেবে তারতিব হোন,তাহলে ঐ দিনেই অন্যান্য ফরজ নামাজের আগেই আদায় করতে হবে।