আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
357 views
in সালাত(Prayer) by (28 points)
আসসালামু ওয়ালাইকুম।

১. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৫ দিনের কম সময়ের জন্য যাতায়তে কি কসর সালাত আদায় করতে হবে? যেমন ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজার/ চট্টগ্রাম থেকে বাসে~ট্রেনে ঢাকা/ ঢাকা থেকে লঞ্চে কুয়াকাটা যাতায়ত করি তবে কি মুসাফিরের হুকুম হবে?

২. পাচবছর বা তারও কিছু বেশি সময়ের জন্য যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি তবে নিজ বাড়ী এবং বিশ্ববিদ্যালয় দুটোই কি ওয়াতনে আসলী হবে?
৩. দুই ওয়াতনে আসলীতে যাতায়াতের মধ্যবর্তী পথে কি ব্যক্তি কসর সালাত আদায় করবে?

৪. আজানের জবাব দেয়া শেষে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পাঠ করি, এতে 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ' এর ক্ষেত্রেও দরূদ পাঠ করা হয়ে যায়। কিন্তু ইকামাতের ক্ষেত্রে তো ইকামাত শেষে দরূদ পাঠ করার তেমন সময় পাওয়া যায়না।
ইকামাতের জবাবে দরূদ পাঠের বিধান কি?

৩. তাশাহহুদ পাঠকালে "শুধুমাত্র" 'আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলার সময়ই শাহাদাত আঙ্গুল উঠিয়ে ধরবো, বাকি সময় নামানো থাকবে এটি কি দলিলভিত্তিক?

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
কেহ যদি নিজ আবাস স্থল থেকে ৭৭+ কিলোমিটার দুরত্বে কোথাও সফর করে , এবং সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকাত নিয়ত করে,তাহলে ব্যাক্তি মুসাফির হয়ে যাবে।
সেখানে সে কসরের নামাজ আদায় করবে।
,
আয়েশা রাযি. বলেন,

فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ

মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামায দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের নামায ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের নামাযে বৃদ্ধি করা হল। (বুখারী ১০৪০ মুসলিম ৬৮৫)

আর যদি সেখানে গিয়ে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকার নিয়ত করে অথবা এর কম দুরত্বে সফর করে,তাহলে ব্যাক্তি মুসাফির হবেনা।
তার কসর নামাজের সুযোগ নেই। 

سنن أبى داود -صلاة السفر باب متى يقصر المسافر (1 / 465)حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ يَحْيَى بْنِ يَزِيدَ الْهُنَائِىِّ قَالَ سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنْ قَصْرِ الصَّلاَةِ فَقَالَ أَنَسٌ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلاَثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلاَثَةِ فَرَاسِخَ – شُعْبَةُ شَكَّ – يُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ.

সারমর্মঃ যখন তিন ফারছাখ সফরের নিয়ত করে,তাহলে কসরের নামাজ পড়তে পারবে।
.
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যেখানে থাকেন, সেখান থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৫ দিনের কম সময়ের জন্য যেখানেই যাতায়াত করুন,লঞ্চে যাতায়াত করুন,বা ট্রেন বা বিমানে।
একই হুকুম।
আপনার আবাসস্থল থেক যেখানে সফর করছেন,তার  মাঝে ৭৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দুরত্বে হয়, তাহলে আপনি সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে মুসাফির হবেন। 
সেখানে কসরের নামাজ পড়বেন।।
,
আর যদি এতোটা দুরত্বে না হয়,অথবা ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকার নিয়ত করেন,তাহলে সেখানে পূর্ণ নামাজই আদায় করবেন। 

(০২)
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
    
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে দুটোই ওয়াতনে আসলী হবেনা।
পাঁচবছর বা তারও কিছু বেশি সময়ের জন্য যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন,তবুও সেটি ওয়াতনে আসলি নয়।
সেটি ওয়াতনে ইকামত।
এখানে যেহেতু আপনি পনেরো দিনেএ বেশি থাকার নিয়ত করছেন,তাই এখানে আপনাকে পূর্ণ নামাজই আদায় করতে হবে।   

فى رد المحتار- (الوطن الاصلى يبطل بمثله) ( قوله إذا لم يبق له بالأول أهل ) أي وإن بقي له فيه عقار قال في النهر : ولو نقل أهله ومتاعه وله دور في البلد لا تبقى وطنا له وقيل تبقى كذا في المحيط وغيره (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر، مطلب في الوطن الأصلي ووطن الإقامة-2/614)
সারমর্মঃ ওয়াতনে আসলিতে যদি স্থায়ী আর না থাকার নিয়ত করে,এবং  পরিবার সামানা যদি সেখানে আর না থাকে,তাহলে সেটা আর ওয়াতনে আসলি থাকবেনা। 
অন্যথায় সেটা ওয়াতনে আসলি হিসেবেই থাকবে।   

আরো জানুনঃ  

(০৩)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি রাস্তার দুরত্ব ৭৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি হয়,তাহলে রাস্তার মাঝে কসর করবে।
তবে নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের পর থেকে পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে। 

(০৪)         
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُولُ إِذَا سَمِعْتُمِ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ فَإِنَّه مَنْ صَلّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللّهَ لِي الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মুয়াযযিনের আযান শুনলে উত্তরে সে শব্দগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে (এর পরিবর্তে) আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমাত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা এ বান্দা আমিই হব। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দু‘আ করবে, ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) দিন তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে।
মুসলিম ৩৮৪, আবূ দাঊদ ৫২৩, নাসায়ী ৬৭৮, তিরমিযী ৩৬১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১৬৯০, ইরওয়া ২৪২, সহীহ আল জামি‘ ৬১৩।

★সুতরাং আযানের পর দরুদ পড়া মুস্তাহাব।
ইকামতের পর দরুদ পাঠ মুস্তাহাব নয়।
এ সময়ে ইমামের সাথে তাকবিরে তাহরিমা বলে  নামাজ শুরু করবে। 

(০৫)
জী,দলিল ভিত্তিক। 


عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها

হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়তেন,তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেনকিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। {সুনানে নাসায়ী কুবরাহাদীস নং-১১৯৩সুনানে আবু দাউদহাদীস নং-৯৮৯মুসনাদে আবী আওয়ানাহাদীস নং-১৫৯৪}


আরো জানুনঃ 

https://ifatwa.info/34707/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...