আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
210 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

১। ঝাল হাদিসের বিধান কি ? জাল যইফ হাদিসের আমল করতে হবে কি ?

২। রিচার্জের ক্যাশব্যাক কি সম্পূর্ণ হালাল ?

৩। একটি ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারলাম, "বিকাশ কোম্পানিতে ওয়ালেট/অ্যাকাউন্ট ওপেন করার মধ্য দিয়ে বিকাশ কোম্পানি ইসলামি শরিয়াহ এর দৃষ্টিতে মুস্তাকরিজ বা ঋণগ্রহীতা হয়।আর মুস্তাকরিজ থেকে শর্তের ভিত্তিতে কিংবা প্রচলনের (উরফ) ভিত্তিতে কোনো ধরনের প্রফিট কনজিউম/ভোগ করলে সেটা সুদ হয়।" এই তথ্যটি কি সঠিক ?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১. জাল হাদীস সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি,

জাল হাদীস, যাকে আরবী ভাষা এবং মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় মওজু বলা হয়। সহজ কথায় যেটি রাসূল সাঃ এর হাদীস নয়, তাকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলার নামই জাল বানোয়াট হাদীস।

রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়, এমন কোন কথাকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলার নাম জাল হাদীস। আসলে এসবকে হাদীস বলাই উচিত নয়। কিন্তু যেহেতু এসবের নিসবত জাল বর্ণনাকারীরা রাসূল সাঃ এর দিকে করেছে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে, তাই শুধু নিসবতের কারণে ওসব বাতিল বর্ণনার সাথেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীস শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর মানে এটা নয় যে, ওসব বর্ণনা আসলে হাদীস। যেমন মিথ্যা নবী শব্দ। আসলে যে মিথ্যা নবী দাবি করে সেতো নবীই নয়। তবু আমরা বলি মিথ্যা নবী কাদিয়ানী, মুসায়লামায়ে কাজ্জাব। ঠিক জাল হাদীসের ক্ষেত্রেও তা হাদীস না হওয়া সত্বেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম জাল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন।

জাল হাদীসের হুকুম,

যেহেতু জাল হাদীস হাদীস নয়। তাই সুনিশ্চিতভাবে জাল ও বানোয়াট জানার পরও উক্ত বক্তব্যটিকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। হারাম। তবে এটি জাল হাদীস তা জানানোর জন্য বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন কুফরী কথা বলা জায়েজ নয়। কিন্তু কথাটি কুফরী সেটি বুঝানোর জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করা জায়েজ আছে।

জাল হাদীসকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করা মানে হল রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যা কথা বলা। আর রাসূল সাঃ এর নামে মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে হাদীসে। যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-১২০০, মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-১৪৮০, মুসনাদে দারেমী, হাদীস নং-৬১৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩}

عَنِ المُغِيرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ، مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

হযরত মুগীরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল ইরশাদ করেছেন, আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১২৯১, ১২২৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১২৭৬}

সুতরাং কেউ যদি না জেনে জাল হাদীস বর্ণনা করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে না। তবে যদি জাল জানার পরও রাসূল সাঃ এর দিকে নিসবত করা উক্ত জাল বর্ণনাটিকে রাসূল সাঃ এর হাদীস বলে প্রচার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি হাদীসে উল্লেখিত ধমকীর আওতাভুক্ত হবে। লোকটি খুবই ঘৃনিত এবং মারাত্মক গোনাহের কাজ করল বলে সাব্যস্ত হবে।

তবে মানুষকে বুঝানোর জন্য বা জানানোর জন্য জাল হাদীসকে জাল বলে উল্লেখ করার দ্বারা গোনাহগার হবে না। যেমন কুফরী কথাকে কুফরী কথা প্রমাণের জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করে তার হুকুম বলে দেয়া গোনাহের কাজ নয়। {দ্রষ্টব্য-কাওয়ায়েদুত তাহদীস-জামাল উদ্দীন কাসেমীকৃত-১৫, ফাতহুল মুলহিম-১/৬১}

* মুহাদ্দিসিনে কেরামের নীতি অনুযায়ী বলা যায়, যে ফাযাইলে আ'মালের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীসকে বর্ণনা করা ও তার উপর আ'মল করা জায়েয রয়েছে।তবে মাওযু(বানোয়াট/মিথ্যা)বর্ণনার ভিত্তিতে আ'মল করা জায়েয হবে না।আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/7225/

২. বিকাশ মাঝে মাঝে গ্রাহকদের ক্যাশব্যাক স্বরুপ কিছু টাকা হাদিয়া দেয়,যাহা নেওয়া বৈধ। এটি আপনার জন্য উক্ত কোম্পানীর পক্ষ থেকে হাদিয়া ধরা হবে। তাই উক্ত ক্যাশব্যাক ব্যবহার করাতে কোন সমস্যা নেই।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ. قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا. وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ. ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো, সাদকা তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হল হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৬]

বিস্তারিত জানুনঃ 

https://ifatwa.info/7142/

https://www.ifatwa.info/112

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বিকাশ থেকে ৩৫ টাকা রিচার্জ করার পর ৫ টাকা ক্যাশব্যাক দিয়েছে, এটা হাদিয়া। এটি গ্রহন করা জায়েজ আছে।

৩. ক্যাশব্যাক কাকে বলে? আপনি কোন কিছু ক্রয় করে এর মূল্য পরিশোধ করলেন। তখন পণ্যের মালিক অফারস্বরূপ কিছু এমাউন্ট আপনাকে ব্যাক করে দিল। এটাই হচ্ছে ক্যাশব্যাক।

বিকাশ, রকেট কিংবা অন্য যেকোনো কোম্পানি গ্রাহককে যে ক্যাশব্যাক প্রদান করে থাকে, এটি আপনার জন্য উক্ত কোম্পানীর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ধরা হবে। তাই উক্ত ক্যাশব্যাক ব্যবহার করাতে কোন সমস্যা নেই।

কারণ এটি টাকার বিনিময়ে টাকা লেনদেন নয়। আপনি পেমেন্ট করেছেন এবং বিক্রেতা নিজের থেকে আপনাকে উপহার দিয়েছে। কাজেই এটি সুদের পর্যায়ে পড়বে না।

দলীল-

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৪]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ. قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا. وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ. ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো সাদকা, তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হত হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৬]


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...