بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ভুল চিকিৎসায়
রোগীর মৃত্যু বা অঙ্গহানি হলে দোষী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট
কোনো আইন দেশে নেই। কিন্তু ইসলামে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। ইচ্ছাকৃত হত্যা বা
ভুলবশত হত্যা উভয়ের দণ্ডবিধি পবিত্র কোরআনে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَن يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً ۚ
وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ
مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰ أَهْلِهِ إِلَّا أَن يَصَّدَّقُوا
‘কোনো মুমিনকে হত্যা করা কোনো মুমিনের কাজ
নয়। তবে ভুলবশত হলে তা ভিন্ন বিষয়। কেউ কোনো মুমিনকে ভুলবশত হত্যা করলে একজন মুমিন
দাস মুক্ত করবে এবং তার পরিজনবর্গকে দিয়ত অর্পণ করবে। যদি না তারা ক্ষমা করে। ’ (সুরা
: নিসা, আয়াত : ৯২)
এই আয়াতে দিয়ত বা রক্তপণ হচ্ছে প্রায় ১৯ ভরি সোনা বা দুই
হাজার ৬২৫ ভরি রুপা কিংবা ১০০ উট (নির্দিষ্ট বয়সের)। এটা হচ্ছে পূর্ণ দিয়ত, যা নিহত ব্যক্তি পুরুষ হলে ওয়াজিব হয়।
আর নারীর দিয়ত সর্বক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক। (হেদায়া, ৪/৬৫৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত নয়
এমন কেউ যদি চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীর ক্ষতি করে ফেলে, তাহলে তার ওপর জরিমানা আরোপ হবে। ’ হাদিসের
বর্ণনাকারী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এটা শুধু ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, বরং শল্যচিকিৎসার ক্ষেত্রে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩০)
হাদিসের অর্থ হচ্ছে, চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে রোগীর
ক্ষতি করে ফেলেন, তাহলে তাঁকে
জরিমানা দিতে হবে। মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.) বিষয়টি এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যে
ডাক্তার দুই ধরনের—এক. বিজ্ঞ ডাক্তার, দুই. অনভিজ্ঞ ডাক্তার।
কোনো বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর সম্মতিতে চিকিৎসার সব নিয়ম
মেনে চিকিৎসা করেন, অস্ত্রোপচার
করেন, তদুপরি দুর্ঘটনাক্রমে রোগীর
মৃত্যু, অঙ্গহানি বা অন্য কোনো ক্ষতি
হয়ে যায়, তাহলে ডাক্তার দায়ী হবেন না।
তাঁর ওপর কোনো জরিমানা বর্তাবে না। বিজ্ঞ ডাক্তার যদি রোগীর অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা বা
অস্ত্রোপচার করেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রীয় নিয়ম-নীতিবহির্ভূত হয় আর তাতে রোগী মারা যায়
তাহলে চিকিৎসকের ওপর দিয়ত (রক্তপণ) আরোপিত হবে। কোনো অঙ্গহানি হলে শরিয়তের নির্ধারিত
জরিমানা (অঙ্গের পণ) বর্তাবে।
অনভিজ্ঞ ডাক্তারের সঠিক বা ভুল চিকিৎসায় যেকোনোভাবেই রোগীর
মৃত্যু হলে ডাক্তারের ওপর পূর্ণ দিয়ত (রক্তপণ) বর্তাবে। অঙ্গহানি হলে অঙ্গের পূর্ণ
জরিমানা দিতে হবে। ডাক্তার যদি নিজ হাতে অস্ত্রোপচার করেন, ইঞ্জেকশন বা স্যালাইন পুশ করেন কিংবা ওষুধ
নিজ হাতে খাইয়ে দেন, সে ক্ষেত্রেই
শুধু ওপরের বিধান প্রযোজ্য। চিকিৎসক যদি শুধু ওষুধ লিখে দেন বা প্রেসক্রিপশন দেন এবং
এর বেশি কিছু না করেন আর ওষুধ সেবন করে রোগীর ক্ষতি হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিধান প্রযোজ্য
নয়। বিচারক সে ক্ষেত্রে চিকিৎসককে কোনো যৌক্তিক শাস্তি দিতে পারেন। (ফতওয়ায়ে শামি, ৯/২১৪; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, ৫/৫৬)
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রকৃতপক্ষেই যদি তিনি ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে প্রমাণিত হোন,
তাহলে বাকি টাকা পরিশোধ করা আপনার উপর আবশ্যক নয়।