উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) যেসব কারণে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা কারো প্রতি রহমাতের দৃষ্টি দিয়ে তাকাবেন না, সেসব কারণগুলোর যথাসম্ভব একটা তালিকাঃ
★যারা পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে,
★যারা দান করে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায়,খোটা দেয়।
★যারা মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।
হাদিস শরিফে এসেছেঃ
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ». قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُو ذرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا ! مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «المُسْبِلُ، وَالمنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكاذِبِ ». رواه مسلم . وفي رواية لَهُ: «المُسْبِلُ إزَارَهُ » .
আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন। আবূ যার্র বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!
তিনি বললেন, (লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে। তাঁর অন্য বর্ণনায় আছে, যে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরে।
[মুসলিম ১০৬,২৯৪, তিরমিযি ১২১১, নাসায়ি ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯, ৫৩৩৩, আবু দাউদ ৪০৮৭, ইবন মাজাহ ২২০৮, আহমদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমি ২৬০৫]
,
★যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ও শপথকে তুচ্ছ বিনিময়ে বিক্রয় করে :
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের কোনো অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুত তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)
,
★পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও বড়ত্ব প্রকাশকারী :
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে অহংকারবশত পোশাক প্রলম্বিত (ও প্রদর্শিত) করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৫৬)
★বৃদ্ধ ব্যভিচারী,
★মিথ্যাবাদী শাসক
★অহংকারী দরিদ্র :
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তারা হলো, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (মুসলিম শরিফ, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নম্বর : ২৯৬)
,
★রুকু ও সিজদার মাঝখানে যারা মেরুদণ্ড সোজা করে না :
ত্বলাক বিন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই নামাজির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে রুকু ও সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫)
★মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান।
★নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী।
★ দাইয়ুস :
আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ধরনের মানুষের দিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। মাতা-পিতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারী নারী এবং দাইয়ুস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে না। মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোঁটাদাতা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নম্বর : ৬১১)
★সমকামী।
★পায়ুপথে সঙ্গম কারী।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, যে ব্যক্তি পুরুষের সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে পায়ুপথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।’ (তিরিমিজি, হাদিস নম্বর : ১১৭৬)
,
★যে মুসাফিরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থেকে বাধা দেয়।
★যে ব্যাক্তি পার্থিব লাভের আশায় কোন মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে বায়আত (অঙ্গীকার) করে।
আবু হুরাইরা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ❝তিন প্রকারের লোকের সাথে মহান আল্লাহ কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন না, না তাদের দিকে তাকাবেন আর না তাদের পবিত্র করবেন; বরং তাদের জন্য রয়েছে শক্ত আযাব। ঐ ব্যক্তি যার নিকট র্নিজন প্রান্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্ত্বেও মুসাফিরকে তা ব্যবহার করা থেকে নিষেধ করে। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে আমার অতিরিক্ত (রহমত) থেকে বঞ্ছিত করবো, যেমন তুমি তোমার বিনা পরিশ্রমে অর্জিত অতিরিক্ত পানি থেকে বঞ্ছিত কেরেছ এবং সেই ব্যক্তি যে আসরের পর কোন ব্যক্তিকে তার সামগ্রী বিক্রয় করে। আল্লাহর কসম খেয়ে বলে আমি এটা এই এই দামে ক্রয় করেছি। ক্রেতা তার কথা সত্য মনে করে তার কাছ থেকে পণ্য খরিদ করে অথচ সে সত্য নয়। আর সেই ব্যক্তি যে কোন মুসলিম ইমামের (রাষ্ট্রপরিচালকের) হাতে কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই বাইআত (অঙ্গীকার) করলো; সে যা চায় যদি তাকে তা দেওয়া হয় তো অঙ্গীকার পূরণ করে, আর না দিলে ভঙ্গ করে❞। [বুখারী, নং ৭২১২/ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, নং২৯৭]
,
(০২) পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যাপারে ইসলামের কিছু নীতিমালা আছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো
★ইসরাফ ও অপচয় থেকে বিরত থাকা উচিত।
‘ইসরাফ’ বা অপচয় সর্বক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। পোষাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও তা প্রযোজ্য। বিলাসিতা বা ফুটানির জন্য কিংবা শুধু শখের বসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোষাক ক্রয় করা অথবা সীমাতিরিক্ত উচ্চমূল্যের পোষাক ক্রয় করা ইসলামে নিষেধ। বিশেষ বিশেষ সময়ে পরিধানের জন্য কিছুটা মূল্যবান পোষাক থাকা দুষণীয় নয়, তবে তা কখনো ইসরাফের আওতাভুক্ত না হওয়া চাই।
তদ্রূপ কৃপণতাও কাম্য নয়। আবুল আহওয়াস তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম। তখন আমার পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোষাক। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম, সবধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন্তউট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার উপর তাঁর নেয়ামতের ছাপ থাকা চাই।’-আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৫৭; নাসাঈ, হাদীস : ৫২৯৪
মোটকথা, অপচয় বা কৃপণতা কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়, প্রয়োজন ও সামর্থ্যের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে লেবাস-পোষাক ব্যবহার করাই ইসলামের নির্দেশনা।
★মানুষকে দেখানোর জন্য বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খুব জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক বা ব্যতিক্রমী পোষাক পরিধান করাও শরীয়তে নিষেধ।
ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির (উদ্দেশ্যে) পোষাক পরিধান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লাঞ্ছনার পোষাক পরিধান করাবেন।-আবু দাউদ,হাদীস : ৪০২৩; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৬০৩/৩৬০৭
,
★পোষাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হওয়া চাই
এটিও নবীজীর নির্দেশ। জাবির রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং এক ব্যক্তির মাথার চুল এলোমেলো দেখলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘এই লোকের কি এমন কিছু নেই, যা দিয়ে সে তার মাথা পরিপাটি করবে?’ অপর এক ব্যক্তিকে ময়লা কাপড় পরিহিত দেখে বললেন, ‘এর কাছে কি এমন কিছু নেই যা দিয়ে তার কাপড় ধৌত করবে।’-আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৫৬
হযরত সাহ্ল ইবনে হানজালিয়া রা. তিনি বলেন, (কোনো এক সফর থেকে ফেরার পথে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে লক্ষ করে ইরশাদ করলেন, তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে আগমন করছ। সুতরাং তোমাদের হাওদাগুলো গুছিয়ে নাও এবং তোমাদের পোষাক পরিপাটি কর। যাতে তোমাদেরকে (সাক্ষাৎ করতে আসা) মানুষের ভিড়ে তিলকের মতো (সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন) মনে হয়। (জেনে রেখো) আল্লাহ তাআলা স্বভাবগত নোংরামি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা থাকা,কোনোটাই পছন্দ করেন না।-আবু দাউদ, হাদীস : ৭০৮৩
রাস্তাঘাটে ও মাজার-দরগায় একশ্রেণীর মানুষ দেখা যায়, যারা অত্যন্ত নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন থাকে,আশ্চর্যের বিষয় এই যে, অনেক সুবেশী ভদ্রলোককে এদের পেছনে ঘুরতে দেখা যায়। বলা বাহুল্য, এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তদ্রূপ কোনো কোনো মানুষ অপরিচ্ছন্ন থাকাকে দ্বীনদারী মনে করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা মানাযির আহসান গীলানী রাহ. বলেন, যেসব লোক (ইসলামের) প্রশংসিত পূর্বপুরুষদেরকে বদনাম করতে বসেছে তাদেরকে সাহস করে একথাটাকে জানিয়ে দিবে যে,এলোমেলো দাড়ি, বিক্ষিপ্ত কেশ আর বেঢংগা লেবাস পোষাককে যে তারা ধর্মীয় সূরত সাব্যস্তকরছেন, ধর্মের সবচেয়ে বড় শিক্ষক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টিতে তা ছিল বেদ্বীনীর আলামত।-ইসলামী মাআশিয়াত ২৩
,
★★সুতরাং কারো বেশি কাপড় থাকা সত্তেও যদি সে বিনয় এবং সাদাসিধে জীবনযাপনের নিয়তে দুই এক কাপড় সর্বদা পড়ে , তবে তা করা যাবে।
তবে শর্ত হলোঃ পোষাক পরিষ্কার ও পরিপাটি হওয়া চাই। প্রয়োজন ও সামর্থ্যের মাঝে ভারসাম্য বজায় রেখে পোশাক পরিধান করতে হবে।
ধনী হওয়া সত্ত্বেও ৬০ টাকা গজের কাপড় পরিধান করা উচিত হবেনা।
,
ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে,তাহলে সুন্নাত আদায় হবে।