(০১)
এক দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখার পর কেউ যদি অন্য কোনো দেশে চলে যায়, তাহলে সে ওই দেশের সংখ্যা ও নিয়ম মেনে বাকি রোজা পালন করবে এবং ওই দেশের সময় ও জনসাধারণের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। আর এই স্থান পাল্টানোর কারণে মাঝখান থেকে যে কয়টি রোজা তার কম হবে,সেগুলোকে রমজান মাসের পর কোনো সুবিধাজনক সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে।
কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নিয়ম ও সময় অনুযায়ী চাঁদ দেখে রোজা রাখা শুরু করলেন। ১০টি রোজা রাখার পর কোনো কারণে অন্য দেশে যেতে হলো তাকে। সেখানে গিয়ে দেখলেন, ১২তম রোজা চলছে। তখন তিনি ওই দেশের নিয়ম ও সময় মেনে বাকি রোজা রাখবেন এবং সেখানে থাকলে ঈদ উদযাপন করবেন। এবং যে রোজা তার মাঝখান থেকে কম হলো,রোজার পর সুবিধাজনক কোনো এক সময়ে সেটার কাজা আদায় করে নেবেন।
সে-ক্ষেত্রে যদি সে ২৭ বা ২৮ রোজা পূর্ণ করার পরই তার (সফর করে আসা) দেশে ঈদের চাঁদ ওঠে যায়, তাহলে সে পরবর্তী সময়ে একটি বা দুটি রোজা রেখে ৩০টি পূর্ণ করবে। তবে ওই জায়গায় যদি ২৯ রোজার পরই ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে তাহলে ২৯টি পুরো করলেই চলবে।
আর যে ব্যক্তির রোজা ৩০টি পুরো হয়ে যাওয়ার পরও ওই দেশের মুসলিমদের রমজান মাস পূর্ণ না হয়, তবে সে ওই দেশের লোকজনের সঙ্গে রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত রোজা রেখে যাবে। যাতে রমজানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ না হয়। অতপর সকলের সঙ্গে একত্রে ঈদ করবে।
ফাতওয়ায়ে রহমানিয়া ৫/১৮০-৮১
শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
আমি পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। আমাদের দেশে হিজরি মাস সৌদি আরবের একদিন পর শুরু হয়। রমজান মাসে আমি দেশে যাব। আমি যদি সৌদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি, তাহলে আমার ৩১ দিন রোজা পালন করা হবে। এভাবে আমার সিয়াম পালনের হুকুম কি? আমি কতটি রোজা রাখব?
তিনি উত্তরে বলেন-
“আপনি যদি সৌদি আরব বা অন্য কোন দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন এবং নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনার দেশের লোকদের সাথে সিয়াম ভঙ্গ করবেন তথা ঈদ উদযাপন করবেন; যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(الصوم يوم تصومون،والفطر يوم تفطرون)
“রোজা হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) রোজা পালন কর, আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) ইফতার (রোজা ভঙ্গ) কর।”কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম রোজা পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে১টি রোজা কাযা আদায় করে নিতে হবে। কারণ রমজান মাস২৯দিনের কম হতে পারেনা।” [মাজমূফাতাওয়াশ-শাইখইবনে বায (১৫/১৫৫)]
বিস্তারিত জানুনঃ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কেউ যদি সৌদি আরবে ৩০ তম রোজা রেখে বাংলাদেশে এসে দেখে এরপর দিনও রোজা। তাহলে সে ৩১ টি রোজা রাখার পর ঈদ পালন করবে।
(০২)
তাহলে সে ওখানে ২৮ টি রোজা রেখেই ঈদ পালন করবে।
এক্ষেত্রে অন্য রোজাটি পরে কাযা আদায় করতে হবে।
(০৩)
না,এমনটি হবেনা।
ইসলামী খেলাফত থাকাকালে এক আমীরের নেতৃত্ব থাকার পরেও মুসলিম জাহানে একইদিনে ঈদ হয়নি,এর প্রমান হাদীস শরীফে রয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
তাবেয়ী কুরাইব ইবনে আবী মুসলিম (৯৮ হি.)-কে উম্মুল ফযল বিনতুল হারিছ কোনো কাজে মুয়াবিয়া রা.-এর কাছে শামে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাঁর কাজ সমাপ্ত করলেন। ইতিমধ্যে শামে রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং জুমার রাতে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখা গেল এবং জুমাবার থেকে রোযা শুরু হল। কুরাইব মাসের শেষের দিকে মদীনায় পৌঁছলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা., যিনি ছিলেন কুরাইবের মাওলা, কথাপ্রসঙ্গে কুরাইবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?’ কুরাইব বললেন, ‘জুমা-রাতে।’ ইবনে আববাস রা. জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি নিজে দেখেছ?’ তিনি বললেন, ‘হাঁ, আমিও দেখেছি, অন্যরাও দেখেছেন। সবাই রোযা রেখেছেন। মুয়াবিয়া রা.-ও (ঐ সময়ের আমীরুল মুমিনীন) রোযা রেখেছেন।’ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন,
لكنا رأيناه ليلة السبت، فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين، أو نراه
‘কিন্তু আমরা তো শনিবার রাতে (শুক্রবার দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা আমাদের হিসাবমত ত্রিশ রোযা পুরা করব, তবে যদি (২৯ তারিখ দিবাগত রাতে) চাঁদ দেখি সেটা আলাদা কথা।’
কুরাইব জিজ্ঞাসা করলেন-
أولا تكتفي برؤية معاوية وصيامه
‘আপনি কি মুয়াবিয়া রা.-এর চাঁদ দেখা ও রোযা রাখাকে যথেষ্ট মনে করবেন না?’
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বললেন-
لا، هكذا أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم
‘না, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ আদেশই করেছেন।’
(সহীহ মুসলিম ১০৮৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৩৩২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৬৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২১১১)
বিস্তারিত জানুনঃ