উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) হারাম উপার্জনকারী এবং হারাম ও হালালের মাঝে সংমিশ্রিত উপর্জনকারীর বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার কয়েকটি সূরত হতে পারে। যথা-
১
হারাম উপার্জনকারীর পূর্ণ রোজগারই হারাম। আর লোকটি তার হারাম টাকা দিয়েই দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
২
লোকটির উপার্জন হালাল ও হারামের মাঝে সংমিশ্রিত। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়।
তবে এর মাঝে হারাম উপার্জন বেশি। আর লোকটি মিশ্রিত সে সম্পদ দিয়ে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
৩
দাওয়াতকারীর হালাল উপার্জনও আছে, আবার হারাম উপার্জনও আছে। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে তার হারাম উপার্জন কম। হালাল উপার্জন বেশি। আর লোকটি এ মিশ্রিত সম্পদ দিয়ে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
৪
হারাম উপার্জনকারী হারাম উপার্জন দিয়ে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে না। বরং কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে দাওয়াত খাওয়ায়।
প্রথমোক্ত দুই সূরতে উক্ত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া জায়েজ নয়। আর তৃতীয় সুরতে উক্ত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া জায়েজ হলেও না খাওয়া উত্তম।
আর চতুর্থ সুরতে উক্ত ব্যক্তির বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া জায়েজ আছে।
فى الفتاوى الهندية- أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، كتاب الكراهية-5/342، رد المحتار-6/247)
কেহ যদি কাউকে হাদিয়া দেয়,যদি তার বেশিরভাগ সম্পদ হালাল হয়,তাহলে এই হাদিয়া গ্রহন করতে কোনো সমস্যা নেই।
আর যদি তার অধিকাংশ হারাম হয়,তাহলে সেই হাদিয়া গ্রহন করা যাবেনা।
তার খাবার খাবেনা তবে যদি তাকে খবর দেওয়া জপ্য যে এটা হালাল সম্পদ থেকেই দেওয়া হয়েছে,অথবা কাহারো কাছ থেকে এটা করজ হিসেবে নেওয়া হয়েছে,,তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
,
হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে।
ولا يجوز قبول هدية أمراء الجور لأن الغالب في مالهم الحرمة إلا إذا علم أن أكثر ماله حلال بأن كان صاحب تجارة أو زرع فلا بأس به لأن أموال الناس لا تخلو عن قليل حرام فالمعتبر الغالب (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الثاني عشر في الهدايا والضيافات-5/342)
অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২}
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী।
এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ।
যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া।
কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। {ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬}
,
(০২) মেয়েদের প্রসাধন সামগ্রী,বডি স্প্রে বা পারফিউমে এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় মর্মে শুনা যায়। এক্ষেত্রে মাসআলা হল,
যে সমস্ত এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা বানানো হয়নি, তেমন বস্তু নেশা না আসা পর্যন্তের জন্য ব্যবহার জায়েজ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মতানুসারে। {ফাতহুল কাদীর-৮/১৬০, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৪১২, আল বাহরুর রায়েক-৮/২১৭-২১৮, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৯}
.
والمحرم منها أربعة ) أنواع الأول ( الخمر وهي النيء من ماء العنب إذا غلى واشتد وقذف بالزبد وحرم قليلها وكثيرها ) بالإجماع ( و ) الثاني ( الطلاء وهو العصير يطبخ حتى يذهب أقل من ثلثيه وقيل ما طبخ من ماء العنب حتى ذهب ثلثاه وبقي ثلثه ) وصار مسكرا ( وهو الصواب ونجاسته كالخمر ) به يفتي ( و ) الثالث ( السكروهو النيء ماء الرطب )
( و ) الرابع ( نقيع الزبيب وهو النيء من ماء الزبيب ) بشرط أن يقذف بالزبد بعد الغليان ( والكل ) أي الثلاثة المذكورة ( حرام إذا غلي واشتد ) وإلا لم يحرم اتفاقا وإن قذف حرم اتفاقا وظاهر كلامه فبقية المتون أنه اختار ها هنا قولهما(تنوير الأبصار مع الدر المختار- كتاب الأشربة -2/259
যার সারমর্ম হলো খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা বানানো হলে,বা নেশা তৈরী কারী হলেই কেবল সেটা হারাম হবে।
অন্যথায় নয়।
বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, বর্তমানে এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর থেকে বানানো হয় না। তাই এটি ব্যবহার করা জায়েজ হবে। তবে যদি জানা যায় যে, এসব আঙ্গুর বা খেজুর থেকে বানানো হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
আর হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদির যদি এমনভাবে রিফাইন করা হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব বাকি না থাকে, তাহলেও উক্ত বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ আছে। আর যদি সেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তাহলে উক্ত বস্তু যাতে মিশ্রিত করা হবে, তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। {নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২}
أما (الخمر) إذا خلله بعلاج بالملح أو بغيره يحل عندنا (الفتاوى الهندية،كتاب الأشربة وفيه بابان الباب الأول في تفسير الأشربة والأعيان التي تتخذ منها الأشربة وأسماؤها وماهياتها وأحكامه-5/410
অনুবাদ-
মদকে যখন লবন বা অন্য কিছু দ্বারা সির্কা বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা হালাল হয়ে যায়। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪১০, মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৮}
এ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বুঝে নিন মেয়েদের প্রসাধন সামগ্রী,বিদেশী পণ্য ও বডি স্প্রে, পারফিউম, শেম্পু ইত্যাদি ব্যবহার করার বিধান। যদি ওসব বস্তুুতে খেজুর বা আঙ্গুরের তৈরী এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার জায়েজ নয়। নতুবা তা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে জায়েজ নয়। সম্ভাবনা না হলে জায়েজ।
আর যদি অন্য কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তাকে এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে, আর যদি মৌলিকত্ব বাকি থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
যদি হারাম বস্তু মিশ্রিত করা হল কি না? জানা নেই।
তাহলেও উক্ত প্রসাধন সামগ্রী পারফিউম, বডি স্প্রে ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।
في التتارخانية: من شك في إنائه أو في ثوبه أو بدن أصابته نجاسة أو لا فهو طاهر ما لم يستيقن، وكذا الآبار والحياض والجباب الموضوعة في الطرقات ويستقي منها الصغار والكبار والمسلمون والكفار؛ وكذا ما يتخذه أهل الشرك أو الجهلة من المسلمين كالسمن والخبز والأطعمة والثياب اهـ ملخصا.(رد المحتار، كتاب الطهارة، قبيل مطلب فى ابحاث الغسل-1/283، الفتاوى التاتارخانية، كتاب الطهارة، نوع آخر فى مسائل الشك-1/146، الأشباه والنظائر، القاعدة الثلاثة، اليقين لا يزول بالشك
যার সারমর্ম হলোঃ যদি সন্দেহ থাকে,তাহলে তাহলে সেটাকে পাক বলেই ধরে নিতে হবে।