শায়েখ, পশ্চিমা অনেক দায়ি, তথাকথিত শায়েখদের আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা ইসলামিক ফ্লেভারে নারী অধিকার, মুক্তচিন্তা, সাম্যবাদ, ইন্টারফেইথ (সকল ধর্মের একতা), এমনকি সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট, ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অধিকার রক্ষার কথা বলে থাকে। এমনও দেখতে পাচ্ছি যে পশ্চিমা ইমাম পেগানদের (আরবের অগ্নিপুজারিদের অনুরুপ) একটি ধর্মীয় আচারে অংশ নেন এবং তাকে সমালোচনা করা হলে অন্যান্য অনেক শায়েখরাই এই সমালোচনার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদের মত টা হল এমন, ইসলামে সমকামিতা বৈধ না হলেও আমরা সমকামিতায় লিপ্তদের ছোট করে দেখব না, তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করব না (!) এবং তারাও যাতে আমাদের সাথে মিলে মিশে থাকতে পারে সেই প্রচেষ্টা আমরা করব। নামকরা একজন শায়েখ তার মসজিদে এমনকি একটি কনফেরেন্সেরও আয়োজন করে যার বিষয়বস্তু ছিল "সমকামিতা, আমাদের বিশ্বাস ও সব মানুষের সমঅধিকারের সামঞ্জস্যতা"
সাথে ওইদিকের আরও একজন ইমামের বক্তব্য তুলে ধরছি, "মুসলিম হিসেবে আমরা সমকামিতায় লিপ্ত মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী, তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে তবে আমরা নিজেরা তাতে যোগ দেব না"
তাদের শায়েখ-শায়েখা দের সমকামিতায় লিপ্ত মানুষদের সাথে একত্রে আন্দোলন মিছিলেও অংশ নিতে দেখা যায়, তাদের একজনের বক্তব্য, "আমার খুবই ভালো লাগছে যে নিউইয়র্কে ঈদ উদযাপনের পরপরই আমরা সমকামিদের ইভেন্ট দেখতে পাচ্ছি। বন্ধুরা, এই হল আমাদের নিউইয়র্ক শহর! হ্যাঁ দেখে ঈর্ষান্বিত হও"। মানে মুসলিম হয়েও সমকামিতায় লিপ্ত মানুষদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে চলাটাকে যারা বৈধতা দেন না তাদের উদ্দেশ্য করে বলা। এরই সাথে সমকামিদের বিয়ের বৈধতার জন্যও তারা আন্দোলন করছে ওই ঘৃণিত জাতির সাথেই।
কানাডা ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট আছে যার পরিচালক নিজেকে হানাফি বলে দাবি করেন। সেই সাইটে প্রশ্ন উথাপন করা হয় এবং এই ধরণের শায়েখ-শায়েখারা উত্তর দিয়ে থাকেন। তো একটি প্রশ্ন করা হয় যে "ইসলামে যে বহুবিবাহ প্রথা এইটা তো মনে হয় যে জিনার সমতুল্য (নাউযুবিল্লাহ)। ইসলামে বহুবিবাহের প্রথা সম্পর্কে বলুন"। উত্তরে বলা হয়, "ইসলামের সাধারণ নিয়ম হল, বহুবিবাহ হারাম (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক), কারণ এই কাজের সাথে যারা অভ্যস্ত না তাদের ক্ষতির আশংকা আছে।" শায়েখ, জবাবটা কতটুকু সঠিক হল? সাধারণ নিয়ম হারাম??
একই সাইটে আরেকটি প্রশ্ন করা হয় এমন, "আমার স্ত্রী পরপুরুষের (অমুসলিম) সাথে কথপকথনের স্বভাব, আমি জিনার আশংকাও করছি আমার করণীয় কি?" উত্তরে বলা হয়, "আপনার এমন ভাবে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে যাতে সে যৎসামান্য পরিমান কমিয়ে আনে তার এই স্বভাব। তবে সত্যি বলতে আপনি আপনার কাজ ঠিকভাবে করছেন না। আর আপনার স্ত্রী যদি শুধু বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করে তাদের সাথে আলাপচারিতা চালায়, তাতে সমস্যা কি? আপনার এতে ঈর্ষান্বিত হওয়া যাবে না বরং আপনি নিজেকে পরিবর্তন করুন। যতক্ষন পর্যন্ত সে নিজের শরীর পর্দায় রেখে (তাদের পর্দা বলতে শায়েখ মুখ,হাত, পা খোলা রাখা, এটি নিয়েও তাদের বিস্তারিত লেখালেখি আছে যা হানাফি মাজহাব এরই মুতামাদ মতের সাথে অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক) এহেন আলাপচারিতা চালায় তাতে সে খারাপ কিছু করছে না। আরও একটি কারণ হতে পারে যে, আপনি তাকে সময় দিচ্ছেন না তাই সে আকর্ষণটা অন্যভাবে নিচ্ছে।" এভাবে উত্তরে প্রশ্নকর্তা স্বামীকে নিজেকে পরিবর্তন করতে বলা হয়। পরে তিরমিজির রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হয়, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।
শায়েখ, এভাবে একজন স্বামীর গাইরতকে আঘাত করে তাকে এক হিসেবে দায়িউস হতে বলার উত্তরটি কতটুক গ্রহণযোগ্য? প্রশ্নগুলো পয়েন্ট ধরে ধরে করছি কারণ এইসব সাইট, চ্যানেলই বলতে গেলে জেনারেল শিক্ষিতদের দ্বীন বোঝার ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটা হচ্ছে তাদের অনেকের মতেই জাহান্নাম চিরস্থায়ী না এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য। সাথে সাথে কাফির মুশরিকদের তারা জাহান্নামি বলেও আখ্যায়িত করে না, তাদের বিভিন্ন গবেষণা পত্র, লেকচারে এই মত দিয়ে থাকে যে জাহান্নাম চিরস্থায়ী হবে না এটি যুক্তিসঙ্গত, তাই আমরা কাফির মুশরিক এমনকি নাস্তিকদেরও ভালবাসবো। তাদের এক নামকরা শায়েখের উক্তি তুলে ধরছি, "আমার কাছে তো মনে হয় নাস্তিকরা আল্লাহের নিকট আরও বেশি প্রিয় (নাউযুবিল্লাহ!) কারণ তারা আল্লাহের অস্তিত্ব কল্পনাই করতে পারে না এজন্নেই হয়ত আল্লাহ নাজাত দিবেন।"
মুহতারাম, এহেন চিন্তা ভাবনা রাসুল সা এর জীবনী বা সাহাবী রা দের চিন্তা ভাবনায় তো দূরে থাক, পরবর্তী সালফে সালেহিনদের কারো থেকেই তো আমরা পাই না, এসব কাজে লিপ্ত না হওয়া এবং সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করাই তো আমাদের পূর্ববর্তীদের শিক্ষা ছিল, কিন্তু এই শায়েখদের কথার সাথে তো সেই শিক্ষার মিল খুজে পাচ্ছি না, আল ওয়ালা আর বারার শিক্ষাও দেখা যাচ্ছে না, আমার অন্য প্রশ্নতে (
https://ifatwa.info/44986/) যখন রেফরমিসট, মডারেটদের প্রসঙ্গ আনলাম, তখন মুলত এদেরই দিকে ইঙ্গিত করেছিলাম, তাদের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কি হবে উস্তাদ, তাদের এসব মতাদর্শ কি আহলে সুন্নাহের মধ্যে বলা যায়?