উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির গীবত যদি করা হয়, তাহলে তাঁর কাছে থেকে ক্ষমা নিতে হবে। কারণ, এটা তাঁর হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর হক নষ্ট করেছেন, তাঁর হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তাঁর কাছে থেকে ক্ষমা নিতে হবে। এখন যদি ক্ষমা নেওয়ার কাজটি কাহারো সাধ্যের বাইরে চলে যায় বা তিনি মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। হতে পারে আল্লাহ বান্দাদের হকগুলো পরিপূর্ণ করে দিতে পারেন।
,
এক হাদীসে এসেছে। হাদীসটি সনদের দিক থেকে দুর্বল হলেও অর্থের দিক থেকে বিশুদ্ধ। যদি ঘটনাচক্রে কারো গীবত হয়েই যায় তাহলে তার কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হলো, যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করা, ইস্তেগফার করা। যেমন কেউ আজীবন গীবত করেছিল। এখন তার হুঁশ হলো। ভাবল, আমি তো আজীবন এগুনাহ করে এসেছি। কার কার গীবত করেছি তাও পুরোপুরি জানা নেই। কোথায় তাদেরকে খুঁজে বেড়াবো, তবে ভবিষ্যতে আর গীবত করবো না। এখন উপায়? উপায় একটাই। যাদের গীবত করা হয়েছে তাদের জন্য দোয়া করতে থাকা, ইস্তেগফার অব্যাহত রাখা। এভাবে হয়তো গুনাহটি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। (মিশকাত, কিতাবুল আদাব ৪৮৭৭)
,
সমস্ত ফুকাহায়ে কেরামের ঐক্যমতে গিবত করা হারাম।ইমাম কুরতুবী রাহ বলেন,গিবত কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, এতে কারো দ্বিমত নেই। ইমাম নববী এবং ইমাম গাযযালী রাহ বলেন, যে ব্যক্তি কোনো গোনাহে লিপ্ত হয়ে যায়,তার জন্য উচিৎ সাথে সাথেই তাওবাহ করে।তাওবাহ আল্লাহর হক্ব।তাওবাহর তিনটি অংশ রয়েছে।যথাঃ-
(ক)বর্তমানে গোনাহ থেকে তাওবাহ করা।
(খ)উক্ত গোনাহের কাজের উপর লজ্জিত হওয়া।
(গ)ভবিষ্যতে উক্ত গোনাহে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
★সুতরাং তওবার পাশাপাশি তার জন্য দোয়া করতে হবে।
,
কোরআন মজিদে গীবত সম্পর্কে কঠোর শব্দ এসেছে। সম্ভবত এরূপ কোনো শব্দ অন্য কোনো গুনাহ সম্পর্কে উচ্চারিত হয় নি। কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
‘তোমরা একে অপরের গীবত বা পরনিন্দা করো না। (কারণ একটি জঘন্য পাপ। আপন ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতোই জঘন্য গুনাহ।) তোমাদের কেউ কি আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? (নিশ্চয় তা পছন্দ করেনা; বরং ভাববে এত বিকৃত কথা!) সুতরাং তোমরা গীবতকেও ঘৃণা করো।’
আয়াতটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নিয়ে ভাবুন। কত কুৎসিত কাজ এই গীবত। একে তো মানুষের গোশত খাওয়া, তার উপর আপন ভাইয়ের গোশত, তাও আবার মৃত–কতবড় জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ! অবর্ণনীয় মন্দ কাজ। অনুরূপভাবে গীবতও একটি ঘৃণ্য ও জঘন্য গুনাহের নাম।
গীবত কাকে বলে?
গীবত অর্থ পরনিন্দা। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা। হতে পারে দোষটি তার মধ্যে আছে। কিন্তু এই আলোচিত দোষটির কথা শুনলে সে নির্ঘাত মনে ব্যথা পাবে। তাহলে এটাই গীবত। হাদীস শরীফে এক সাহাবীর কথা এসেছে, যিনি নবীজী ﷺ-কে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গীবত কাকে বলে?
নবীজি ﷺ উত্তরে বলেছিলেন, আপন ভাইয়ের আলোচনা তার পেছনে এমনভাবে করা যা তার নিকট পছন্দনীয় নয়। অর্থাৎ সে পরবর্তীতে যদি জানতে পারে তার সম্পর্কে অমুক মজলিসে এ আলোচনা হয়েছে তাহলে মনে কষ্ট পাবে। এটাই গীবত।
সাহাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি যে দোষ নিয়ে আলোচনা করেছি তা যদি সত্যি সত্যি আমার ভাইয়ের মাঝে থাকে?
নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, আসলেই যদি দোষ থাকে তাহলেই গীবত হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার হবে। (আবু দাউদ, বাবলু গীবাত ৪৮৭৪)
গীবত করাও কবীরা গুনাহ
মদ পান, ডাকাতি এবং ব্যভিচার যেমনিভাবে কবিরা গুনাহ, অনুরূপভাবে গীবতও কবীরা গুনাহ। কবিরা গুনা হওয়ার দিক থেকে কোনো পার্থক্য এগুলোর মাঝে নেই। অন্যান্য কবিরা গুনাহর মতোই গীবতও নিঃসন্দেহে একটি হারাম কাজ। যেহেতু এটি হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার হকের সাথে সম্পর্কযুক্ত। হুকুকুল ইবাদ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যার সম্পর্কে ইসলামের বিধান হল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হবে না। অন্যান্য গুনাহ তাওবার মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবতের বেলায় শুধু তাওবা যথেষ্ট নয়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও ক্ষমা করে দিতে হবে।
,
এক হাদীসে এসেছে, হাদীসটি সনদের দিক থেকে তেমন মজবুত না হলেও অর্থের দিক থেকে বিশুদ্ধ। রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, গীবতের গুনাহ জিনা-ব্যভিচারের গুনাহর চেয়েও মারাত্মক।
প্রশ্ন হল, এর কারণ কী?
উত্তর হল, আল্লাহ না করুন, যদি কেউ ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে নিলে আল্লাহ চাহে তো গুনাহটি মাফ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে গীবত এমন মারাত্মক গুনাহ যে, গুনাহটির ক্ষমা ততক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে ক্ষমা করে দেয়। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, বাবুল গীবাত খন্ড ৮ পৃষ্ঠা ৯২)
,
কোন ছুরতে গিবত করা জায়েজ,কোন ছুরতে জায়েজ নয়, গিবত সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুন
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তওবা করতে হবে,এবং তার জন্য দোয়া করতে হবে।
আশা করা যায়,আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন।