যদি একই রকমের হাদীসই থাকতো,তাহলে তো ফুকাহায়ে কেরামগন দের মাঝে কোনো মতবিরোধ হতোনা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن وائل بن حجر قال: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه و سلم فلما قرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين قال آمين وأخفى بها صوته.ورواه الترمذى رقم (২৪৮) واحمد فى المسند.رقم (১৮৮৫৪) . ورواه الحاكم فى المستدرك ) ২৯১৩)وقال:هذا حديث صحيح على شرط الشيخين و لم يخرجاه.وقال الذهبى فى التلخيص: على شرط البخاري ومسلم والطيالسى (১০২৪) والدارقطنى ১/৩৩৪ والبيهقى ২/৫৭ والطبرانى فى الكبير ২২/৪৩ رقم(১০৯،১১০،১১২)
অর্থ: ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমাদেরকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়লেন। তিনি যখন غير المغضوب عليهم ولا الضالين পড়লেন, তখন আমীন বললেন এবং আমীন বলার সময় তাঁর আওয়াযকে নিম্ন করলেন। তিরমিযী শরীফ (২৪৯); দারাকুতনী ১ম খ. ৩৩৪পৃ. বায়হাকী, খ.২ পৃ.৫৭।
এ হাদীসকে হাকেম র. সহীহ বলেছেন। যাহাবী র.ও তাঁর সঙ্গে একমত হয়েছেন। ইবনে জারীর তাবারী র.ও এটিকে সহীহ বলেছেন। কাযী ইয়ায র.ও এটিকে সহীহ বলেছেন। (দ্র. শারহুল উব্বী, ৬খ, ৬০৮ পৃ.)
عن سمرة قال : سكتتان حفظتهما عن رسول الله صلى الله عليه و سلم فأنكر ذلك عمران بن حصين وقال حفظنا سكتة فكتبنا إلى أبي بن كعب بالمدينة فكتب أبي أن حفظ سمرة قال سعيد فقلنا لقتادة ما هاتان السكتتان؟ فقال إذا دخل في صلاته وإذا فرغ من القراءة ثم قال بعد ذلك وإذا قرأ ولا الضالين قال. وكان يعجبه إذا فرغ من القراءة أن يسكت حتى يتراد إليه نفسه.اخرجه الترمذى(২৫১) واللفظ له وابوداود (۷۸۰) واحمد ৫/۲۳
অর্থাৎ সামুরা রা. বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি সাকতা (নীরবতা) স্মরণ রেখেছি। ইমরান ইবনে হুসাইন রা. এটা অস্বীকার করলেন। তিনি বললেন, আমরা তো একটি সাকতা স্মরণ রেখেছি। পরে আমরা মদীনায় উবাই ইবনে কা’ব রা. এর নিকট পত্র লিখলাম। তিনি উত্তর লিখে পাঠালেন যে, সামুরা সঠিক স্মরণ রেখেছে। সাঈদ বলেন, আমরা কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ দুটি সাকতা কোথায় কোথায় ছিল? তিনি বললেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করতেন। আর যখন কিরাআত পাঠ সমাপ্ত করতেন। এরপর কাতাদা বলেছেন, যখন ولا الضالين পাঠ শেষ করতেন। তিনি আরো বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পছন্দ ছিল, যখন তিনি কেরাত পাঠ সমাপ্ত করতেন তখন শ্বাস স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নীরব থাকতেন। তিরমিযী (২৫১); আবূ দাউদ (৭৮০); মুসনাদে আহমদ, (৫খ, ২৩ পৃ,)।
★এ হাদীস থেকে বোঝা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দু’সময় নীরব থাকতেন। প্রথম নীরবতা তাকবীরে তাহরীমার পর। এসময় তিনি নিঃশব্দে ছানা পড়তেন। দ্বিতীয় নীরবতা সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর। এ সময় “আমীন” বলতেন। বোঝা গেল আমীন তিনি নিঃশব্দে বলতেন।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ :إِذَا قَالَ الإِمَامُ ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ) فَقُولُوا آمِينَ فَانه مَنْ وَافَقَ قوله قول الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ .ورواه البخارى برقم -৭৮২ باب جهر المأمومين بالتأمين ومسلم )৪১০(
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইমাম যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলে শেষ করবে তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা যে ব্যক্তির আমীন বলা ফেরেশতাগণের আমীন বলার সঙ্গে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। বুখারী শরীফ হাদীস নং ৭৮২; মুসলিম শরীফ হাদীস নং ৪১০
মুসলিম শরীফে আবূ মুসা আশআরী রা. এর বর্ণিত হাদীসেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا قَالَ الإِمَامُ ( غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ ) فَقُولُوا آمِينَ.
অর্থাৎ ইমাম যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলে শেষ করবে, তোমরা তখন আমীন বলবে। (হাদীস নং- ৪০৪)
★এ দুটি হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম আমীন নিঃশব্দে বলবে। অন্যথায় এভাবে বলা হতো না যে, ইমাম যখন غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ বলবে, তোমরা তখন আমীন বলবে। বরং বলা হতো, ইমামকে যখন আমীন বলতে শুনবে তখন তোমরা আমীন বলবে।
★ফেরেশতাদের আমিনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এর কথা উল্লেখ রয়েছে উপরোক্ত হাদীসে।
ফেরেশতাদের আমিনের আওয়াজ যেহেতু শোনা যায়না,তাই মুছল্লিদের আমিনের আমিনের আওয়াজও শোনা না গিয়ে বরং আস্তে আমীন বলা উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যার দ্বারা প্রমানীত হয়।
عن أبي وائل قال كان عمر وعلي رضي الله عنهما لا يجهران ببسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ ولا بالتأمين.رواه الطحاوى فى شرح معانى الآثار ১/১৫০ رقم ১২০৮ قال حدثنا سليمان بن شعيب الكيساني نا علي بن معبد نا أبو بكر بن عياش عن أبي سعيد عنه
অর্থ: আবূ ওয়াইল র. হতে বর্ণিত। উমর রা. ও আলী রা. বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ ও আমীন স্বশব্দে পড়তেন না। (তাহাবী শরীফ ১/১৫০)
عن أبي وائل قال كان علي و ابن مسعود لا يجهران ببسم الله الرحمن الرحيم ولا بالتعوذ ولا بآمين. رواه الطبراني في الكبير-৯৩০৪.وفي هذين الاثرين أبو سعد البقال، قال البخارى فيه مقارب الحديث كما فى علل الترمذى الكبير. وقال الهيثمى فى مجمع الزوائد২/১০৮ وهو ثقة مدلس
অর্থ: আবূ ওয়াইল র. বলেন, আলী ও ইবনে মাসউদ র. বিসমিল্লাহ, আউযুবিল্লাহ ও আমীন স্বশব্দে পড়তেন না। তাবারানী, আল কাবীর (৯৩০৪); মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, (৪১৬০)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
জোড়ে আমীন বলার পক্ষে সহীহ ও ছরিহ তথা স্পষ্ট যেই হাদীস আছে, সেটি শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য ছিলো।
হানাফী স্কলারগন বলেছেনঃ
সুফিয়ান ছাওরীর হাদীসটিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জোরে আমীন বলার যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা ছিল শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে। হযরত ওয়াইল রা. ছিলেন ইয়ামানের নবাব খান্দানের মানুষ। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা শরীফে হাজির হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে নামাযে নিজের পেছনে প্রথম কাতারে জায়াগা করে দেন। যাতে করে তিনি দেখেশুনে নামায শিখতে পারেন। তাঁকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন নামাযে জোরে আমীন বলেছেন। এটা তাঁর সাধারণ নিয়ম ছিল না। সাধারণ নিয়ম হয়ে থাকলে তা শুধু ওয়াইল রা. কেন, অন্যান্য সাহাবীও তা বর্ণনা করতেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
فلما قرأ غيرالمعضوب عليهم ولا الضالين قال آمين، فسمعته وانا خلفه.
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন غيرالمعضوب عليهم ولا الضالين পড়ে শেষ করলেন তখন আমীন বললেন। আমি তাঁর পেছনেই ছিলাম। তাই তা শুনতে পেয়েছি। নাসায়ী (৯৩২), আলকুবরা (১০০৬)। ইমাম দারাকুতনী এই সনদকে সহীহ বলেছেন ১/৩৩৫(৫); তাবারানী ২২/২৩, ইবনে মাজাহ (৮৫৫)।
এ হাদীস থেকেও বোঝা যায়, তাঁকে শেখানোর উদ্দেশ্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন শব্দটি সামান্য জোরে উচ্চারণ করেছিলেন।
অপর বর্ণনায় হযরত ওয়াইল রা. বলেন:
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم حين فرغ من الصلاة حتى رأيت خده من هذا الجانب ومن هذا الجانب. وقرأ غير المغضوب عليهم ولا الضالين، فقال آمين يمد بها صوته ما اراه الا ليعلمنا. رواه أبو بشر الدولابي في الكنى والأسماء. قال النيموى : وفيه يحى بن سلمة ، قواه الحاكم وضعفه جماعة
অর্থ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে সালাম ফেরানোর সময় আমি তাঁর ডান গাল ও বাম গাল দেখেছি। আর তিনি غير المغضوب عليهم ولا الضالين পড়ার পর লম্বা আওয়াযে আমীন বললেন। আমার মনে হলো আমাদেরকে শেখাবার জন্যই তিনি এমন করেছিলেন। (দ্র.হাফেজ আবূবিশর আদ দূলাবী র. রচিত ‘আল কুনা ওয়াল আসমা’, ১ম খ, ১৯৭ পৃ., নং ১০৯০)
হানাফি উলামায়ে কেরামগনদের নিকটে আস্তে আমীন বলার হাদীস বেশি শক্তিশালী আর গ্রহনযোগ্য প্রমানীত হওয়ায় তারা এটিকেই সুন্নাত বলেন।
তবে অন্য মাযহাব ও অন্যান্য বিজ্ঞ ইসলামী স্কলারদের অনুসারীগন তাদের সেই মত অনুসারে আমল করতে পারবেন।