তাহা যে পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট, সে সম্পর্কে বুঝার জন্য আমরা পুরো বিষয় লক্ষ্য করিঃ
★যারা এই ঘটনা বানিয়েছেন, তাদের দাবী মতে ঘটনাটি হলোঃ
ওয়ালীদ,আ’স,আসওয়াদ ও উমাইয়্যার মতো কুরাইশ নেতৃবর্গ ও গোত্রপতিগণ মহানবী (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে অনুরোধ জানায় যে,মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য উভয় পক্ষই একে অন্যের উপাস্যদেরকে মেনে নেবে। এ সময়ই সূরা আল কাফিরূন তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় এবং মহানবী (সা.) এ ধরনের কথা বলার জন্য আদিষ্ট হন যে,“তোমরা যার ইবাদাত কর,আমি তার ইবাদাত করি না এবং আমিও যাঁর ইবাদাত করি,তোমরা তাঁর ইবাদাতকারী নও।”
এতদ্সত্ত্বেও মহানবী (সা.) কুরাইশদের সাথে একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন;তাই তিনি মনে মনে বলছিলেন,“হায় যদি এমন কোন বিধান অবতীর্ণ হতো যা আমাদের ও কুরাইশদের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনত।”
একদিন তিনি কাবার পাশে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী কণ্ঠে সূরা নাজম তিলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি
) أفرأيتم اللّاتَ والعزّى ومناة الثّالثة الأخرى(
(অতঃপর তোমরা কি লাত,উয্যা এবং অপর তৃতীয় প্রতিমা মানাতকে দেখেছ? অর্থাৎ আমাকে লাত,উয্যা ও মানাত সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে?)-এ দুই আয়াতে (সূরা নাজমের ১৯ ও ২০ আয়াত)
উপনীত হলেন তখন হঠাৎ শয়তান তাঁর (সা.) কণ্ঠে নিম্নোক্ত দু’টি বাক্য উচ্চারিত করায়:
تلك الغرانيق العلى، منها الشّفاعةُ ترتجى
“এগুলো (লাত,উযযা ও মানাত) হচ্ছে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মহান গারানিক, (সুদর্শন যুবক) এদের শাফায়াতই কাম্য।”
(গারানিক (غرانيق ) শব্দটি গিরনাওক (غرنوق ) অথবা গারনিক-এরই বহুবচন যার অর্থ হচ্ছে এক ধরনের গাংচিল অথবা সুদর্শন যুবক।)
এরপর তিনি সূরা নাজমের অবশিষ্ট আয়াতগুলোও তিলাওয়াত করলেন। যখন তিনি সিজদার আয়াতে পৌঁছলেন(فاسجدوا لِلّه واعبدوا -যা হচ্ছে সূরাটির সর্বশেষ আয়াত।) তখন স্বয়ং তিনি,মুসলমান ও মুশরিক নির্বিশেষে সকল উপস্থিত ব্যক্তি প্রতিমাগুলোর সামনে সিজদাহ্ করলেন। কেবল ওয়ালীদ বার্ধক্যজনিত কারণে সিজদা করতে পারে নি।
মসজিদুল হারামে তুমুল হৈ চৈ ও আনন্দের বান বয়ে গেল। আর মুশরিকরা বলতে লাগল : মুহাম্মদ আমাদের উপাস্যদের প্রশংসা এবং সম্মানের সাথে স্মরণ করেছে। কুরাইশদের সাথে মুহাম্মদ (সা.)-এর সন্ধি-চুক্তির খবর হাবাশায় হিজরতকারী মুসলমানদের কানে গিয়েও পৌঁছায়। আর কুরাইশদের সাথে মুহাম্মদ (সা.)-এর সন্ধি ও শান্তি চুক্তি একদল মুহাজির মুসলমানের নিজেদের আবাসস্থল (হাবাশা) থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করার কারণ ছিল। কিন্তু মক্কায় প্রত্যাবর্তন করার পর তাঁরা দেখতে পেলেন যে,অবস্থা পুনরায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং ওহীর ফেরেশতা মহানবীর ওপর অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে পুনরায় মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও জিহাদ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,“এ দু’টি বাক্য শয়তান আপনার কণ্ঠে জারী করেছে। আর আমি কখনই এ ধরনের কথা বলি নি।” আর এতদ্প্রসঙ্গে সূরা হজ্বের ৫২-৫৪ নং আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।
এটিই ছিল গারানিক উপাখ্যান যা তাবারী তাঁর (তারিখে তাবারী,২য় খণ্ড,পৃ. ৭৫-৭৬) তে উল্লেখ করেছেন।
★সূরা হজ্বের ৫২-৫৪ নং আয়াতগুলো হলোঃ-
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ وَّ لَا نَبِیٍّ اِلَّاۤ اِذَا تَمَنّٰۤی اَلۡقَی الشَّیۡطٰنُ فِیۡۤ اُمۡنِیَّتِہٖ ۚ فَیَنۡسَخُ اللّٰہُ مَا یُلۡقِی الشَّیۡطٰنُ ثُمَّ یُحۡکِمُ اللّٰہُ اٰیٰتِہٖ ؕ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ ﴿ۙ۵۲﴾
আর আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি, তাদের কেউ যখনই (ওহীর কিছু) তিলাওয়াত করেছে, তখনই শয়তান তাদের তিলাওয়াতে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। তারপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(সুরা হজ্জ ৫২)
لِّیَجۡعَلَ مَا یُلۡقِی الشَّیۡطٰنُ فِتۡنَۃً لِّلَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ مَّرَضٌ وَّ الۡقَاسِیَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَفِیۡ شِقَاقٍۭ بَعِیۡدٍ ﴿ۙ۵۳﴾
এটা এ জন্য যে, শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি সেটাকে পরীক্ষাস্বরূপ করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে আর যারা পাষাণহৃদয়। আর নিশ্চয় যালেমরা দুস্তর বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে।
(সুরা হজ্জ ৫৩)
وَّ لِیَعۡلَمَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ اَنَّہُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکَ فَیُؤۡمِنُوۡا بِہٖ فَتُخۡبِتَ لَہٗ قُلُوۡبُہُمۡ ؕ وَ اِنَّ اللّٰہَ لَہَادِ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۵۴﴾
আর এ জন্যেও যে, যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা যেন জানতে পারে যে, এটা আপনার রব-এর কাছ থেকে পাঠানো সত্য; ফলে তারা তার উপর ঈমান আনে ও তাদের অন্তর তার প্রতি বিনয়াবনত হয়। আর যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ নিশ্চয় তাদেরকে সরল পথ প্ৰদৰ্শনকারী।
(সুরা হজ্জ ৫৪)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এই ঘটনাটি সম্পুর্ন ভাবে বানোয়াট।
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে মিথ্যার শামিল।
রাসুলুল্লাহ সাঃ কোনোভাবেই মুখ ফসকে হোক আর যেভাবেই হোক,আল্লাহর বানী ব্যাতিত শয়তানের বানী বলতে পারেননা।
পবিত্র কোরআন এ ঘটনাটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়ার জন্য উৎকৃষ্ট সাক্ষী।
কারণ মহান আল্লাহ্ তাঁর নবীকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে,এতে কখনই বাতিল অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।
যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে :
) لا يأتيه الباطلُ من بين يديه ولا من خلفه(
“বাতিল (মিথ্যা) না সামনে থেকে এতে (পবিত্র কোরআনে) আসতে পারবে,না পেছন থেকে।” (সূরা ফুসসিলাত : ৪২)।
পবিত্র কোরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে :
) إنّا نحنُ نزّلنا الذِّكرَ وإنّا له لحافظون(
“নিশ্চয়ই আমরা যিকর (আল-কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর হিফাযতকারী।” (সূরা হিজর : ৯)।
এতদ্সত্ত্বেও মহান আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত (শয়তান) কিভাবে মহান আল্লাহর মনোনীত বান্দার ওপর বিজয়ী হবে এবং তাঁর ওপর অবতীর্ণ কোরআনে বাতিলের অনুপ্রবেশ করাবে?।
আর যে কোরআনের ভিত্তি হচ্ছে মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রাম সে কোরআনটিকেই সে মূর্তিপূজা ও পৌত্তলিকতার প্রচারক বানিয়ে দিয়েছে।
খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে,এ কাহিনী ও উপাখ্যানের রচয়িতা অনুপযুক্ত স্থানে একটি বেমানান গীত তৈরি করেছে এবং এমন এক স্থানে তাওহীদের ওপর অপবাদ আরোপ করেছে যে,অল্প কিছুক্ষণ আগে স্বয়ং কোরআনই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ মহান আল্লাহ্ এ সূরায় এরশাদ করেছেন,
) وما ينطقُ عن الهوى إنْ هو إلّا وحيٌ يوحى(
“তিনি নিজ প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাবশত কথা বলেন না;যা কিছু বলেন তা তাঁর কাছে প্রেরিত ও অবতীর্ণ ওহী।”
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সুতরাং বুঝা গেলো যে এই ঘটনাটি সম্পুর্ন ভাবে বানোয়াট।
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে মিথ্যার শামিল।
রাসুলুল্লাহ সাঃ কোনোভাবেই মুখ ফসকে হোক আর যেভাবেই হোক,আল্লাহর বানী ব্যাতিত শয়তানের বানী বলতেই পারেননা।
এখন আমরা সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো এখানে উল্লেখ করছি এবং বানোয়াট সেই দু’টি বাক্যের স্থানে বিন্দু স্থাপন করছি অর্থাৎ তা খালি রাখছি;এরপর এগুলোর বঙ্গানুবাদ করছি।
আপনারা ভালোভাবে লক্ষ্য করবেন যে,আসলেই কি এ বাক্যদ্বয়
(تلك الغرانيق العلى، منها الشّفاعةُ ترتجى অর্থাৎ এরা হচ্ছে উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন সুন্দর যুবক যাদের কাছ থেকেই কেবল শাফায়াত প্রত্যাশা করা যায়)
এ সব আয়াতের মাঝে স্থান দেয়া যায় যেগুলোয় প্রতিমা ও মূর্তিসমূহের নিন্দা ও ভর্ৎসনা করা হয়েছে?
এগুলো যে স্পষ্ট বানোয়াট, তাহা আয়াত গুলোর মাঝে এই বানোয়াট দুটি বাক্য বসিয়ে তরজমা করলেই স্পষ্ট বুঝা যাবে।
প্রথমেই কুরআনের আয়াত গুলি দেখে নেইঃ
সুরা নাজমের ১৯-২৩ আয়াতঃ
اَفَرَءَیۡتُمُ اللّٰتَ وَ الۡعُزّٰی ﴿ۙ۱۹﴾
অতএব, তোমরা আমাকে জানাও ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্পর্কে।
(সুরা নাজম ১৯)
وَ مَنٰوۃَ الثَّالِثَۃَ الۡاُخۡرٰی ﴿۲۰﴾
এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে?
(সুরা নাজম ২০)
اَلَکُمُ الذَّکَرُ وَ لَہُ الۡاُنۡثٰی ﴿۲۱﴾
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্ৰ সন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান?
(সুরা নাজম ২১)
تِلۡکَ اِذًا قِسۡمَۃٌ ضِیۡزٰی ﴿۲۲﴾
এ রকম বন্টন তো অসঙ্গত।
(সুরা নাজম ২২)
ضيزى শব্দটি ضوز থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ জুলুম করা, অধিকার খর্ব করা, অসংগত কিছু করা। অনেক মুফাসসির এর অর্থ করেছেন নিপীড়নমূলক বণ্টন। অর্থাৎ এসব দেবীদেরকে তোমরা আল্লাহর কন্যা সন্তান বলে ধরে নিয়েছো। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
এ অর্থহীন আকীদা-বিশ্বাস গড়ে নেয়ার সময় তোমরা আদৌ এ চিন্তা করনি যে, মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণকে তোমরা নিজেদের জন্য অপমানকর ও লজ্জাকর মনে করে থাক। তোমরা চাও যেন তোমরা পুত্র সন্তান লাভ কর। কিন্তু যখন আল্লাহর সন্তান আছে বলে ধরে নাও, তখন তাঁর জন্য কন্যা সন্তান বরাদ্দ কর। এটা
কি নিপীড়নমূলক বণ্টন নয়?
اِنۡ ہِیَ اِلَّاۤ اَسۡمَآءٌ سَمَّیۡتُمُوۡہَاۤ اَنۡتُمۡ وَ اٰبَآؤُکُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ بِہَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَہۡوَی الۡاَنۡفُسُ ۚ وَ لَقَدۡ جَآءَہُمۡ مِّنۡ رَّبِّہِمُ الۡہُدٰی ﴿ؕ۲۳﴾
এগুলো কিছু নাম মাত্র যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ্ কোন দলীল-প্রমাণ নাযিল করেননি। তারা তো অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়াত এসেছে।
(সুরা নাজম ২৩)
অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তোমরা তো তাকে গোমরাহী ও কুপথগামিতা বলে আখ্যায়িত করছে। অথচ এ জ্ঞান তাকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ তা’আলা তাকে চাক্ষষভাবে এমন সব সত্য ও বাস্তবতা দেখিয়েছেন যার সাক্ষ্য তিনি তোমাদের সামনে পেশ করছেন। এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে মুশরিক আরবদের তিনজন দেবীর কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যাদেরকে মক্কা, তায়েফ, মদীনা এবং হিজাজের আশে পাশের লোক জন বেশী বেশী পূজা করত।
এ তিনজন দেবীর মধ্যে (লাত) এর আস্তানা ছিল তায়েফে। বনী সাকীফ গোত্র তার পুজারী ছিল। লাত শব্দের অর্থ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।
ইবনে জারীর তাবারীর জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ হচ্ছে। এ শব্দটি আল্লাহ শব্দের স্ত্রীলিংগ। এর অর্থ ঘুরা বা কারো প্রতি বুকে পড়া। মুশরিকরা যেহেতু ইবাদাতের জন্য তার প্রতি মনযোগী হতো, তার সামনে ঝুঁকতো এবং তার তাওয়াফ করতো তাই তাকে ‘লাত’ আখ্যা দেয়া শুরু হলো।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখন দেখে নেই যে সুরা নাজমের উপরোক্ত আয়াত গুলির মাঝে বানোয়াট সেই দুটি বাক্য বসালে কি দাড়ায়.......
এগুলো যে স্পষ্ট বানোয়াট, তাহা তরজমার দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন।
এখানে সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো এখানে উল্লেখ করছি এবং বানোয়াট সেই দু’টি বাক্যের স্থানে বিন্দু স্থাপন করছি অর্থাৎ তা খালি রাখছি; এরপর এগুলোর বঙ্গানুবাদ করছি।
أفرأيتمُ اللّاتَ والعُزّى ومناةَ الثّالثةَ الأخرى ألكمُ الذّكرُ وله الأُنثى تلكَ إذاً قِسْمةٌ ضيزى إنْ هي إلّا أسماءٌ سمَّيتموها أنتم وآباؤكم ما أنزلَ اللهُ بها مِنْ سلطانٍ
“আমাকে লাত,উয্যা ও মানাত যা হচ্ছে তৃতীয় প্রতিমা সে সম্পর্কে বল...
(এ শূন্যস্থানে تلك الغرانيقُ العلى ও منها الشّفاعةُ ترتَجى -এ দু’ বাক্যের অনুবাদ রাখা হলে নিশ্চিতভাবে দেখতে পাবেন যে,এর ফলে তা আদ্যোপান্ত স্ব-বিরোধিতায় পূর্ণ হয়ে যাবে।
অনুবাদ : এগুলো (লাত,উয্যা ও মানাত) হচ্ছে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বলাকা (সুন্দর যুবা);এগুলো থেকে কেবল শাফায়াতই প্রত্যাশা করা যায়।)
পুত্রসন্তান কি তোমাদের এবং কন্যাসন্তান মহান আল্লাহর? (তাহলে) এ তো এক ধরনের অন্যায্য বণ্টন-রীতি। প্রতিমাগুলো নিছক কতগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয় যেগুলো তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষগণই রেখেছ;আর মহান আল্লাহ্ এ ব্যাপারে (এ প্রতিমার ব্যাপারে) কোন স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি?”
★স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে আয়াত গুলির অর্থের মাঝে অর্থের বৈপরিত্ব দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনা বানোয়াট।
(০২)
প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীস ও তার ব্যাখ্যাঃ
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَرَأَ (وَالنَّجْمِ)، فَسَجَدَ فِيهَا وَسَجَدَ مَنْ كَانَ مَعَه غَيْرَ أَنَّ شَيْخًا مِنْ قُرَيْشٍ أَخَذَ كَفًّا مِنْ حَصًى أَوْ تُرَابٍ فَرَفَعَه إِلى جَبْهَتِه وَقَالَ: يَكْفِيْنِىْ هذَا. قَالَ عَبْدُ اللّهِ: فَلَقَدْ رَأَيْتُه بَعْدُ قُتِلَ كَافِرًا. وَزَادَ الْبُخَارِيُّ فِي رِوَايَةٍ: وَهُوَ أُمَيَّةُ بْنُ خَلْفٍ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সূরাহ্ আন্ নাজম’ তিলাওয়াত করলেন এবং তাতে সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। তাঁর কাছে যেসব মানুষ ছিলেন তারাও সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করলো। কিন্তু কুরায়শ বংশের এক বৃদ্ধ পাথর অথবা এক মুষ্টি মাটি নিয়ে নিজের কপালের দিকে উঠাল এবং বলল, আমার জন্যে এটাই যথেষ্ট হবে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) বলেন, আমি এ ঘটনার পর দেখেছি ঐ বৃদ্ধ মানুষটিকে কুফরী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে। (বুখারী, মুসলিম; বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, সে বুড়া লোকটি ছিল উমাইয়্যাহ্ বিন খাল্ফ।)
সহীহ : বুখারী ১০৬৭, ৪৮৬৩, মুসলিম ৫৭৬,মিশকাত ১০৩৭)
ব্যাখ্যা: ‘‘তাঁর সাথে যারা ছিল তারা সবাই সাজদাহ্ করল।’’ অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্বিরাআত (কিরআত) যারা শুনেছে তারা সবাই সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করে। জিন্, ইনসান, মু’মিন ও মুশরিক সকলেই সাজদাতে অংশগ্রহণ করে।
(غَيْرَ أَنَّ شَيْخًا مِنْ قُرَيْشٍ) ‘এক কুরায়শ শায়খ ব্যতীত’ তিনি হলেন উমাইয়্যাহ্ ইবনু খালফ।
সাজদাহর আয়াত পাঠকারীর নিকট উপস্থিত ব্যক্তির তিলাওয়াতের সাজদাহ্ (সিজদা/সেজদা) করা বিধিসিদ্ধ।