উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
,
জড় ও জীবসহ সবকিছুই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই পবিত্র কুরআনে ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল প্রাণীর রিযিক তথা জীবিকার দায়িত্বভার নিজে গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছেন। আর তার ভাণ্ডার অফুরন্ত। যা কখনো শেষ হবার নয়।
,
একটি হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন যে, তোমাদের সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ অর্থাৎ সমস্ত জিন-ইনসান কোনোস্থানে একত্রিত হয়ে আমার নিকট প্রার্থনা করে। আর আমি তাদের সকলের প্রার্থণা মাফিক তাদেরকে দান করি, তাহলে আমার ভাণ্ডার থেকে এতোটুকুও কমবে না যতোটুকু সুঁই সাগরে ডুবিয়ে উঠালে সাগরের পানি কমে। তাই পৃথিবীতে জনসংখ্যা যতোই হোক না কেন। প্রত্যেকের রিযিকের ব্যবস্থা অবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালা করে থাকেন ও করবেন। প্রত্যেক মুসলমানের এই বিশ্বাস রাখা চাই। এর বিপরীত আকীদা পোষণ করা কুফরী।
,
তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা নিষেধ।
তবে অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কখনও এক্ষেত্রে হুকুমের মধ্যে কিছু শিথিলতা আসে। যা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। নিম্নে ব্যাখ্যাসহ এর হুকুম বর্ণনা করা হলো।
জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনিয়তা ও পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে। সকল ক্ষেত্র ও সকল পদ্ধতির হুকুম এক নয়।
মৌলিকভাবে এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
এক. জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যার দ্বারা নারী বা পুরুষ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
দুই. অস্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না যেমন : কনডম ব্যবহার করা, পিল সেবন করা ইত্যাদি।
তিন. গর্ভধারনের পর গর্ভপাত ঘটানো।
প্রথম পদ্ধতিটি গ্রহণ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কেননা এতে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। তবে এক্ষেত্রেও কখনও কোনো কোন অভিজ্ঞ দীনদার ডাক্তারের বক্তব্যমতে গর্ভধারণের কারণে মায়ের প্রাণনাশের আশঙ্কা হলে স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা বৈধ হবে।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতি যদি সন্তানকে কিভাবে খাওয়াবে,এই শংকায় অবলম্বন করে থাকে,তাহলে হারাম,কারন এতে আল্লাহর ক্ষমতার উপর সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
এই ২য় পদ্ধতি কেবল শরয়ী ওযরের ক্ষেত্রে বৈধ হবে।
যেমন ফুকাহায়ে কেরামগন নিচের ছুরত গুলোতে জায়েজ বলেছেন।
১। দুই বাচ্চার জন্মের মাঝে কিছু সময় বিরতি দেওয়া যাতে প্রথম সন্তানের লালন-পালন, পরিচর্যা ঠিকমত হয়।
২। স্ত্রীর বয়স কম,তাই বাচ্চা লালন-পালনের সামর্থ না থাকলে।
৩। মহিলা অসুস্থ ও দূর্বল হওয়ার কারণে গর্ভধারণ বিপদজনক হলে।
(০৪) সন্তানের যদি দুধ না পাওয়ার আশংকা থাকে।
তবে ভালোভাবে মনে রাখা দরকার যে, এ সকল ক্ষেত্রে বৈধতা শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। রাষ্ট্রীয় ও সম্মিলিতভাবে মানুষের নিকট প্রচারণা করা ও এতে উদ্বুদ্ধ করা কোনোভাবেই বৈধ নয়।
,
★উল্লেখ্য যে শরয়ী ওযর যদি না পাওয়া যায়,তাহলে সন্তানকে কিভাবে খাওয়াবে,ছুরত টি বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত অবস্থায় (যেমন বৈবাহিক জীবনে সুখ শান্তির উদ্দেশ্যে,,,) অস্থায়ী এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা মাকরুহ।
অনেকেই এটাকে ভালো নয় বলেও আখ্যায়িত করেছেন। (এই বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দ এর সর্বশেষ প্রকাশিত কিছু ফাতওয়ায় এমনটি পাওয়া গিয়েছে।)
এক্ষেত্রে অবশ্যই স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে।
আর তৃতীয় পদ্ধতিও নাজায়েয। তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দূর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় আর গর্ভধারনের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে গর্ভপাত বৈধ হবে। আর মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে বৈধ নয়।
[মুসলিম শরিফ ২/৩১৯, জাদীদ ফিকহী মাবাহেস ১/২৮২,জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/১৯৮]
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে "সন্তানকে কিভাবে খাওয়াবে" এই উদ্দেশ্য নয়, বরং সন্তান লালন পালনের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত না থাকা,বা এই মুহুর্তে যদি সন্তান হয় তাহলে মায়ের প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি হবে,এই উদ্দেশ্যে যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে,এটি হারাম হবেনা।
মাকরুহ তথা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কাজ বলে গণ্য হবে।