আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
204 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম। আমদের দেশের কিছু জাতীয় দিবস আছে।যেমনঃ একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ ইত্যাদি।এছাড়া এখন আরো কিছু দিবস বের হয়েছে।যেবনঃবিশ্ব হিজাব দিবস এ ধরনের আরো কিছু সচেতনতারমূলক দিবস।আমার প্রশ্ন হলো এসব দিবসকে ঘিরে মিনারে ফুল,খালি পায়ে হাঁটা এসব না করে এসব দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা,কুইজ প্রতিযোগিতা, এসব দিবসের তাৎপর্য, গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি এগুলো কি ইসলাম সমর্থন করে?

ইসলামে তো কোন দিবস পালন সম্পর্কে নাই আমি যতোটুকু জানি।তাহলে এগুলো করা কি জায়েজ হবে?

আমার আরেকটা প্রশ্ন হলো-মেয়েরা মেয়েদের মাঝে দাওয়াহ দেওয়ার কাছে দুইজন বা কিছু মেয়ে একসাথে সফর দূরত্ব অতিক্রম করা মাহরাম ছাড়া এবং কোন নিরাপদ বাড়ীতে রাত্রীজাপন করা কি ইসলামে জায়েজ?
মেয়েদের তো মাহরাম ছাড়া সফর দূরত্বে সফর কারা জায়েজ না আমি পড়েছি।কিন্তু এক্ষেত্রে দাওয়াহর কাজে করা যায় কিনা?

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

জবাব,

https://ifatwa.info/7136/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যেকোনো ধরণের দিবস পালনের হুকুম সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেন, দিবস পালনের মূল বিষয়টি এসেছে বিধর্মীদের থেকে।  সুতরাং বলা যায় এর মূল জিনিসটিই ইসলামে প্রত্যাখ্যাত। তা যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء

তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ ৩)

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)

অন্যান্য উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে শরীয়ত সম্মত পন্থায় স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস ইত্যাদি পালন জায়েজ। তবে যেই দিবস সরাসরি ইহুদি খ্রিস্টানদের থেকেই এসেছে, যেমন ভ্যালেন্টাইন্স ডে,থার্টি ফার্স্ট নাইট,পহেলা বৈশাখ,ইত্যাদি সেগুলো কোনো ভাবেই পালন করা জায়েজ নেই।

নবম হিজরীর মাহে রমযানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মক্কা-অভিমুখে রওনা হলেন। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইতিমধ্যে ইসলাম কবুল করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুসলিম বাহিনীর যাত্রাপথে দাঁড় করিয়ে দিলেন, যেন ইসলামের শান-শওকত তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।

একের পর এক গোত্র অতিক্রম করে যাচ্ছে, আনসারীদের দলটি যখন অতিক্রম করছিল, যার পতাকা ছিল বিখ্যাত আনসারী সাহাবী সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-এর হাতে, কুরাইশের নেতা আবু সুফিয়ানকে দেখে তিনি বলে উঠলেন

"اليوم يوم الملحمة"

আজ রক্তপাতের দিন।”

আবু সুফিয়ান রা. ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-কে নিষেধ করলেন এবং বললেন

"اليوم يوم المرحمة"

 “আজ দয়া ও করুণার দিন।”

অন্য জাতির বিজয়-দিবস সাধারণত হয়ে থাকে ‘ইয়াওমুল মালহামাহ’ রক্তপাত দিবস আর মুসলিম জাতির বিজয়-দিবস হচ্ছে, ‘ইয়াওমুল মারহামাহ’ দয়া ও করুণার দিবস।

এই ক্ষমা ও করুণার ঘোষণাই তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছিলেন কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে

"لا تثريب عليكم اليوم اذهبوا فأنتم الطلقاء

আজ তোমাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। যাও, তোমরা মুক্ত।

সারা পৃথিবীতে দিবস পালনের ব্যাপক রেওয়াজ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবস পালিত হয়। সব দিবস এক রকম নয়।

কিছু দিবস আছে সাধারণ সচেতনতামূলক। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাদানই ঐসব দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। কিছু দিবস আছে, যেগুলোতে কিছু সেবামূলক কার্যক্রমও হয়ে থাকে। যেমন পলিও টিকা দিবস। এই সব  দিবসের আয়োজন-অনুষ্ঠানের কিছু সুফল আছে। পক্ষান্তরে কিছু দিবস আছে, যেগুলোর প্রতিপাদ্য বিষয়টি নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে সুফল পাওয়াটা নির্ভর করে নৈতিক ও আদর্শিক উন্নতির উপর। শুধু দিবস কেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় যা আশা করা বোকামি। এ ধরনের দিবসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, নারী-দিবস, শ্রমিক দিবস ইত্যাদি।

যদি কোনো দিবস এমন হয়ে থাকে, যে দিবসগুলো পালন করার মধ্যে অমুসলিমদের সঙ্গে বা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো কালচার, সংস্কৃতি, সভ্যতা অথবা অন্য কোনো জীবন বিধানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে এ ধরনের দিবস পালন করা ইসলামী শরিয়তের মধ্যে হারাম। ইসলামে এই দিবসগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন : থার্টিফার্স্ট নাইটের কথা আপনি বলেছেন। এটি ভিন্ন কালচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যেটা পারস্য সভ্যতা থেকে আমদানি হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর সময় এ ধরনের একটি দিবসও পালিত হতো না। নবী করিম (সা.), সাহাবা, সলফে সালেহিন এটাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।

কিছু দিবস রয়েছে, যেগুলো মানুষকে সচেতন করার জন্য বা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মেসেজ দেওয়ার জন্য পালন করা হয়ে থাকে। তবে ইবাদতের কোনো ফরম্যাট এর মধ্যে থাকতে পারবে না, তাহলে এই কাজটি বেদাত হয়ে যাবে।

ইমানদার ব্যক্তিগণ বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। এসব কাজে সময় নষ্ট করার সামান্যতম কোনো সুযোগ তাঁদের নেই। রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের প্রকৃত সৌন্দর্য হচ্ছে সেখানেই, সে এমন কাজ পরিহার করে চলবে, যেটা তার জন্য অপ্রয়োজনীয়।’

 আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّـهِ وَالْفَتْحُ – وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّـهِ أَفْوَاجًا – فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا

যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন তখন আপনি তাসবীহ পাঠ তথা আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং ইস্তিগফার তথা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।” (সূরা নসর)

কোন বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান যদি শুধু শহীদদের কীর্তিগাঁথার আলোচনা ও দুআর অনুষ্ঠান হয়, তাহলে তাতে অংশ নিতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে গান বাজনার অনুষ্ঠান হলে তাতে অংশ নেয়া বৈধ হবে না। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কিছুতেই বৈধ নয়। কারণ তা হিন্দুয়ানী অনুষ্ঠান। কোন মুসলমানের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান বৈধ নয়।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আমরা যেই বিজয় পেয়েছি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে যে, এই বিজয় আল্লাহ তাআলার সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। তাঁর সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কখনোই তা সম্ভব ছিল না। বিধায় আমাদেরকে ইসলাম সমর্থিত পদ্ধতিতে বিজয় দিবস পালন করা উচিত। এদিন নফল নামায পড়ে এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাসবীহ-তাহমীদ পাঠ করে বিজয়ের জন্য তাঁর শোকর আদায় করতে পারি। আর কুরআন তিলাওয়াত করে এবং দান-খাইরাত করে তার ছাওয়াব দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই শহীদ ভাই-বোনগণের রূহে রেসানী করতে পারি। তাদের জন্য দু‘আ করতে পারি। 

সুতরাং বিজয় দিবস উপলক্ষে খেলাধুলা না করে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বিজয় দিবস উদযাপন করা উচিত। উলামায়ে কেরাম এমন উদ্দেশ্য সামনে রেখে খেলাধুলা করতে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। বিধাই এটি মোটেও সমুচিন নয়।

তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ যদি ব্যাডমিন্টন  জুয়ার উদ্দেশ্যে না খেলে থাকে, তবে শুধু শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে এই খেলা খেতে ইসলামী কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে খেলাধুলা (যা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ভুলিয়ে দেয় না) ইসলামে বৈধ। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ২৬৬২, ইমদাদুল আহকাম : ৪/৩৬৯)

সুতরাং জুয়া না হলে,   শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে, বৈধ বিদ্যুতের আলোতে ব্যাডমিন্টন খেলা জায়েজ রয়েছে। তবে শর্ত হল, ফরয ইবাদত ও ফরয দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার শীতিলতা আসতে পারবে না। আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/6964/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...