আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
411 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (10 points)
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
ধরুন,,একজনের  কাছে আমার একলক্ষ টাকা ধার হিসেবে পাওনা ছিল। উক্ত টাকা চল্লিশ বছর পর আমি ফেরত পেয়েছি। এমতাবস্থায় যদি এক লক্ষ টাকার বিগত চল্লিশ বছরের যাকাত দিতে হয় তাহলে  একলক্ষ  টাকার যাকাত এক লক্ষ টাকা হয়। যাকাত দিতে গেলে আমার টাকাই থাকছেনা ।ফল দাড়াল কর্জে হাসানা দিতে গিয়ে আমার একলক্ষ টাকা অস্তিত্বহীন হয়ে গেল এমতাবস্থায় আহকাম কি? যাকাত ওয়াজিব হবে নাকি হবে না??

1 Answer

+1 vote
by (565,890 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত। কুরআন মজীদে বহু স্থানে সালাত-যাকাতের আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। 

এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰
 ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। -সূরা বাকারা : ১১০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۵۶
‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’-সূরা নূর : ৫৬

সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲
‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’

অন্য আয়াতে যাকাতের গুরুত্বপূর্ণ সুফল বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَ تُزَكِّیْهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَیْهِمْ ؕ اِنَّ صَلٰوتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیْعٌ عَلِیْمٌ۱۰۳
‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’-সূরা তাওবা : ১০৩
,
শরীয়তের বিধান হলোঃ   
অন্যকে যে টাকা কর্জ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বা ব্যবসায়ী কোনো পণ্য বাকিতে বিক্রয় করেছে এই পাওনা টাকা পৃথকভাবে বা অন্য যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে মিলিতভাবে নিসাব পূর্ণ করলে তারও যাকাত দিতে হবে।
 -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১১-৭১১৩,৭১২১,৭১২৩,৭১২৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৬/৪৮৪-৪৮৬
,
এক্ষেত্রে শরীয়তের নিয়ম হল পাওনা টাকা উসূল হওয়ার পর ওই টাকার যাকাত আদায় করা ফরয হয়। তার আগে আদায় করা জরুরি নয়, তবে আদায় করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৭, ১০৩৫৬
,
★ পাওনা উসূল হতে যদি কয়েক বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে উসুল হওয়ার পর বিগত সকল বছরের যাকাত আদায় করা ফরয হয়। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭১১৬,৭১২৯,৭১৩১; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩৪৬,১০৩৫৬
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার উক্ত টাকার যাকাত দেয়া আবশ্যক। 
বিগত ৪০ বছরের প্রথম বছর থেকে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।
,
প্রথম বছরের ৪০ ভাগের এক ভাগ (শতকরা আড়াই পার্সেন্ট)  আড়াই হাজার টাকা যাকাত দিতে হবে।
অবশিষ্ট যা থাকলো তা থেকে ২য় বছরের ৪০ ভাগের এক ভাগ  (শতকরা আড়াই পার্সেন্ট)  যাকাত দিতে হবে।
,
এক্ষেত্রে হিসেব করতে করতে যখন আপনার টাকা যখন সাড়ে বাহান্ন ভরি রুপার কমে চলে আসবে।
(উদাহরণ স্বরুপ ৪২-৪৫ হাজার টাকা) তারপর থেকে নেসাবের কমে টাকা হওয়া মাত্র আর যাকাত ওয়াজিব হবেনা । 
,
আবার যখন নতুন করে আপনার নেসাব পরিমান টাকা হবে,তখন থেকে  নতুন করে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে।   
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত  একলক্ষ  টাকার যাকাত এক লক্ষ টাকা হবেনা। "যাকাত দিতে গেলে আপনার  টাকাই থাকছেনা" বলাও ছহিহ হবেনা।
আপনার কমপক্ষে ৪২-৪৫ হাজার টাকার মতো (বাজার হিসেবে সাড়ে বাহান্ন তোলার চেয়ে কম টাকা) থাকবেই। 
وأما سائر الديون المقر بها فهي على ثلاث مراتب عند أبي حنيفة – رحمه الله تعالى – ضعيف ، وهو كل دين ملكه بغير فعله لا بدلا عن شيء نحو الميراث أو بفعله لا بدلا عن شيء كالوصية أو بفعله بدلا عما ليس بمال كالمهر وبدل الخلع والصلح عن دم العمد والدية وبدل الكتابة لا زكاة فيه عنده حتى يقبض نصابا ويحول عليه الحول .ووسط ، وهو ما يجب بدلا عن مال ليس للتجارة كعبيد الخدمة وثياب البذلة إذا قبض مائتين زكى لما مضى في رواية الأصل وقوي ، وهو ما يجب بدلا عن سلع التجارة إذا قبض أربعين زكى لما مضى كذا في الزاهدي  (الفتاوى الهندية، كتاب الزكاة، الباب الأول-1/175، البحر الرائق-2/207، النهر الفائق-1/416)
যার সারমর্ম হলোঃ যখন ঐ টাকা তার হস্তগত হবে,তখন তার বিগত বছর গুলোরও যাকাত দিতে হবে।   

وفى الدر المختار: ولو كان الدين على مقر ملئ أو على معسر أو مفلس… او على جاحد عليه بينة….. فوصل الى ملكه لزم زكاة ما مضى، (رد المحتار، كتاب الزكاة-2/266-267
যার সারমর্ম হলোঃ মালিকের কাছে উক্ত টাকা পৌছলে বিগত বছর গুলোরও যাকাত দিতে হবে।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (7 points)
+1
৪২ -৪৫ হাজার টাকা হাতে থাকবে যদি অন্য কোন সম্পদ সহ নেসাব পরিমান না হয় তাহলে, তাই না?

উক্ত ব্যক্তির বছর শেষে ৪২-৪৫ টাকা ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই যা সহ নেসাব পরিমান ক্রস করবে। তাহলে আর যাকাত দেয়া লাগবে না। কিন্তু যদি অন্য সম্পদ থাকে (ধরা যাক আরও ১ লাখ টাকা গহনা আছে যা সে প্রতিবছর যাকাত আদায় করে থাকে) তাহলে ঐ ৪২-৪৫ হাজার টাকারও যাকাত আসবে। (আমি এটাই বুঝলাম। তাই না ওস্তাদ?) 
by (22 points)
জি আমার তাই মনে হয় 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...