আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,123 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
শায়খ,
এক লেকচারে শুনেছি যে সকালের মাসনুন যিকর আযকার গুলো ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে সুর্য উঠার আগ পর্যন্ত করতে হয়, আর বিকালের/সন্ধ্যার যিকর গুলো  আসর থেকে শুরু করে সুর্যাস্তের আগে বা মাগরিবের পর থেকে শুরু করে রাতের এক তৃতীয়াংশের ভিতর পড়ে ফেলতে হয়।
কিন্তু অনেক সময় ফজর পড়তে উঠতে দেরি হয়ে গেলে সুর্যোদয়ের আগে সকালের আযকার গুলো করে শেষ করা হয়না।
সন্ধ্যায় কোনো মেহমান চলে আসলে সন্ধ্যার আযকারটা মিস যায়।যেদিন আযকার মিস যায় সেদিন অন্তরটা খুব কঠিন লাগে, আল্লাহর সাথে দূরত্ব এসে যায়।তাই কোন কারণে যদি সুর্যোদয়ের আগে সকালের আযকারটা, এবংরাতের এক তৃতীয়াংশের আগে সন্ধ্যার আযকারটা করতে না পারি, আর পরে করি তাহলে কি আল্লাহ পাক ফযীলত দিবেন?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। 
সমাধানঃ-
আলহামদুলিল্লাহ।

বিশুদ্ধ মতানুযানী হাদীসে বর্ণিত সকাল-বিকাল এর দু'অায়ে মা'ছুরার জন্য নির্দিষ্ট একটি ওয়াক্ত রয়েছে।
কেননা অসংখ্য হাদীসে সময় উল্লেখপূর্বক এভাবে বর্ণিত রয়েছে,

 ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﻴﻦ ﻳﺼﺒﺢ . ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ، ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﻴﻦ ﻳﻤﺴﻲ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ."
যে ব্যক্তি সকালবেলা এমন এমন বলবে....এবং যে ব্যক্তি বিকালবেলা এমন এমন বলবে...

সকাল এবং বিকাল বেলার শুরু ও শেষ নিয়ে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম মনে করেন, সকালবেলা ত্বুলুয়ে ফযর( ফযরের সূচনা) থেকে শুরু করে সূর্যোদয় পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।তবে কেউ কেউ দ্বিপ্রহর(দিন-১২টা) পর্যন্ত সকালবেলা বিদ্যমান থাকার কথাও বলেছেন।তবে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় মত হল,ত্বুলুয়ে ফযর থেকে নিয়ে সুর্য পূর্ব দিগন্তে উদ্ভাসিত হওয়া(প্রথম প্রহর) পর্যন্ত সকালবেলা অবশিষ্ট থাকে।

অন্যদিকে কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরামের মতে বিকালবেলা- আছর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।তবে কেউ কেউ রাতের এক তৃতায়াংশ পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকার কথা বলেছেন।
আবার কেউ কেউ এমন মাতামতও দিয়েছেন যে, বিকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলো/যিকিরগুলো মূলত মাগরিবের পর থেকে শুরু করা হবে।সম্ভবত সবচেয়ে বিশুদ্ধ কথা হল,
প্রত্যেকের উচিৎ সকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলো ফযরের সুচনা থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর মধ্যকার সময়ের মধ্যেই পড়ে নেয়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ।যদি কারো ছুটে যায়, তাহলে দ্বিপ্রহরের(দিন-১২টা) শেষ সীমা তথা যোহরের নামাযের কিছু পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ে নেবে।

আর বিকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলোকে আছর থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ে নেবে।তবে যদি ছুটে যায়,তাহলে রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময়ের ভিতরেই পড়ে নিবে।
এর প্রমাণ হল,যিকির সম্পর্কে কুরআনের ঐ সমস্ত বাচনভঙ্গি ও প্রয়োগকৃত শব্দাবলী যা দ্বারা বুঝা যায় যে যিকির উপরোক্ত সময়েই পড়তে হবে।
যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ
এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।সূরা মু'মিন-৫৫

উক্ত আয়াতে َﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ দ্বারা দিনের প্রথমাংশ উদ্দেশ্য।এবং ِاﻟْﻌَﺸِﻲِّ দ্বারা দিনের শেষাংশ উদ্দেশ্য।সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,যিকিরের সময় হল,ফযরের সূচনা থেকে এবং আছরের পর থেকে।

ইবনুল-ক্বায়্যিম রাহ. বলেন,
( ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻐُﺮُﻭﺏِ ) ﺳﻮﺭﺓ ﻕّ 39/ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ﺣﻴﻦ ﻳﺼﺒﺢ ، ﻭﺣﻴﻦ ﻳﻤﺴﻲ ، ﺃﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ : ﻗﺒﻞ ﻃﻠﻮﻉ ﺍﻟﺸﻤﺲ ، ﻭﻗﺒﻞ ﻏﺮﻭﺑﻬﺎ ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻞ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻭﻃﻠﻮﻉ ﺍﻟﺸﻤﺲ ، ﻭﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻭﺍﻟﻐﺮﻭﺏ ، ﻭﻗﺎﻝ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ( ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻷِﺑْﻜَﺎﺭِ ) ﻏﺎﻓﺮ 55/ ، ﻭﺍﻹﺑﻜﺎﺭ ﺃﻭﻝ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ، ﻭﺍﻟﻌﺸﻲ ﺁﺧﺮﻩ . ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﺒﺢ ، ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻌﺼﺮ . ﺍ . ﻫـ   ﺍﻟﻮﺍﺑﻞ ﺍﻟﺼﻴﺐ ( 200 ) 

ভাবার্থঃ আল্লাহ তা'আলার বানী

ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻐُﺮُﻭﺏِ
অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।(সূরা ক্বাফ-৩৯)


এ  আয়াতের ঐ সমস্ত হাদীসের ব্যখ্যা যেগুলোতে বর্ণিত রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সকালবেলা এই এই দু'আ পড়বে এবং যে ব্যক্তি বিকালবেলা এই এই দু'আ পড়বে( তাকে এমন এমন প্রতাদান দেয়া হবে।)

সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,হাদীসে বর্ণিত সকালবেলা দ্বারা সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়-ই উদ্দেশ্য।এবং বিকালবেলা দ্বারা সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়-ই উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন,

ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ
এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসা-সহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন। (সূরা মু'মিন-৫৫)


উক্ত আয়াতে َﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ দ্বারা দিনের প্রথমাংশ উদ্দেশ্য।এবং ِاﻟْﻌَﺸِﻲِّ দ্বারা দিনের শেষাংশ উদ্দেশ্য।সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,দু'আয়ে মাছুরার  সময় হল,ফযরের সূচনা থেকে এবং আছরের পর থেকে।
(আল-ওয়াবিলুস-সাঈব-২০০,শরহুল আযকার লি ইবনিল আল্লান-ইমাম নববী-৩/৭৪----১০০)

যেমন হাদীসে কিছু দু'আ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,যে ব্যক্তি সূরা বাক্বারার শেষ দু-আয়াত রাত্রে পড়বে,সেই রাত্রের জন্য এই দু-আয়াত যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী৪০০৮,সহীহ মুসলিম-৮০৭)

প্রকাশ থাকে যে,রাত মাগরিব থেকে শুরু হয়ে ফযরের সূচনার পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উচিৎ যে, সে যেন  প্রত্যেক দু'আ এবং যিকিরকে তার সময়ের ভিতরেই আদায় করে নেয়। 

যদি দু'আয়ে মাছুরা তার নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করে যায়,তাহলে কি পরবর্তীতে সে এগুলোর কাযা করতে পারবে?

শাঈখ উসাঈমিন রাহ. বলেন,দু'আয়ে মা'ছুরা  সমূহকে কেউ ভূলে গেলে যদি  ভিন্ন সময়ে তার কাযা করে নেয় তাহলে  আমি মনে করি যে,সে এর উপর সওয়াব প্রাপ্ত হবে।আমি অধমও মনে করি সে সওয়াব প্রাপ্ত হবে।

বিঃদ্রঃ

প্রকাশ থাকে যে,আমাদের বাংলা সাহিত্য অনুযায়ী প্রত্যেক ৩ ঘন্টাকে এক প্রহর বলা হয়।চায় দিনের হোক বা রাতের হোক।সুতরাং সকাল ৬টা থেকে দিনের প্রহর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত এক দিনে সর্বমোট ৪ টি প্রহর রয়েছে।এভাবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাতের প্রহর শুরু হয়ে ভোর ৬টা পর্যন্ত রাতের সর্বমোট ৪টি প্রহর রয়েছে।এই একই দিন এবং রাতে সর্বমোট ৮টি প্রহর রয়েছে।যাকে অষ্টপ্রহর বলা হয়।অর্থাৎ অষ্টপ্রহর মানে একদিন এবং একরাত।কিন্তু আরব্য সাহিত্য অনুযায়ী ১ প্রহর সামন ৪ ঘন্টা।সে হিসেবে দিনে ৩প্রহর এবং রাতে ৩ প্রহর হয়ে দিনরাতে সর্বমোট ৬ টি প্রহর রয়েছে।তাই আরবী প্রথম প্রহর মানে প্রথম ৪ঘন্টা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...