আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
217 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (97 points)
আসসালামু আলাইকুম
চিত্র আঁকা হারাম কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক সময় চিত্র আঁকা প্রয়োজন হয়, নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব আশা করছি..

১।  উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনা করতে বিভিন্ন প্রাণী এবং মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের চিত্র আঁকতে তো হয়ই, পাশাপাশি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বারবার চর্চাও করা প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রেও কি চিত্র আঁকা হারাম?

২। কোনো প্রাণীর সম্পূর্ণ চিত্র না একে আংশিক চিত্র আঁকা কি জায়েজ? যেমন আলাদা আলাদা ভাবে মানুষের হাত-পা, মস্তিষ্ক, পাকস্থলী ইত্যাদি?

৩। আমার শিক্ষক প্র্যাক্টিকেলের জন্যে আমাকে পুরো মানবশরীরের কঙ্কাল এবং বিভিন্ন মাছ এবং কীটপতঙ্গের ছবি একে আনতে বলেছেন, আমি কি এগুলো আঁকতে পারবো?

৪। চিত্রগুলো নিজে না একে অন্য কাওকে দিয়ে আঁকালে কি আমার জন্যে উত্তম হবে?

৫। আমি ইতিমধ্যে কিছু চিত্র একে ফেলেছি যেগুলোর বেশিরভাগই সম্পূর্ণ প্রাণী নয়, অর্থাৎ দেহের কিছু অঙ্গ আকা হয়নি। তবে কিছু প্রাণী বাস্তব প্রাণীর সাথে মিলে কিনা আমি সুনিশ্চিত নয়, আমার কি ঐ চিত্রগুলো মুছে ফেলা প্রয়োজন?

৬। আমি এতদিন ধারণা করেছিলাম পড়াশোনার জন্যে চিত্র আঁকা জায়েজ, সম্ভবত বছরখানেক আগে কোনো আলেমের ফাতওয়া শুনে এমন ধারণা করতাম। কিন্তু আসলে যদি চিত্র আঁকা হারাম হয়ে থাকে, এতে কি আমার কোনো ধরণের ক্ষতি হয়েছে?

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
by (574,350 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


ইসলামে যেকোনো প্রানীর ছবি অঙ্কন,তা সংরক্ষন সবই নাজায়েজ।   
এসব যদি এমনভাবে আঁকা হয় যে, তার প্রাণীসূলভ অবস্থান পরিস্ফুটিত হয়, তাহলে তা আঁকা হারাম হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُمَّ قَالَ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِمَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ ». وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ.

হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। এতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুনরায় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস রা তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর রাখলেন, এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে শুনেছি। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবে”। ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর যা প্রাণী নয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৬২}

ن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أخبره : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة يقال لهم أحيوا ما خلقتم 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে লোকেরা ছবি আঁকে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদের বলা হবে যে, যা তোমরা বানিয়েছো তাতে প্রাণ দাও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৪১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৭, ৭১১৯, ৫৬১২, ৫৬১৬, ৭১১৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৫৭, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৫, }

عن سعيد بن أبي الحسن قال : كنت عند ابن عباس رضي الله عنهما إذ أتاه رجل فقال يا أبا عباس إني إنسان إنما معيشتي من صنعة يدي وإني أصنع هذه التصاوير . فقال ابن عباس لا أحدثك إلا ما سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول سمعته يقول ( من صور صورة فإن الله معذبه حتى ينفخ فيها الروح وليس بنافخ فيها أبدا ) . فربا الرجل ربوة شديدة واصفر وجهه فقال ويحك إن أبيت إلا أن تصنع فعليك بهذا الشجر كل شيء ليس فيه روح

হযরত সাঈদ বিন আবিল হাসান রহঃ বলেন, আমি একদা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এল। লোকটি এসে বলল-‘হে ইবনে আব্বাস! আমার উপার্জনের নির্ভরতা আমার হাতের সৃষ্টির উপর, আমি ছবি আঁকি’। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বললেন-‘আমি তোমার কাছে সেই কথা বর্ণনা করছি, যা আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল সাঃ কে এটা বলতে শুনেছি যে, যেই ব্যক্তি ছবি বানায়, তাকে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিতে থাকবেন যতক্ষণ না সে উক্ত ছবিতে প্রাণ দিতে পারে, আর সেই ব্যক্তি কোনদিন তাতে প্রাণ দিতে পারবে না’। একথা শুনে লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর তার চেহারা পাংশু হয়ে গেল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বললেন-“আরে ভাই! যদি তুমি বানাতেই চাও, তাহলে গাছের ছবি আঁকো। আর প্রত্যেক ঐ বস্তুর ছবি আঁকো, যাতে প্রাণ নেই। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৪৩৪, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২১১২, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস নং-২৫৭৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৩৯৪, মু’জামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৮}

(০১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এক্ষেত্রেও চিত্র আঁকা জায়েজ হবেনা।
বাধ্যতামূলক ভাবে যদি আঁকতেই হয়,তাহলে তওবা ইস্তেগফার চালিয়ে যাবেন।

(০২)
মাথা কর্তিত থাকলে সেই ছবি হারামের হুকুম থেকে বাহির হয়ে যাবে। যেমনঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ : " ﺍﻟﺼُّﻮﺭَﺓُ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗُﻄِﻊَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﺑِﺼُﻮﺭَﺓٍ ."

প্রাণীর মাথা-ই হল মূলত ছবি তথা প্রাণীর মাথাটাই ছবির উল্লেখযোগ্য অংশ।যখন কোনো ছবির অাকৃতি থেকে মাথাকে কেটে ফেলা হবে,তখন সেটা যেন কোনো ছবিই না।(সুনানে বায়হাক্বী-১৪৫৮০)

আরো জানুনঃ

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে আঁকানো জায়েজ।

(০৩)
এক্ষেত্রেও চিত্র আঁকা জায়েজ হবেনা।
বাধ্যতামূলক ভাবে যদি আঁকতেই হয়,তাহলে তওবা ইস্তেগফার চালিয়ে যাবেন।

(০৪)
এটিও জায়েজ হবেনা।

(০৫)
যদি তার প্রাণীসূলভ অবস্থান পরিস্ফুটিত হয়, চেহারা বুঝা যায়,তাহলে তাহা মিশে দিতে হবে।

(০৬)
আপনি তওবা ইস্তেগফার পাঠ করবেন।
  
আরো জানুনঃ  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...