আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,824 views
in সালাত(Prayer) by (41 points)
আসসালামু আলাইকুম । হযরত আমি মোঃ  মুবাশ্বির;  এইচ এস সি শিক্ষার্থী;  একটি প্রশ্ন করছি ।

আমি হানাফী মাজহাব ফলো করি । হানাফী মাজহাব অনুযায়ী বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পরে রুকুতে যেতে হয় । কোনো কারণে ভুলে গেলাম । সেক্ষেত্রে কি সিজদায়ে সাহু দিব?  নাকি শরীয়ত সমর্থিত অন্য একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে রুকু করার পর কুনুত পড়ার বিধান অনুযায়ী দোয়া কুনুত পড়ব?

আমার ব্যক্তিগত ধারণা এরকম যে যেহেতু দোয়া কুনুতই বিতর নামাযের বিশেষ অংশ তাই শরীয়ত সমর্থিত যেকোন এক ভাবে পড়লেই হবে । কিন্তু আমি তো আর আলিম না । আমার জ্ঞান ও কম। তাই এই বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য প্রশ্ন টা করলাম।
হযরত এই সম্পর্কিত আরেকটি সম্পূরক প্রশ্ন । আমরা জানি বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব। এটা মসজিদের একজন হুজুর বলেছিলেন একবার । তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন জায়গায় শুনে আসছি। কিন্তু এটার পক্ষে কোন দলিল পাইনি । ইন্টারনেট থেকে  ( কোন আলেমের কাছে যাওয়ার সুযোগ না থাকায়) যত দূর জেনেছি দোয়া কুনুত পড়া সুন্নাত । সেক্ষেত্রে তো সিজদায়ে সাহু এর প্রশ্নই তাহলে আসেনা । একটু পরিষ্কার ধারণা দিলে উপকৃত হব ।

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  বিতর নামাযে দুআয়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। 
যদি কেহ ভুলক্রমে বিতর নামাজে দোয়ায়ে কুনুত না পড়ে,তাহলে তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। 
(কিতাবুন নাওয়াজেল ৩/৩৬০)
       
এটি তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সাথে সূরা মিলিয়ে তাকবীর বলে হাত বেঁধে পড়তে হয়।
কেহ যদি রুকুর আগে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে ভুলে যায়,রুকুতে গিয়ে স্বরন আসে বা রুকু থেকে উঠার পর স্বরন আসে,তাহলে সে আর দোয়ায়ে কুনুত পড়বেনা।
তার উপর সেজদায়ে সাহু  ওয়াজিব হবে। 
সে যদি রুকু থেকে উঠে দোয়ায়ে কুনুত পড়েও,তার পরেও তার উপর সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। 
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৪/১২৬)       

হাদীস শরীফে এসেছে  
عن الحسن قال: من نسي القنوت في الوتر سجد سجدتي السہو۔ (السنن الکبری للإمام البیہقي ۳؍۳۰۹ رقم: ۳۹۸۳)
হযরত হাসান রাঃ থেকে  বর্ণিতঃ যে ব্যাক্তি দোয়ায়ে কুনুত ভুলে যায়,সে সেজদায়ে সাহু আদায় করবে।   
.

হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন … এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
عن أبي بن كعب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات … ويقنت قبل الركوع.
(নাসায়ী ১/২৪৮)


ইবনে মাজার রেওয়ায়েতে আছে-‘তিনি বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’
كان يوتر فيقنت قبل الركوع    (ইবনে মাজাহ পৃ. ৮৪)


عن ابن مسعود رضي الله عنه إن النبي صلى الله عليه وسلم قنت في الوتر قبل الركوع، قال الدار قطني وأبان بن أبي عياش متروك، قلت : ورواه الخطيب في كتاب القنوت من غير طريق أبان بن أبي عياش وذكره ابن الجوزي في التحقيق من جهة الخطيب وسكت عنه إلا أنه قال :  أحاديثنا مقدمة كما في نصب الراية قال الترمذي في العلل : وقد روى غير واحد عن إبراهيم النخعي عن علقمة عن عبد الله بن مسعود أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يقنت في وتره قبل الركوع.
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে রুকুর আগে কুনূত পড়তেন।’


عن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث ركعات ويجعل القنوت قبل الركوع، قال الطبراني : لم يروه عن عبيد الله إلا سعيد بن سالم كما في نصب الراية.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং রুকুর আগে কুনূত পাঠ করতেন।’


عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : بت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فقام من الليل فصلى ركعتين، ثم قام فأوتر فقرأء بفاتحة الكتاب وسبح اسم ربك الأعلى ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ يفاتحة الكتاب وقل يا أيها الكافرون ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتاب و قل هو الله أحد ثم قنت ودعا قبل الركوع.
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি একরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে ছিলাম। তিনি  শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।’

(কিতাবুল হুজ্জাহ ১/২০১; হিলয়া, আবু নুআইম-নসবুর রায়াহ ২/১২৪)


عن مسروق والأسود وأصحاب عبد الله قالوا كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر وكان يقنت قبل الركوع يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت
আবু ইসহাক থেকে বর্ণিত, মাসরূক রাহ., আসওয়াদ রাহ. ও ইবনে মাসউদ রা.-এর অন্য শাগরিদগণ বলেছেন,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযে কুনূত পড়তেন আর তিনি কুনূত পড়তেন রুকুর আগে এবং কিরাআত সমাপ্ত হওয়ার পর কুনূত পড়ার সময় তাকবীর দিতেন।
{শরহু মুশকিলিল আছার ১১/৩৭৪ আরো দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২/৩০৭}
۔
ফাতাওয়া আলমগীরী গ্রন্থে এসেছে  
ومنہا القنوت فإذا ترکہ یجب علیہ السہو۔ (الفتاویٰ الہندیۃ ۱؍۱۲۸)
নামাজের ওয়াজিবের মধ্যে একটি হলো বিতির নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
তরক করলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। 
    
ফাতাওয়ায়ে তাতারখানীয়াতে আছে  
أما السہو في القنوت إن ترک القنوت ساہیاً ثم تذکر بعد ما سجد لا یعود إلی القیام في ہٰذہ الصورۃ ولا یقنت؛ بل یمضي في صلاتہ ویسجد للسہو في آخرہ وکذلک إذا تذکر بعد ما قام من الرکوع مضی ولا یقنت، وفي الخلاصۃ: وکان علیہ السہو۔ (الفتاویٰ التاتارخانیۃ ۲؍۳۹۸ رقم: ۲۷۸۶ زکریا)
যদি দোয়ায়ে কুনুত ছেড়ে দেয়,তাহলে তাকে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে।       

দুআয়ে কুনুত হল,
اللهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ , وَنُثْنِي عَلَيْكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَنَشْكُرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّي , وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
শরহু মাআনিল আছার, হাদীস নং-১৪৭৫।
,
★প্রিয় দ্বীনি ভাই!
যদিও শাফেয়ী রহঃ এর মাযহাব সহ আরো কিছু উলামায়ে কেরামদের মতে রুকুর পর দোয়ায়ে কুনুত পরার নিয়ম।
তবে হানাফী মাযহাব অনুপাতে রুকুর আগেই দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হবে।
অন্যথায় সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে     । 
,
আপনি যেহেতু হানাফী মাযহাবের অনুসারী, তাই আপনাকে রুকুর আগেই দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হবে,ভুলে গেলে সেজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে।         


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...