(০২)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ- الَّذِينَ هُمْ فِي صَلاَتِهِمْ خَاشِعُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ- إِلاَّ عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ- فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُوْنَ- وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُوْنَ- أُولَئِكَ هُمُ الْوَارِثُوْنَ- الَّذِيْنَ يَرِثُوْنَ
الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُوْنَ-
‘সফলকাম হ’ল ঐসব মুমিন’ (১) ‘যারা তাদের ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’ (২) ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ (৩) ‘যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে’ (৪) ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে’ (৫) ‘নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না’ (৬) ‘অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হ’ল সীমা লংঘনকারী’ (৭) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করে’ (৮) ‘যারা তাদের ছালাত সমূহের হেফাযত করে’ (৯) ‘তারাই হ’ল উত্তরাধিকারী’ (১০) ‘যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (মুমিনূন ২৩/১-১১)।
★‘ অনর্থক কথা ও কাজ এড়িয়ে চলা’।
শিরক ও বিদ‘আতসহ সকল প্রকার পাপের কাজ ও বাজে কথাসমূহ এর মধ্যে শামিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيْهِ ‘মানুষের সুন্দর ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হ’ল অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা’।
★কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য ঐ বস্ত্ত ভালবাসে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে।
(বুখারী হা/১৩।)
★প্রকৃত মুসলমান তো সেই,যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে।
★মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি গুণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ، وَمَنْ كَانَ فِى حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِى حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। (১) সে তার উপর যুলুম করবে না (২) তাকে লজ্জিত করবে না। (৩) আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকবে, আল্লাহ তার সাহায্যে থাকবেন। (৪) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনের বিপদ সমূহের একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’।
(বুখারী, মিশকাত হা/৪৯৫৮ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ’ অনুচ্ছেদ।)
★যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না ও বড়দের মর্যাদা বুঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’
(তিরমিযী হা/১৯২০; আবু দাউদ হা/৪৯৪৩।)
★রাসুলুল্লাহ সাঃ কে নিজের পরিবার,সন্তানাদী, নিজ জীবন চেয়েও বেশি মুহাব্বত করতে হবে।
★আল্লাহ বলেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللهُ إِنَّ اللهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ-
‘(মুনাফিকদের বিপরীতে) মুমিন পুরুষ ও নারীগণ পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এসব লোকদের প্রতি অবশ্যই আল্লাহ অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (তাওবাহ ৯/৭১)।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছসমূহে বর্ণিত সফলকাম মুসলমানদের গুণাবলী নিম্নরূপ :
(১) যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি দ্বিধাহীনচিত্তে বিশ্বাস পোষণ করেন (২) যারা তাদের মাল ও জান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন। (৩) যারা ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী হন (৪) যারা অনর্থক ক্রিয়া-কলাপ হ’তে বিরত থাকেন (৫) যারা নিয়মিত যাকাত দেন (৬) যারা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করেন (৭-৮) যারা আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করেন (৯) যারা তাদের ছালাতের যথাযথ হেফাযত করেন (১০) যারা অন্য মুসলিমের প্রতি যুলুম করেন না (১১) তাকে লজ্জিত করেন না (১২) যারা অন্য মুসলিমের সাহায্যে থাকেন (১৩) যারা অন্যের কষ্ট দূর করেন (১৪) যারা অন্য মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখেন (১৫) যারা ছোটকে স্নেহ করেন ও বড়কে সম্মান করেন (১৬) যারা সৎকাজের আদেশ দেন ও অসৎকাজে নিষেধ করেন।
★আপনি তালিমের পরিবেশ, আমলের পরিবেশ, তেলাওয়াতের পরিবেশ, জিকির-মুরাকাবা, দোয়ার পরিবেশে বেশি বেশি সময় দিবেন।
★আর যখনই নির্জনে থাকবেন, অবসর থাকবেন তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবেন। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই। আর যদি কাজটি হয় ভাল বই পড়া, জিকির-মোরাকাবা করা, তেলাওয়াত করা তাহলে তো সবচে’ ভাল।
★আজে বাজে চিন্তা চলে আসে এমন কাজ ও পরিবেশ–বিশেষত ইন্টারনেটের এডাল্ট কন্টেন্ট থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। গোপন গুনাহর ব্যাপারে আল্লাহকে বেশি ভয় করুন।
★মাঝে মাঝে কবর জেয়ারত করবেন। এর দ্বারা দিল নরম হবে। গুনাহর প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে। আমলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে।
★যদি বিবাহিত হন তাহলে নিয়মিত স্ত্রীসহবাস করুন।