আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
235 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (25 points)

আমাদের স্কুলে একটা প্র‍্যাক্টিক্যাল দিয়েছে।

  কালকে জমা সকালে। আমি জানি না যে স্কুল থেকে এমন কোন বিধিনিষেধ দিয়েছে কিনা যে বই থেকে হুবুহু লেখা যাবে না। আমি যদি বই টা প্রথমে পড়ে তারপর লেখা শুরু করি যেটাতে কিছু অংশ নিজের মত হয় আর কিছু অংশ বইয়ের সাথে মিলে যায় আংশিক বা হুবুহু( বই দেখে যদি না লেখলেও এমন হয়) তাহলে সেভাবে করা কি জায়েজ হবে? 

তাড়াতাড়ি উত্তর জানতে চাচ্ছি।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

বর্তমানে আমাদের সমাজে নকল একটি ওপেন সিক্রেট বিষয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অসততা ও দুর্নীতিতে এতটাই কলুষিত যে, নকলের বিরুদ্ধে কথা বলা যেন একটি প্রগলভতা। নকল যে একটি মহা প্রতারণা তা যেন আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তামাথা থেকে সরে গেছে। যার কারণে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একদম প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত চলছে নকল।

যাহোক, এমন একটি হতাশাজনক অবস্থায় নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে নকল করা এবং তাতে সহযোগিতা করার বিধান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

পরীক্ষায় নকল করার বিধান:

পরীক্ষায় নকল করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। চাই তা অন্য কারো দেখে লেখা হোক বা কারো কাছে শুনে লেখা হোক বা গোপনে দেখে দেখে লেখা হোক অথবা এ ক্ষেত্রে অন্য কোন অসদুপায় উপায় অবলম্বন করা হোক। কেননা, এটা প্রতারণা। আর ইসলামে প্রতারণা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلاَحَ فَلَيْسَ مِنَّا ، وَمَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا -رواه مسلم

“যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম)

হাদিস বিশারদগণ বলেছেন, যে কোন কাজে-কর্মে প্রতারণা করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উক্ত হাদিসের আওতাভুক্ত। পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার বিষয়টিও সেগুলোর মধ্যে একটি।

 শাইখ বিন বায. রহ. বলেন:

“পরীক্ষায় নকল করা মানুষের সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার মতই হারাম ও ন্যাক্কার জনক কাজ। বরং সাধারণ লেনদেনের চেয়ে পরীক্ষায় নকল করা বেশি ভয়ানক হতে পারে। কারণে নকলের মাধ্যমে সে হয়ত বড় বড় চাকুরি লাভ করবে। সুতরাং পড়াশোনার সকল ক্ষেত্রে নকলের আশ্রয় নেয়া হারাম। কারণ সহিহ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا

“যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”

তাছাড়া এটি একটি খিয়াতন বা বিশ্বাসঘাতকতা। আর আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা জেনে-শুনে খেয়ানত করো না আল্লাহ ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতের ক্ষেত্রে।” (সূরা আনফাল: ২৭)

সুতরাং শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যক হল, তারা যেন কোন পাঠ্য বিষয়েই নকলের আশ্রয় না নেয় করে বরং তারা যেন প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অধ্যবসা ও পরিশ্রম করে যেন তারা বৈধভাবে উত্তীর্ণ হয়।”

নকলে সহযোগিতার বিধান:

নকল করা যেমন হারাম তেমনি নকলে সহযোগিতা করাও হারাম। ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন নকল করলে গুনাহগার হবে তেমনি পরীক্ষা হলে নিয়োজিত গার্ড, শিক্ষক, পরিদর্শক অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ যদি নকল করতে সহায়তা করে বা নকলের পরিবেশ সৃষ্টি করে তাহলে তারাও গুনাহগার হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তি দাতা।” (সূরা মায়িদা: ২)

সুতরাং পরীক্ষার হলে কেউ যদি আপনার নিকট উত্তর জানতে চায় বা আপনার খাতা দেখে লিখতে চায় তাহলে তাকে সে সুযোগ দেয়া যাবে না। অন্যথায় অন্যায় কাজে সহায়তার কারণে আপনিও গুনাহগার হবেন। তাছাড়া পরীক্ষায় নকলে সহায়তা করা আইনত: দণ্ডনীয় অপরাধ। [পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০ অনুযায়ী, পরীক্ষার হলে নকলের সুনির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে।]

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

আমরা জানি যে, সাধারণত পরীক্ষার মানেই নিজের মেধা খাটিয়ে পরীক্ষা চলাকালীন কোন বই পুস্তকের সাহায্য নেয়া ব্যতীত উত্তর প্রদান করা। বিধায় প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার জন্য করণীয় হলো যে, আপনি কোন বইয়ের সাহায্য নেয়া ছাড়াই প্রাট্টিক্যাল পরীক্ষা দিবেন। এরপরও যদি আপনার উত্তরের আংশিক বা হুবুহু  বইয়ের সাথে মিলে যায় এতে কোন সমস্যা নেই। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...