আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
188 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)
শায়েখ,আসসালামু আলাইকুম
আমি গত দুই দিন আগে একটি স্বপ্ন দেখি,এবং এই স্বপ্নটা দেখার পর কেমন যেন মনটা ছটপট করছে

১) আমি ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাই এবং স্বপ্নটা দেখি।আমি আমার বাসায় বসে আছি,হঠাৎ  আমার হাসবেন্ড আসে কোলে একটি বাচ্চা নিয়ে।বাচ্চাটা একটি হাসপাতাল থেকেই নিয়ে আসেন উনি।হাসপাতালটিতে একজন নার্সকে আগে থেকেই বলা ছিল,যেন আমাদের একটি বাচ্চা দত্তক দেয়া হয়।হাসপাতালের নার্স একসময় কল দেয় এবং আমার স্বামী বাচ্চাটিকে নিয়ে আসেন। আমি সোফায় বসে অপেক্ষায় ছিলাম,কখন আমার স্বামী আসবে।একসময় উনি আসে একটা মেয়ে বাচ্চা কোলে নিয়ে।বাচ্চাটির দাম আর সই একরি কাগজে লিখা ছিল।এবং উনি সেটা আমাকে দেখতে বলে।বাচ্চাটি ছিল ঠোঁট কাটা,চোখ ট্যারা।যখনই আমি বাচ্চাটিকে যখন প্রথমবার কোলে নিই আদর করার জন্য,তখন আমার ভয় লাগে বাচ্চাটিকে দেখে,এখন আমি আমার স্বামীকে বলতেছি,বাচ্চাটা দিয়ে আসেন হাসপাতালে।আর আপনি আরেকটি বাচ্চা নিয়ে আসেন।তখন উনি বাচ্চাটা নিয়ে যান,তখন বাচ্চাটার জন্য আমার খুব মায়া হয়।আমি এই জন্য বাচ্চাটা দিয়ে দিচ্ছিলাম করণ,বাচ্চাটা ছিল মেয়ে ওকে বিয়ে দেওয়ার সময় ঝামেলা হতে পারে,আর এত চিকিৎসা ব্যয় বাচ্চাটার অসুস্থতার জন্য হয়তো আমরা তা পারব না।পরে উনি আরেকটা বাচ্চা নিয়ে আসেন, বাচ্চাটি ছিল ছেলে এবং সে ছিল খুবই স্বাস্থ্যবান।আর বাচ্চাটা একটু বড়োসড়ো ছিল।বুদ্ধি হয়েছিল বাচ্চাটার।আর আমীা খুব সুখে দিন কাটাচ্ছিলাম,তখন আবার আমার গ্রামের বাড়ি দেখছিলাম স্বপ্নে ছেলেটির বেলায়( বাচ্চা ছেলেটি যখন বড় হচ্ছে)।একদিন দেখি আমার স্বামী আমার বড় জা এর সাথে কানে কানে ফিস ফিস করে কথা বলতেছে,আমি তা দেখে রেগে যায়,উনাদের ( আমার বড় আর মেজ জা) সামনে থেকে উনাকে রাগি গলায় আমি রুমে ডাকি,বকাঝকা করি।

২) স্বাভাবিক বাস্তব জীবনে আমাদের স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে খুবই মিল আলহামদুলিল্লাহ। তবে শায়েখ মাঝে- মাঝে আমি আর উনার মধ্যে খুব ঝগড়া ( প্রচন্ড খারাপ ঝগড়া )হয়।একপর্যায়ে আমি উনাকে অনেক খারাপ কথা বলি, আমার বড় জা এর সাথে সম্পর্ক আছে বলে।আর আমার বড় জা আমাকে বিভিন্ন ইঙ্গিত ইশারায় বুঝায় যে,আমার স্বামী আমার বিয়ের আগে উনাকে খুব মানত,দেখতে পারত।আমার স্বামী কিছু আচরনেও আমার ওনার প্রতি সন্দেহ জন্মেছে গুরুতর।আমি এ বিষয়ে আমার স্বামীকে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলি।আসলে আমার স্বামী মোটেও এমন না,আমার জা আমাকে খুবই হিংসা করে।আমার জা আমাকে প্রায়সময় এরকম উনার নামে অপবাদ দেয়,আর উনার কথাগুলো শুনার পর আমি আমার স্বামীর সাথে খুব ঝগড়া করি।কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমার স্বামী খুব দ্বীনদার,উনি আমাকে বুঝায় আমার আশেপাশে যে মানুষ গুলো আছে ওনারা ইনসান শয়তান। উনি খুব সহ্য করে আমার কথাগুলো।আমাদের সংসার উনারা ভাঙতে চাই।উনি বলে সবসময় আল্লাহর জিকির কর,আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাও।এ সন্দেহ বিষয় থেকে কিভাবে মুক্তি  পাব?স্বাভাবিক জিবনে কিভাবে ফিরে আসব? আমি প্রায় সময় এ বিষয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় থাকি।আমি স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারছি না,খুব কষ্ট হচ্ছে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়তেছি।
আমি হয়তো সব বিষয় গুছিয়ে বলতে পারছি না,আফওয়ান শাইখ।তবে আমাকে একটু পরামর্শ দেন,আমি কি করব??

1 Answer

0 votes
by (559,290 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
ইসলামী দৃষ্টিতে স্বপ্ন তিন প্রকার। 
,
১. যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহকে দেখানো হয় যা কল্যানকর হয়।

২. শয়তানের পক্ষ হতে দেখানো হয় যাতে মানুষ খারাপ, মন্দ ভয়ংকর কিছু দেখে থাকে।

তবে শয়তান স্বপ্ন দেখানোর দ্বারা মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
,
 ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্যই এমন সব আজব আজব জিনিস দেখায়। এমনটা দেখলে ঘুম থেকে জেগে বাম দিকে থুথু ফেলে আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হয়। 

৩. মানুষের কল্পনা। অর্থাৎ মানুষ যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা দেখতে পায়। 
,

হাদীস শরীফে এসেছে  

خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلميَقُوْلُ الرُّؤْيَا مِنْ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنْ الشَّيْطَانِ فَإِذَا رَأٰى أَحَدُكُمْ شَيْئًا يَكْرَهُه“فَلْيَنْفِثْ حِينَ يَسْتَيْقِظُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ وَيَتَعَوَّذْ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّه“وَقَالَ أَبُو سَلَمَةَ وَإِنْ كُنْتُ لأَرَى الرُّؤْيَا أَثْقَلَ عَلَيَّ مِنَ الْجَبَلِ فَمَا هُوَ إِلاَّ أَنْ سَمِعْتُ هٰذَا الْحَدِيثَ فَمَا أُبَالِيهَا.

আবূ ক্বাতাদাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আর মন্দ স্বপ্ন হয় শয়তানের তরফ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে খারাপ লাগে, তা হলে সে যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন সে যেন তিনবার থুথু ফেলে এবং এর ক্ষতি থেকে আশ্রয় চায়। কেননা, তা হলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। 

আবূ সালামাহ বলেনঃ আমি যখন এমন স্বপ্ন দেখি যা আমার কাছে পাহাড়ের চেয়ে ভারি মনে হয়, তখন এ হাদীস শোনার ফলে আমি তার কোন পরোয়াই করি না। [বুখারী ৫৭৪৭ মুসলিম পর্ব ৪২/হাঃ ২২৬১, আহমাদ ২২৭০৭] 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
এটি কেবল আপনার ধারণা প্রসূত স্বপ্ন।
এটি নিয়ে টেনশনের কিছু নেই।

(০২)

https://www.ifatwa.info/1379 নং ফাতাওয়ায় উল্লেখ রয়েছে  যে,
ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,
ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...
অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়,যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়।সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।
আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা।
(আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
আপনি ওয়াসওয়াসাকে জায়গা দিবেন না।বরং ওয়াসওয়াসা আসলে সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করে নিবেন। 

প্রশ্নে উল্লেখিত ওয়াওয়াসাকে গুরুত্ব দিলেই সমস্যা বাড়বে। এ সমস্যা কোনোভাবেই শেষ হবেনা। তাই এর একমাত্র চিকিৎসা হলো এটিকে উপেক্ষা করে চলা, এটি নিয়ে না ভাবা। মাথায় আসলেই  অন্য মনস্ক হয়ে যাবেন,বা অন্য কাজে লিপ্ত হবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...