ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
ইমামতীর অধিক হকদার কে?
এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“লোকদের ইমামতি করবে ঐ ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব
সব চেয়ে বেশী পাঠ করতে পারে। যদি তারা পাঠ করার ক্ষেত্রে সমমানের হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সুন্নতের অধিক জ্ঞানী হবে সে ইমামতি করবে।
যদি সুন্নতের জ্ঞানে সকলে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম হিজরতকারী সে ইমামতি করবে। যদি তারা সকলে হিজরতের
ক্ষেত্রেও বরাবর হয় তবে তাদের মধ্যে আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে সে তাদের ইমাতি করবে। কোন
ব্যক্তি যেন কোন ব্যক্তির অধীনস্থ স্থানে তার অনুমতি ব্যতীত ইমামতী না করে এবং কোন
ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত আসনে যেন তার অনুমতি ব্যতীত না বসে”। [মুসলিম, অধ্যায়, মাসাজিদ এবং নামাযের স্থান সমূহ, হাদীস নং ৬৭৩]
উপরোক্ত ধারাবাহিকতা বজায় রাখার
আদেশ মোস্তাহাব আদেশ,
শর্ত নয় আর না ওয়াজিব। তাই অগ্রাধিকার প্রাপ্তের উপস্থিতিতে
অনগ্রাধিকার প্রাপ্তের ইমমতি ফুকাহাদের সর্বসম্মতিক্রমে বৈধ। [আল্ মাওসূআহ আল ফিকহিয়্যাহ, ৬/২০৯]
ইমামের তিলাওয়াত শুদ্ধ হতে হবে।
কেননা তার নামাজের উপরেই সকলের নামাজের শুদ্ধতা নির্ভর করে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইমাম ও মুয়াযযিনের ব্যাপারে বলেছেন,
ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺿﺎﻣﻦ ﻭﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻣﺆﺗﻤﻦ، ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺃﺭﺷﺪ ﺍﻷﺋﻤﺔ ﻭﺍﻏﻔﺮ ﻟﻠﻤﺆﺫﻧﻴﻦ
‘ইমাম হচ্ছে দায়িত্বশীল আর মুয়াজ্জিন আমানতদার, হে আল্লাহ! ইমামদের সঠিক পথ দেখান এবং মুয়াজ্জিনদেরকে ক্ষমা
করুন’। (তিরিমিযী ২০৭)
★শরীয়তের বিধান হলো
কুরআনে কারীম শুদ্ধ করে পড়তে পারে এমন ব্যক্তি অশুদ্ধ তিলাওয়াত কারী ইমামের পিছনে
নামায পড়লে তার নামায হয় না।
فى الفتاوى الهندية –
ولا يصح اقتداء القارئ بالأمي وبالأخرس
কিরাত বিশুদ্ধ এমন ব্যক্তির নামায
কেরাত অশুদ্ধ এমন ব্যক্তির পিছনে শুদ্ধ হয় না। (ফাতাওয়া শামী- ২/৩২৪.ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/১৪৩-১৪৪)
فى الفتاوى الهندية –
ولا يصح اقتداء القارئ بالأمي
উম্মির (অর্থাৎ যার কেরাত অশুদ্ধ)
পিছনে ক্বারীর(অর্থাৎ যার ক্বিরাত বিশুদ্ধ) ইকতিদা সহীহ নেই। ফাতাওয়া শামী- ২/৩২৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/১৪৩-১৪৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া-২/২৫৬
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار)
(1/ 581):
"(و) لا (غير الألثغ به) أي بالألثغ (على الأصح) كما في البحر عن المجتبى، وحرر الحلبي وابن الشحنة أنه بعد بذل جهده دائماً حتماً كالأمي، فلايؤم إلا مثله
সারমর্মঃ যে ব্যাক্তি কিরাআত শুদ্ধ
পড়ার উপর শক্তি রাখেনা,সে কিরাআত শুদ্ধ পাঠ কারীর ইমাম হতে পারবেনা।তবে তার মতো ব্যাক্তিদের
ইমাম হতে পারবে।
ইমামতির শর্ত সমূহ:
১। পুরুষ হওয়া।
২। মুসলমান হওয়া।
৩। বালেগ হওয়া। নাবালকের ইমামতি
শুদ্ধ নয়।
৪। বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া। পাগলের
ইমামতি শুদ্ধ নয়।
৫। নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়
কেরাত শুদ্ধভাবে পড়তে সক্ষম হওয়া। সুতরাং যে
ব্যক্তি নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য যতটুকু কেরাত পড়া প্রয়োজন, ততটুকু পড়তে সক্ষম নয়, ওই ব্যক্তির ইমামতি শুদ্ধ নয়।
৬। নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার যতগুলো
শর্ত আছে,
তার মধ্য থেকে যদি শুধু একটি শর্তও পাওয়া না যায়, তাহলে তার ইমামতি শুদ্ধ হবে না।
৭। ওজর তথা নাক দিয়ে রক্ত বের
হওয়া,
প্রস্রাব ঝরা, সর্বক্ষণ বায়ু নির্গত হওয়া ইত্যাদি যাবতীয় অপারগতামুক্ত হওয়া।
৮। শব্দের সঠিক উচ্চারণে সক্ষম
হওয়া।
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনী ভাই/বোন!
১. যিনি হাফেজ নন তিনি যদি সহীহ
শুদ্ধ ভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন তাহলে তার পিছনে ঐ হাফেজ ব্যক্তির নামাজ সহীহ হয়ে যাবে।
বরং সে যদি সহীহ শুদ্ধ ভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন তাহলে
সেই নামাজ পড়ানো উত্তম ঐ হাফেজের থেকে যার মধ্যে ইসলামী আখলাক নেই, দাঁড়ি রাখে না ইত্যাদি।
২. না, গায়রে হাফেজ ব্যক্তি যদি সহীহ শুদ্ধ ভাবে তেলাওয়াত করতে পারেন
তাহলে নামাজে কোনো সমস্যা হবে না।