আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
227 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
বিঃ দ্রঃ এটা এক ভাই এর প্রশ্নঃ

ওমান আর সৌদি আরব পাশাপাশি দেশ কিন্তু সৌদিতে রোযা শুরু হয়েছে একদিন আগে আর ওমানে৷ বাংলাদেশের সাথে

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি সৌদি আরব আর ওমান এক দেশ হত তাহলে ত ওমানে সৌদির সাথেই রোযা শুরু হয়ত
আর এক সময় সৌদি আরব ওমান আলাদাভাবে ছিল না।পুরা এরিয়া জাজিরাতুল আরব নামে পরিচিত ছিল

ঠিক একি ভাবে আফগানিস্তানে চাঁদ দেখা যাওয়াই ইদ শুরু হয়েছে
এই আফগান পাকিস্তান ভারত বাংলাদেশ এগুলা ত একই সাথে ছিল
তাহলে এসব দেশের কোন খানে চাঁদ দেখা গেলে সমগ্র এরিয়া তেই ইদ হওয়ার কথা নয়কি????
মুঘল আমলে ত সব দেশ একি সাথে ছিল তখন ত তারা একই সাথে ইদ করত। তাহলে এখন করলে প্রবলেম কি??!
আমার মতে আফগানিস্তানের সাথে যারা মিল রেখে ইদ করছে তাদের ইদ হয়ে যাবে।

1 Answer

0 votes
by (559,290 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


প্রথমেই একটি হাদীস জেনে নেইঃ
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

তাবেয়ী কুরাইব ইবনে আবী মুসলিম (৯৮ হি.)-কে উম্মুল ফযল বিনতুল হারিছ কোনো কাজে মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে শামে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাজ সমাপ্ত করলেন। ইতিমধ্যে শামে রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখা গেল এবং জুমাবার থেকে রোযা শুরু হল। কুরাইব মাসের শেষের দিকে মদীনায় পৌঁছলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা., যিনি ছিলেন কুরাইবের মাওলা, কথাপ্রসঙ্গে কুরাইবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ কুরাইব বললেন, ‘জুমা-রাতে।’ ইবনে আববাস রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ, আমিও দেখেছি, অন্যরাও দেখেছেন। সবাই রোযা রেখেছেন। মুয়াবিয়া রা.-ও (ঐ সময়ের আমীরুল মুমিনীন) রোযা রেখেছেন।’ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন,

لكنا رأيناه ليلة السبت، فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين، أو نراه

‘কিন্তু আমরা তো শনিবার রাতে (শুক্রবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা আমাদের হিসাবমত ত্রিশ রোযা পুরা করব, তবে যদি (২৯ তারিখ দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখি সেটা আলাদা কথা।’

কুরাইব জিজ্ঞাসা করলেন-

أولا تكتفي برؤية معاوية وصيامه

‘আপনি কি মুয়াবিয়া রা.-এর চাঁদ দেখা ও রোযা রাখাকে যথেষ্ট মনে করবেন না?’

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন-

لا، هكذا أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم

‘না, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ আদেশই করেছেন।’
(সহীহ মুসলিম ১০৮৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৩৩২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৬৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২১১১)

বিস্তারিত জানুনঃ 

অন্য এলাকার হিলাল (চাঁদ) গ্রহণযোগ্য হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানাগুলোই মানদন্ড। 
এটা কেউ বলেনি, বরং নিকট ও দূরের যেই মাপকাঠি ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত হয়েছে, তার বিচারে যেসকল অঞ্চল হিলাল দেখা যাবার স্থান থেকে নিকটে অবস্থিত সেগুলো নিকটবর্তী।

হোক তা অন্য দেশের অন্তর্গত। আর যেসব অঞ্চল হিলাল দৃষ্টিগোচর হবার স্থান থেকে দূরে, সেগুলো দূরবর্তী বলেই গণ্য হবে। যদিও তা এক দেশভুক্ত হয়।

আর সে কারণেই মাসআলা হল, কোনো বড় দেশে উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি শহর এমন হয় যে, একটি একেবারে পূর্ব প্রান্তে আর অন্যটি তার থেকে অনেক দূরে একেবারে পশ্চিম প্রান্তে; এবং শহরদু’টোর উদয়স্থলও সম্পূর্ণ ভিন্ন। তো এক্ষেত্রে মূল বিধান এই যে, পশ্চিমা শহরের হিলাল দেখা মোতাবিক আমল করা পূর্বের শহরের জন্য আবশ্যিক নয়। কিন্তু যদি সরকারপ্রধান কিংবা তার নিযুক্ত করা হিলাল কমিটি একেবারে পশ্চিমে দেখতে পাওয়া হিলালের ভিত্তিতে সমগ্র দেশবাসীর জন্য রোযা কিংবা ঈদের ফায়সালা করে দেন তাহলে এই ফায়সালা গোটা দেশবাসীর জন্য মানা বাধ্যতামূলক। কেননা ‘দূরবর্তী দেখা’ ধর্তব্য হওয়ার ক্ষেত্রেও যেহেতু কোনো কোনো ফকীহের মত রয়েছে, আর জানা কথা যে, সেটাও একটা মুজতাহাদ ফী মত- তাই সরকারপ্রধান কিংবা তার প্রতিনিধি যদি সেই অনুসারে ফায়সালা দিয়ে দেন তাহলে তা অবশ্যপালনীয় হবে। 

এই বিধান ফিক্হশাস্ত্রের ঐ স্বতঃসিদ্ধ নীতির কারণে, যাতে বলা হয়েছে حُكْمُ الحَاكِمِ يَرْفَعُ الخِلَافَ।

এমনিভাবে কোনো অঞ্চল যদি হিলাল দেখা যাবার স্থানের একেবারে কাছে অবস্থিত হয়, কিন্তু হিলাল দেখা যাবার সেই স্থানটি পড়েছে সীমান্তের বাহিরে, তো এমন ক্ষেত্রে শুধু সীমানার বাহিরে হবার কারণে ওখানকার দেখা গ্রহণযোগ্য হবে না- এমন কথা কেউ বলেওনি, আর না বলা সম্ভব। 

বরং মাসআলা এটাই যে, যদি এ ধরনের কাছাকাছি অঞ্চলসমূহ (যেমন ঢাকা ও কলকাতা)-এর সংবাদ কিংবা সাক্ষ্য (যে ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি কাম্য) ‘তরীকে মুজিব’-এর মাধ্যমে হিলাল কমিটির কাছে পৌঁছে এবং পৌঁছার মাধ্যম সম্পর্কে ফিকহ ও ফতোয়ার আলোকে তারা এই মর্মে আশ্বস্ত হন যে, এটা ‘তরীকে মুজিব’ তাহলে হিলাল কমিটি অবশ্যই সে মোতাবেক ফায়সালা করবেন।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো সংবাদ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সংবাদদাতার ব্যক্তিসত্তা ও ন্যায়নিষ্ঠতা সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি তথা পূর্বশর্ত। যদি ফোনে সংবাদ দেয় তাহলে নিশ্চিত হতে হবে এই কন্ঠ তারই। আর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল, সাক্ষী ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির সামনে উপস্থিত হয়ে ঐ সাক্ষ্য প্রদান করা। ফোনে সাক্ষ্য দান করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। শরীয়তে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।

যদি কেউ এ কথা বলতে আরম্ভ করে যে, সৌদির হিলাল কমিটির ফায়সালাই বাংলাদেশীদের জন্য যথেষ্ট- তো এই কথা যেমন শরয়ী বিধানের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি দুনিয়ার সাধারণ আইনেও তা কবুলযোগ্য নয়।

কারণ প্রথম কথা তো হল, সৌদির হিলাল কমিটি যেই জায়গার হিলাল দেখার ভিত্তিতে ফায়সালা করেছে সেটা নিকট ও দূরের সকল মাপকাঠির বিচারেই বাংলাদেশ থেকে দূরে। সেজন্য ওখানকার দেখা বাংলাদেশের জন্য এমনিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দ্বিতীয় কথা, বাংলাদেশের উপর সৌদি হিলাল কমিটির কর্তৃত্ব নেই। সুতরাং এর সিদ্ধান্ত এখানের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা তাদেরও ফতোয়া, যারা উদয়স্থলের ভিন্নতা ধর্তব্য নয় বলে মনে করেন। 

এ কারণেই শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম পরিষ্কার বলেছেন-
“প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তি কি এখানে (পাকিস্তান) সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করতে পারবে? এর উত্তর, এখানে থেকে সৌদি আরবের ফায়সালা অনুযায়ী আমল করা জায়েয হবে না। কেননা সৌদি আরবের ফায়সালার এখানে কর্তৃত্ব নেই।
(ইন্আমুল বারী, বুখারী শরীফের দরস সংকলন, মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী, খ- : ৫, পৃ. ৪৯৭, মাকতাবাতুল হেরা, করাচী)।

এটা তো সর্বস্বীকৃত যে, প্রত্যেক কাযী ও শাসকের ফায়সালা তার এখতিয়ারের গ-িতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। (আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ ওয়ালওলায়াতিদ দীনিয়্যাহ, ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারদী, পৃষ্ঠা : ১৪১-১৪২, অধ্যায় : ৬, পরিচ্ছেদ : ৪; আলআহকামুস সুলতানিয়্যাহ, আল্লামা আবু ইয়ালা, পৃষ্ঠা : ৬৮, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা বৈরুত, ১৪২১হিজরী মোতাবেক ২০০০ঈসায়ী)

কাযীর কর্মপরিধি যে শহর পর্যন্ত আবদ্ধ, তার হিলাল দেখা বিষয়ক ফায়সালা ঐ শহর ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট শহরতলীর যেসব পল্লী রয়েছে সে পর্যন্তই সীমিত থাকবে। অন্য শহর যদি নিকটবর্তী হয় তবু তা তার কর্মপরিধির সীমা বহির্ভূত হওয়ার কারণে তার সিদ্ধান্ত ওখানে সরাসরি কার্যকর হবে না। তবে নিকটতম হওয়ার কারণে ওখানকার কাযী তার উপর নির্ভর করে (যদি তার কাছে এই রায় শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়ে যায়) নিজ কর্মপরিধির ভিতর হিলালের ফায়সালা করে দেবেন। আর যদি দূরবর্তী হয় তাহলে ফায়সালা করবেন না।
দেখুন : ‘আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ, ইমাম আবু বকর মারগীনানী, হেদায়া গ্রন্থকার খ. ২ পৃ. ৪২৩, ৪৩০-৪৩২।
(সংগৃহীত)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত আলোচনা ভালোভাবে পড়লে আপনার যাবতীয় প্রশ্নের জবাব মিলবে,ইনশাআল্লাহ।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (559,290 points)
আরো জানুনঃ 
https://ahlehaqmedia.com/7373/

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...