আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
220 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (41 points)
edited by
আসসামুআলাইকুম ওরাহমাতুল্লা।

 ১।মনমালিন্যের  বা ঝগড়ার সময় স্ত্রী যদি বলে চলে যাব।স্বামীও যদি বলে যাও বা যাও একটা গেলে আরেকটা আসবে।এতে কি তালাক হবে?আগের কথা তহ।স্বামীকে জিগ্যেস করেছি কেনায়া তালাকের ব্যপারে জানার পর।ওনি বলেছে নিয়ত ছিল না কোনদিন তালাকের।তালাকের নিয়তে বলে নি বললেও।মজলিস ছিল কিনাও মনে নেই তালাকের।

২।হুজুর আমার ২ টা বিষয় নিয়ে শর্তযুক্ত তালাকের কথা বলেছে কিনা সন্দেহ হয়।স্বামীকেও জিগ্যেস  করেছি ওনার ও  মনে নেই।ওই কাজগুলো করলে কি তালাক হবে? আমি একটা করেছি এর মধ্যে।

৩।স্ত্রী যদি স্বামিকে বলে মেসেজে আজ থেকেতুর সাথে কোন সম্পর্ক নাই,তুই আমার জন্য হারাম,তুই আমার জামাই নই  তাহলে  কি তালাক হবে? স্বামী যদি এরপর ঠিক আছে বলে তাহলে কি তালাক হবে? আসলে স্বামী পরে কি বলেছে মনে নেই।আমি সন্দেহে আছি।
৪।হুজুর আমি আরো বিষয় নিয়ে সন্দেহে থাকি।মানে আমাদের প্রায় ঝগড়া হত। কখন কি বলেছে মনে নেই।এক দিনের কথার সাথে অন্যদিনের কথার সাথে গুলিয়ে যায় মত লাগে।বুঝতে পারি না স্পষ্ট  মনে পড়ে নাকি আমার চিন্তাধারনা। কারন মেসেজে কথা হয় আমাদের।কারন আমি তালাক ও চাইতাম কিন্তু কোনদিন তালাক দেই নি ওটা নিশ্চিত। কিন্তুু কেনায়া বাক্য বলত কিনা তখন মানে তালাক চাওয়ার সময় আমার  মনে নেই।গুলিয়ে যায়,সব কথা।বিষয়টা মাথায় ঘুরে সবসময়, না চাইলেও।স্বাভাবিক কথা নিয়েও সন্দেহ হয়।মাঝে মাঝে ভাবি আর প্রশ্ন করব না।কিন্তুু ভয় হয় গুণাহ হচ্ছে কিনা।এই বিষয়ে প্রশ্ন না করলে বা আর জানার চেস্টা না করলে কি গুণাহ হবে?কারণ আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।এসব নিয়ে চিন্তায় বার বার মনে হয় যিনা হচ্ছে কিনা।কোথাও শান্তি পাচ্ছি না।

৫।ছোটবেলায় ১০ বছর বয়সে আমি আমার ফুফির সাথে মাজারে গিয়েছিলাম।ওনি ওখানে গরিব লোকদের খাওয়াইছিল।আর আমরা নামাজ ও পরেছি।আমি বলেছিলাম মাজারে সিজদাহ করলে গুণাহ। তহ ওনারা বলেছিল আমরা তহ মাজার সিজদাহ করতেছি না।নামাজ পড়তেছি।আলাদা একটা নামাজের মসজিদ ছিল।এর কারণে কি আমার ঈমান চলে যাবে? আমাদের বাসায় দাদি ভাণ্ডারি করাত।কিন্তুু ওনি ওসব করত না।আমিও করি না,জানার পর থেকে দাদুকে বারন করছি।আমার ঈমান ঠিক আছে?

৬।স্বামীকে মাঝে মাঝে রাগে ঝগড়ার সময় বলতাম মেসেজ আর কল  দিবা না আর কোনদিন বা কোন সম্পর্ক নাই আর কল বা এসেএমএস দিবা না।কারন আমাদের মেসেজে কথা হয়।স্বামীও যদি বলে ঠিক আছে  দিব না বা দিব না আর।এর দ্বারা তালাক হবে? হুজুর আমি কোনদিন কেনায়া তালাকের ব্যপারে জানতাম ও না।শুধু জানতাম স্বামী ৩ তালাক দিলে তালাক হয়।স্বামীও জানে না এখনও এসব দ্বারা যে তালাক হয়।ওনি বলে যে তালাকের নিয়তে কোন কথা বলে নি।কেনায়া তালাকের ব্যপারে জানার পর থেকে খুব ভয় হয়।সবকিছু নিয়ে ভয় হয়।

৭।বিয়ের আগে স্ত্রীকে তুর বাবার ঠিক নাই,জারজ।মানে ঝগড়ার সময়।এখন বিয়ে হয়েছে।আগের কথা ওটা দ্বারা কি বিয়ে বৈধ হবে? হুজুর আসলে সব কথা নিয়ে সন্দেহ হয়।

৮।স্বামী যদি বলে ওই কাজটা করলে শেষ।স্ত্রী যদি বলে কি শেষ তালাক ছাড়া আর কি শেষ করতে পারবা যে? স্বামি যদি বলে  দিতে হলে দিব তালাক।আর স্ত্রী যদি ওই কাজটা করে তাহলে কি তালাক হবে?

1 Answer

0 votes
by (567,240 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


তালাক খুবই মারাত্মক  একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}


তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় ইঙ্গিত সূচক শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

আরো জানুনঃ 

(০১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত স্বামীর কথা কেনায়া তালাকের বাক্য।
এতে স্বামী তালাকের নিয়ত করে থাকলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।
 স্বামী তালাকের কোনো নিয়ত না করে থাকলে এতে তালাক পতিত হবেনা। 

(০২)
যেহেতু সন্দেহ হচ্ছে,তাই বিষয়টিকে পাত্তা দিবেননা। এক্ষেত্রে তালাক হবেনা।

(০৩)
স্ত্রীর এহেন কথা বলায় তালাক হবেনা।

(০৪)
 যেহেতু সন্দেহ হচ্ছে,নিশ্চিত কিছু মনে আসছেনা ,তাই বিষয়টিকে পাত্তা দিবেননা। এক্ষেত্রে তালাক হবেনা।

(০৫)
আপনি যেহেতু কবরকে সিজদাহ করেননি,বরং পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন,সুতরাং আপনার ঈমান চলে যায়নি।
ঈমান ঠিক রয়েছে। 

(০৬)
এর দ্বারা তালাক হবেনা।

(০৭)
এ কথা বলার বিবাহের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি।
বিবাহ হয়ে গিয়েছে।

(০৮)
শেষ বলাতে যদি স্বামী তালাকের নিয়ত করে থাকে,তাহলে স্ত্রী সেই কাজ করার দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। 
    
তবে এতে স্বামী তালাকের নিয়ত না করলে স্ত্রী সেই কাজ করলেও তালাক হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...