আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
548 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (25 points)
যতদূর জানি ওলিমা বাসরের পরদিন আয়োজন করতে হয়। প্রশ্ন হল এটি আগে পরে করার সুযোগ আছে কিনা?

১। যেদিন বিয়ে পড়ালো, সেদিনই মানুষকে আপ্যায়ন করল এবং ঐ দিন রাতে বাসর করল। এতে ওলিমা আদায় হবে কিনা?

২। যেদিন বিয়ে পড়ালো, সেদিনই মানুষকে আপ্যায়ন করল  এবং ঐ দিন বউ তুলে আনল না। পরে কোন এক সময় বাসর করল। এতে ওলিমা আদায় হবে কিনা?

৩।  বাসরের পর দিন ওলিমা করল না। পরবর্তীতে করল। সেক্ষেত্রে কতদিন বিলম্বের অবকাশ রয়েছে? যদি ২/ ৩ দিন পর করে, তাহলে ওলিমা আদায় হবে কি? আর যদি অনেক দিন পর যেমন কয়েক মাস পরে করে, সেক্ষেত্রে কী হুকুম?

1 Answer

0 votes
by (566,340 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো বিবাহের পর ওলিমা করা সুন্নাত। 
রুখছতির পর (বাসর রাতের পর) তিন দিনের মধ্যে যেকোনো এক দিন ওলিমা করা সুন্নাত।
(নাজমুল ফাতওয়া ৫/২)

রুখছতি (বাসর রাত) এর পূর্বে ওলিমা করলে সময়ের সুন্নাত আদায় হবেনা।
(নাজমুল ফাতওয়া ৫/৩)
তবে ওলিমার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়ায়ে উসমানী ২/৪০৭)
,
মহিলার সাথে একাকি নির্জনে অবস্থান করার পর ওলিমা করলেও ওলিমার করার সেই সুন্নত সময়,সেই সময়েই ওলিমা আদায় হয়ে যাবে।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে   
فإن الدخول یشمل الخلوۃ أیضًا؛ لأنہا دخول حکمًا۔ (شامي ۴؍۲۳۶ زکریا)
যার সারমর্ম হলো  খুলওয়াতে ছহিহাহও সহবাসের হুকুমেই।
,
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، وَحُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ عَوْفٍ وَعَلَيْهِ رَدْعُ زَعْفَرَانٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَهْيَمْ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً، قَالَ: مَا أَصْدَقْتَهَا؟ قَالَ: وَزْنَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ، قَالَ: أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ صحيح

আনাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাযি.)-এর শরীরে জা‘ফরানের চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এটা কি? তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এক মহিলাকে বিয়ে করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তাকে কি পরিমাণ মোহর প্রদান করেছো? তিনি বলেন, খেজুরের অাঁটির সমপরিমাণ ওজনের স্বর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিবাহভোজের আয়োজন করো, যদিও তা একটি বকরী দ্বারাও হয়।
(আবু দাউদ ২১০৯)

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ ثَابِتٍ، قَالَ: ذُكِرَ تَزْوِيجُ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ عِنْدَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ فَقَالَ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْلَمَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَائِهِ مَا أَوْلَمَ عَلَيْهَا أَوْلَمَ بِشَاةٍ صحيح

সাবিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাইনাব বিনতু জাহশের বিবাহের ঘটনা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট আলাপ করা হলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইনাবের বিয়েতে যেভাবে ওয়ালীমা অনুষ্ঠান করেছেন অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় তাঁকে তদ্রূপ করতে দেখেনি। তিনি একটি বকরী দিয়ে বিবাহ ভোজনের ব্যবস্থা করেছেন।
(আবু দাউদ ৩৭৪৩)
,
★বাসর রাতের পরদিন ওয়ালিমা করা সুন্নাতঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে বাসর রাত অতিবাহিত করার পর ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারী:৫১৭০)
তবে তিন দিন পর্যন্তও বিলম্বিত করা যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাফিয়া (রাঃ) কে বিবাহের পর তিন দিন পর্যন্ত ওয়ালিমা খাইয়ে ছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা:৩৮৩৪)

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ الثَّقَفِيِّ، عَنْ - رَجُلٍ أَعْوَرَ مِنْ ثَقِيفٍ كَانَ يُقَالُ لَهُ مَعْرُوفًا أَيْ يُثْنَى عَلَيْهِ خَيْرًا إِنْ لَمْ يَكُنِ اسْمُهُ - زُهَيْرُ بْنُ عُثْمَانَ فَلَا أَدْرِي مَا اسْمُهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الْوَلِيمَةُ أَوَّلَ يَوْمٍ حَقٌّ، وَالثَّانِيَ مَعْرُوفٌ، وَالْيَوْمَ الثَّالِثَ سُمْعَةٌ وَرِيَاءٌ قَالَ قَتَادَةُ: وَحَدَّثَنِي رَجُلٌ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيِّبِ دُعِيَ أَوَّلَ يَوْمٍ فَأَجَابَ، وَدُعِيَ الْيَوْمَ الثَّانِيَ فَأَجَابَ، وَدُعِيَ الْيَوْمَ الثَّالِثَ فَلَمْ يُجِبْ، وَقَالَ: أَهْلُ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ ضعيف، الإرواء
.
আব্দুল্লাহ ইবনু উসমান আস সাকাফী (রহঃ) থেকে তার গোত্রের এক অন্ধ ব্যক্তির সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ওয়ালীমা অনুষ্ঠান বিবাহের প্রথম দিনে করা জরূরী, দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান উত্তম এবং তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান লোক শুনানো ও লোক দেখানোর জন্য। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন, আমাকে এক ব্যক্তি বলেছেন, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ)-কে ওয়ালীমাতে প্রথম দিন দা‘ওয়াত দেয়া হলে তিনি সাড়া দিলেন, দ্বিতীয় দিন দা‘ওয়াত দেয়া হলেও কবূল করলেন এবং তৃতীয় দিন দা‘ওয়াত দেয়া হলে তিনি দা‘ওয়াত কবূল করলেন না। তিনি বললেন, এ সব লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এবং শুনানোর জন্য এসব করে থাকে।
(আবু দাউদ ৩৭৪৫)
,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ الثَّقَفِيِّ، عَنْ رَجُلٍ، أَعْوَرَ مِنْ ثَقِيفٍ كَانَ يُقَالُ لَهُ مَعْرُوفًا - أَىْ يُثْنَى عَلَيْهِ خَيْرًا إِنْ لَمْ يَكُنِ اسْمُهُ زُهَيْرُ بْنُ عُثْمَانَ فَلاَ أَدْرِي مَا اسْمُهُ - أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْوَلِيمَةُ أَوَّلُ يَوْمٍ حَقٌّ وَالثَّانِي مَعْرُوفٌ وَالْيَوْمُ الثَّالِثُ سُمْعَةٌ وَرِيَاءٌ " . قَالَ قَتَادَةُ وَحَدَّثَنِي رَجُلٌ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ دُعِيَ أَوَّلَ يَوْمٍ فَأَجَابَ وَدُعِيَ الْيَوْمَ الثَّانِي فَأَجَابَ وَدُعِيَ الْيَوْمَ الثَّالِثَ فَلَمْ يُجِبْ وَقَالَ أَهْلُ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ .
মুহাম্মদ ইবন মুছান্না (রহঃ) ............ বনূ ছাকীফের জনৈক কানা ব্যক্তি, যাকে তার সদাচারের জন্য মারুফ বলা হতো, যদি তার নাম যুহায়র ইবন উসমান না হয়, তবে আমি জানি না তার সঠিক নাম কি! তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিবাহের প্রথম দিনে ওলীমার ব্যবস্থা করা জরুরী, দ্বিতীয় দিনে উত্তম এবং তৃতীয় দিনে করলে তা নাম প্রচার ও লোক দেখানোর জন্য করা হচ্ছে বলে বিবেচিত হবে।
(আবু দাউদ ৩৭০৬)
,
 عمدۃ القاری (۸۸/۴): ومنها أن فيه دلالة على مطلوبية الوليمة للعرس وأنها بعد الدخول وقال الثوري ويجوز قبله وبعده والمشهور عندنا أنها سنة وقيل واجبة وعندنا إجابة الدعوة سنة سواء كانت وليمة أو غيرها۔۔۔ والوليمة عبارة عن الطعام المتخذ للعرس مشتقة من الولم وهو الجمع لأن الزوجين يجتمعان فتكون الوليمة خاصة بطعام العرس لأنه طعام الزفاف والوكيرة طعام البناء ۔۔۔ ويستجب لأصحاب الزوج وجيرانه
ওলিমা বাসত রাতের পর হবে,তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে বাসর রাতের আগেও ওলিমা খাওয়ানো জায়েজ আছে। 
,
وفی الموسوعۃ الفقھیۃ (۲۴۹/۴۵)ثانيا : وقت الوليمة :- اختلف الفقهاء في وقت الوليمة :فذهب الحنفية والمالكية في المشهور وابن تيمية إلى أن الوليمة تكون بعد الدخول ۔۔۔ ويرى بعض الحنفية أن وليمة العرس تكون عند العقد وعند الدخول۔۔۔۔وصرح الحنفية بأنه إذا بنى الرجل بامرأته ينبغي أن يدعو الجيران والأقرباء والأصدقاء ويذبح لهم ويصنع لهم طعاما، وإذا اتخذ وليمة ينبغي لهم أن يجيبوا، ولا بأس بأن يدعو يومئذ من الغد وبعد الغد ثم ينقطع العرس والوليمة 
ওলিমা বাসর রাতের পরেই খিলাইতে হবে।
কিছু কিছু হানাফী উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে বিবাহ পড়ানোর সময়েও ওলিমা হবে।   

قیل: إنہا تکون بعد الدخول، وقیل: عند العقد، وقیل: عندہما۔ والمختار أنہ علی قدر حال الزوج۔ (مرقاۃ المفاتیح، کتاب النکاح / باب الولیمۃ ۳؍۴۵)
মুখতার কওল হলো স্বামীর অবস্থার উপর এটা নির্ভর করবে।
,
(০১) সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত যেদিন বিয়ে পড়ালো, সেদিনই মানুষকে আপ্যায়ন করল এবং ঐ দিন রাতে বাসর করল। এতে ওলিমা আদায় হবে। 
,
(০২) যেদিন বিয়ে পড়ালো, সেদিনই মানুষকে আপ্যায়ন করল  এবং ঐ দিন বউ তুলে আনল না। পরে কোন এক সময় বাসর করল। এতে ওলিমা আদায় হবে।
,
(০৩) বাসরের পর দিন ওলিমা করল না। পরবর্তীতে করল। সেক্ষেত্রে তিনদিন বিলম্বের অবকাশ রয়েছে।
তারপর ওলিমা করলে ওলিমা আদায় হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...