আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
466 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
স্ত্রীর সাথে ফোনে  ঝগড়ার সময় স্ত্রী বলে আমি আপনার  সাথে থাকোবো না, স্বামী বলে যার সাথে খুশি তার সাথে থাক,  যা খুশি তাই কর, যাকে খুশি তাকে বিয়ে  কর,  তুই আমার জীবন থেকে  সর,  তোর মত মেয়ে আমার দরকার নেই। একই সময় সে যখন সরাসরী তালাক চায় স্বামী বলে বাড়িতে গিয়ে দুই পরিবার একত্রে আলাপ - আলোচনা করে সিদ্ধান্ত  নিবে। যদিও তালাকের কোন নিয়তই ছিল না। কিন্তুু স্বামী মনে মনে বলে, আমি কি একে এখনই তালাক দিয়ে দিবো?, বেশি  বাড়াবারি করলে তালাক দিয়ে দিবো। স্বামী জানত না যে এই ধরণের কথা বললেও স্ত্রী তালাক হয়ে যায়। যখন সে জানতে পারল তখন সে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এবং সব সময় তার মনে তালাকের বিষয়টা আসতে থাকে, এমনকি মাঝরাতে যখন তার ঘুম ভেঙ্গে যাই তখনও তার মনে তালাকের বিষয়টা এসে যাই এবং  সে ইউটিউব ও অন্যান্য ওয়েব সাইটে  তালাকের মাসআলা  দেখতে থাকে।  তালাক হয়ে গেছে ভেবে  মাসআলা জানার জন্য কোন ব্যাক্তির নিকট নিমোক্ত প্রশ্নগুলো করে।

১ঃ উদাহরণসরুপ রহিম সাহেব মাসআলা জানার নিয়তে কাউকে প্রশ্ন করে যে আম আমার স্ত্রীকে তিন তা** দিয়েছি, উক্ত বাক্য দ্বারা কি  রহিম সাহেবের স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হবে? যদিও কোন তালাক দেই নায় ।  এভাবে প্রশ্ন করার পর  রহিম সাহেব অনুতপ্ত হয় যে তা এভাবে  প্রশ্ন করাটা ঠিক হয় নি তাই সে তালাক হয়ে গেছে কি না এই নিয়ে অনেক চিন্তিত।
২ঃ ১ নং প্রশ্নটি কি তালাকের  মিথ্যা সিকারোক্তি হিসেবে  গণ্য হবে? না  কি মাসআলা জানার উদ্দেশ্য গণ্য হবে? কোরান সুন্নাহের আলোকে জানতে চাই।
৩ঃ"আমি আপনার সাথে থাকব না" এই বাক্য দ্বারা কি তালাকের আবেদন বুঝাবে? যদি  আবেদন বুঝায় তাহলে উক্ত  কথার পেক্ষিতে কেউ যদি কেনায়া বাক্য ছুড়ে তাহলে কি কোন তালাক পতিত হবে কি না?

৪ঃ ওয়াসওয়াসা গ্রস্ত ব্যাক্তি তালাক  না দিয়েও যদি স্বীকার করে  তাহলে কি কোন তালাক পতিত হবে কি না?

৫ঃপরিকল্পিতভাবে হিল্লা বিয়ে করা বা দেওয়া যাবে কি না? হিল্লা  করানোর পর স্ত্রী কি তার ১ম স্বামীর জন্য হালাল হবে?

৬ঃ বর্তমানে অনেক আলেমগণ হিল্লা বিয়েকে মুতাহ বিয়ের সাথে তুলনা করেন যেহেতু কোন নিদ্দিষ্ট সময়ের জন্য  এই বিয়ে হয়।  তাই হিল্লা করা বা দেওয়া যাবে কি না কোরান সুন্নাহের আলোকে জানতে চাই।  আর করলেও কি স্ত্রী কি তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে কি না  জানতে চাই।
৭ঃ উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর  ভিত্তিতে জানতে চাই  উক্ত ব্যাক্তির স্ত্রী তার জন্য হালাল  আছে কি না?
৮ঃওয়াসওয়াসা ব্যাক্তি তালাক দিলে কি তা কার্যকর হয়?

৯ঃ হুজুর আমি আপনাদের সাথে সরাসরি  কথা বলতে চাই  আপনার ফোন নাম্বার দিলে উপকৃত হব

দয়া করে উত্তর গুলো পয়েন্ট আকারে  দিবেন।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


তালাক খুবই মারাত্মক  একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

★তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় তালাকের ইঙ্গিত সূচক বাক্যে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,নিজের পরিবারে সাথে যুক্ত হও,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

আরো জানুনঃ 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে উপরোক্ত বাক্য বলার ক্ষেত্রে স্বামীর যেহেতু তালাকের নিয়ত ছিলোনা,তাই  তালাক হবেনা।

(০১)
যদি কেহ এভাবে প্রশ্ন করেঃ
"আমি আমার স্ত্রীর উপর তিন তালাক প্রদান করেছি"

তাহলে উপরোক্ত ছুরতে তার স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হবে।


(০২)
হ্যাঁ মিথ্যা স্বীকারোক্তি বলে গন্য হবে।    

হাদীস শরীফে  এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}



ولو أقر بالطلاق وہو کاذب وقع في القضاء … إذا قال: أردت بہ الخبر عن الماضي کذبا، وإن لم یرد بہ الخبر عن الماضی، أو أراد بہ الکذب، أو الہزل وقع قضاء ودیانۃ۔ (البحر الرائق ۳؍ ۲۴۶ کراچی، سکب الأنہر علی ہامش مجمع الأنہر ۲؍۸ بیروت)
সারমর্মঃ
কেহ যদি তালাকের স্বীকারোক্তি প্রদান করে, আর সেই স্বীকারোক্তি যদি মিথ্যা হয়,তবুও তালাক পতিত হবে।   
    
আরো জানুনঃ 

(০৩)
এখানে সাথে থাকবোনা বলতে স্ত্রী কি তালাক উদ্দেশ্য নিয়েছিলো?
আর স্বামীও কি জেনেছে যে এখানে তার স্ত্রী তালাক উদ্দেশ্য নিচ্ছে?

যদি তাই হয়,তাহলে তার প্রেক্ষিতে স্বামী কেনায়া তালাকের বাক্য বললে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।

(০৪)
হ্যাঁ তালাক পতিত হবে।

(০৫)
এতে উভয়েই লা'নত প্রাপ্ত হবে 
তবে এখানে ২য় স্বামীর সাথে সহবাস হওয়ার পর তালাক হলে ইদ্দতের পর ১ম স্বামীর সাথে বিবাহ হলে এই বিবাহ শুদ্ধ হবে।

(০৬)
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ

(০৭)
এখানে তাও অনেক রকমের প্রশ্নই করেছেন,যার অনেক গুলো দিয়েই তালাক হয়।
আপনি কোনো প্রশ্নের আলোকে জানতে চান,স্পষ্ট করুন।

(০৮)
 স্পষ্ট বাক্যে মুখে উচ্চারণ করে তালাক দিলে তাহা কার্যকর হয়। 

(০৯)
ইনবক্সে আসুন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
হুজুর ইনবক্স কিভাবে যাবো?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...