আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
285 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (14 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারা কাতুহু শাইখ,আমি আবারও প্রশ্ন করলাম। এই মাসেই ৪ টির বেশি হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করবেন।

১।আজকে আমার এক বান্ধবী আমাকে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছে।আমি জানি তার বাবা পুলিশের চাকরি করতো।এখন করেনা।আমি অনেকদিন আগে শুনেছিলাম যে ওদের ব্যাংকে টাকা আছে। সেটা দিয়ে চলে।কিন্তু ব্যাংক থেকে তো তারা সুদও নিতে পারে।আমি তাদের ইনকাম সম্পর্কে এটাই জানি।এটা মধ্যে হারাম এর পরিমাণ জানি না।হালাল ও জানি না।এখন কি তার দাওয়াত কবুল করা যাবে?আমিতো বলেছি যে যাব।

২।আমি যদি বাবা মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের বাসায় কোনো নাস্তা নিয়ে যাই আর তাদের থেকে খুবই সামান্য পরিমাণ খাবার খাই যার টাকার পরিমাণ আমাদের তরফ থেকে দেয়া নাস্তার টাকার চেয়ে কম বা সমান এবং পুনরায় ঐ পরিমাণ টাকা (বান্ধবীর বাসায় যা খেলাম)সদাকা করে দেই তাহলে কও হবে?

৩।আমি কিভাবে আমার বাবা মাকে বলবো যে আমি যাবো না বুঝতে পারছি না।তারা দ্বীন সম্পর্কে উদাসিন।কিছু বললে সমস্যা হয়ে যেতে পারে।আমাকে উপায় বলে দিন?

৪।আমি না যাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে আমার যেন কোনো অসুখ হয় যেমন জ্বর এবং জ্বর হওয়ার জন্য যদি আমি ঠান্ডা পানি খাই,দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল করি তাহলে কি গুনাহ হবে?

৫।হায়েজ চলাকালীন সময় যদি এক ওয়াক্ত সময় হায়েজ বন্ধ থাকে তাহলে কি সেই ওয়াক্তের নামাজ পরতে হবে নাকি হায়েজ পুরোপুরি চলে যাওয়ার পর নামাজ পড়তে হবে?এই সময় নামাজ পড়ে ফেললে কি করব?

৬।হায়েজ চলাকালীন কিছু সময় হয় না(এক ওয়াক্ত বা তারও কম সময়)।তারপর আবার হয়।এ অবস্থায় কিভাবে বুঝব যে হায়েজ শেষ হয়েছে?

৭।সাহু সিজদায় যদি তাকবির না বলি তাহলে কি নামাজ হবে না?

৮।সাহু সিজদায় ভুল হলে কি করব?

1 Answer

0 votes
by (645,180 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি। (সূরা বাকারাহ -১৭২)

 রাসুলুল্লাহ সাঃ এক লোকের কথা বললেন যে দীর্ঘ সফর করে আসে। এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু‘ হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ারদেগার! ইয়া রব! । কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক- পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দেয়া কি করে কবুল হতে পারে?।  (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ২৩৯৩)

সূরা মুমিনুন-(৫২) এর উক্ত আয়াত বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য।  আল্লাহ তাআলা পয়গম্বরগণকে নিস্পাপ রেখেছিলেন। তঁদেরকেই যখন হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করার এবং সৎকর্ম করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তখন উম্মতের জন্য এই আদেশ আরো পালনীয়।

হাদীসটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায় যে, কিছু কিছু শুভ মুহূর্ত রয়েছে যে সময়কার দুআ আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। দীর্ঘ সফর করে আসা ক্লান্ত শ্রান্ত আলোচ্য ব্যক্তির মধ্যে দুআ কবুল হওয়ার অনেক সবব ও  উপকরণ বিদ্যমান থাকলেও  যেহেতু তার  পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দুআ কবুল হওয়া সুদূর পরাহত।

হাদীসটির একটি ব্যাখ্যা
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহ. তাঁর বিখ্যাত ‘জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম’ গ্রন্থে বলেন-

* وفي هذا الحديث إشارةٌ إلى أنَّه لا يقبل العملُ ولا يزكو إلاَّ بأكل الحلال ، وإنَّ أكل الحرام يفسد العمل ، ويمنع قبولَه ، فإنَّه قال بعد تقريره : (( إنَّ الله لا يقبلُ إلاَّ طيباً )) إنَّ الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين ، فقال : { يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحاً } ، وقال : { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ } .
অর্থাৎ এ হাদীসে এ দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, হালাল ভক্ষণ ব্যতীত আমল গৃহীত হয়না এবং তা পরিশুদ্ধি লাভ করে না। হারাম ভক্ষণ আমলকে বিনষ্ট করে দেয় এবং তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হতে বাধা প্রদান করে। …
ইবন আব্বাস রা.বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. বলেছেনঃ

«كل جسد نبت من سحت فالنار أولى به »

‘‘আর যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে উঠে তার জন্য দোযখের আগুনই উত্তম।’’
(তাবারানী)

কাব ইবন উজরাহ রা. রাসূলে কারীম সা. থেকে বর্ণনা করেন:

«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِحَرَامٍ»

‘‘যে শরীর হারাম পেয়ে হ্রষ্ট পুষ্ট হয়েছে, তা জান্নাতে যাবে না।’’
 মুসনাদ আবী ইয়া‘লা, খ.১ পৃ. ৮৪। 

https://www.ifatwa.info/1900 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে  যে,


فى الفتاوى الهندية- أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن  كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع


যদি এমন কেউ কাউকে কিছু হাদিয়া দেয়,যার অধিকাংশ সম্পত্তি হালাল,তাহলে সেই মালকে গ্রহণ করা নাজায়েয নয়।তবে যদি সে জানতে পারে যে,দাতা হারাম থেকে দিচ্ছে তাহলে এমতাবস্থায় সেটা জায়েয হবে না।আর যদি তার মালের অধিকাংশই হারাম থাকে,তাহলে এমন ব্যক্তির হাদিয়া গ্রহণ জায়েয হবে না।এমন ব্যক্তির ওখানে আহার করাও যাবে না, যতক্ষণ না সে হালাল খাবারের সংবাদ দিচ্ছে বা এটা বলছে যে,সে ধার করে নিয়ে এসে আহার করাচ্ছে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২)

সুতরাং বিত্তশালীর জন্য হারাম মাল থেকে হাদিয়া গ্রহণ কখনো জায়েয হবে না।তবে যাকে হাদিয়া দেয়া হচ্ছে, তিনি যদি এমন মিসকিন হন যে, তার উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ সম্পদ নেই। তাহলে এমন ব্যক্তির জন্য উক্ত হাদিয়া গ্রহণ জায়েয।

হারাম টাকার মূল বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া।
নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء 
معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، 
الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37)

 যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে সে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেবে।যদি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব না হয়,তাহলে গরীবদেরকে সদকাহ করে দেবে।(মা'রিফুস-সুনান১/৩৪) 

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত দাওয়াতে আপনি যেতে পারেন।
কোনো সমস্যা নেই। 
কেননা তার বাবার ব্যাংক একাউন্ট থাকায় তাদের ইনকাম তো হারাম হয়ে যায়নি।
যদি তারা ব্যাংক থেকে সূদ উত্তোলন করেও,তবেও তাহা নিতান্তই কম।
,
তাই তাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়া যাবে।

(০২)
যেহেতু তাদের বাসাতেই দাওয়াত খাওয়া জায়েজ,তাই এটির আর প্রয়োজনীয়তা নেই।

(০৩)
আপনি যান,সমস্যা নেই।

(০৪)
এগুলোর বৈধতা নেই।

(০৫)
না,সেই ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হবেনা।
হায়েজ বন্ধ হলে তার পর থেকে নামাজ আদায় করবেন।

ঐ ওয়াক্তে নামাজ পড়ে থাকলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।

(০৬)
আপনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্ধারন করবেন।
নামাজের শেষ ওয়াক্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

(০৭)
এতেও নামাজ হবে।
তবে সুন্নাহর খেলাফ হবে।

(০৮)
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ  https://ifatwa.info/8245/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...