সহিশিক্ষা নিয়ে অনেকেই ফতোয়া দিয়ে থাকে। কেউ বলে দ্বীনের খাতিরে পড়তে চাইলে পড়া যাবে।তবে কিছু শর্ত মানতে হবে।আবার অনেকে ডিরেক্ট ই হারাম করে দেয়। আল্লাহু আলাম।নিচে এরকম একটা ফতোয়া দিচ্ছি,এই ফতোয়া অনুযায়ী আমি কি কাউকে দাওয়াহ দিতে পারবো?অর্থাৎ কেউ সহশিক্ষায় দ্বীনের খাতিরে পড়তে চাইলেও আমি তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে এই দিকে নিয়ে আসতে পারবো যাতে সহশিক্ষায় না যায়?
ফতোয়া -
মেয়েদের জন্য কলেজ-ভার্সিটিতে পড়াশুনা : শরয়ী দৃষ্টিকোণ।
মেয়েদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা একেবারেই নাজায়েয নয়, বরং শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষালাভ করা শরীয়াহ মোতাবেক একটি কাম্য বিষয়।
মেয়েদের জন্য আধুনিক শিক্ষা অর্জনের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, যদি ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে থেকেই তা অর্জন করা সম্ভব হয় তাহলে এখানে থেকেই শিক্ষালাভ করা, বাহিরে অন্য কোথাও না যাওয়া। তবে যদি এই জ্ঞান অর্জনের জন্য ঘরের বাহিরে যেতে হয়, তবে তার জন্য কিছু শর্ত আছে যা অবশ্যই পালন করতে হবে।
যেখানে এই শর্তগুলি পাওয়া যাবে সেখানে মেয়েদের জন্য এই পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া জায়েয হবে এবং যেখানে এই শর্তগুলি অনুপস্থিত থাকবে সেখানে মহিলাদের জন্য এই পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া জায়েয হবে না।
শর্তগুলি নিম্নরূপ:
১.মহিলা স্কুলগুলি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়া উচিত, কোনো সহ-শিক্ষা থাকা উচিত নয় এবং এই বিদ্যালয়গুলিতে পুরুষদের আসা-যাওয়া করা উচিত নয়। এছাড়াও, তাদের বিদ্যালয়ের স্থান ফিতনা-ফাসাদ এবং এর সম্ভাবনা থেকে নিরাপদ হওয়া উচিত।
২.এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত নারীদের আসা-যাওয়া ব্যবস্থা করতে হবে শরয়ী পর্দাসহ এমন নিরাপদ ভাবে যাতে কোনো পর্যায়ে ফিতনার ভয় না থাকে।
৩. টিচার হিসাবে সদাচারী, সতীসাধ্বী মহিলা নিয়োগ করা উচিত। যদি এই ধরনের শিক্ষিকা না পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজনীয় বিদ্যা (যেমন চিকিৎসা) শিক্ষার জন্য একজন গুণী এবং বিশ্বস্ত লোক নিয়োগ করা উচিত, যিনি পর্দার আড়াল থেকে মহিলাদের কে শিক্ষা দেবেন। কোনো পর্যায়েই হিজাব ছাড়া তার মুখোমুখি হওয়া উচিত নয় এবং সরাসরি এতে জড়িত হওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও, চিকিৎসা শিক্ষা এবং এর ব্যবহারিক অনুশীলনে, হিজাব এবং সতরের শরয়ী বিষয়গুলো সম্পূর্ণরূপে পালন করা উচিত।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যদি শরয়ী সফর পরিমাণ দূরত্বে হয়, তাহলে মহিলাকে তার মাহরামের সাথে সেখানে যেতে হবে এবং হোস্টেলে একাকি থাকা উচিত হবে না।
৫.এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আকীদা, ধর্মীয় আচার-আচরণ ও চারিত্রিক নৈতিকতার অবনতি হওয়ার আশংকা না থাকতে হবে।
উপরোক্ত শর্তাবলী সহ যদি কোন স্থানে প্রয়োজনীয় আধুনিক শিক্ষা প্রদান করা হয়, তবে সেখানে মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া জায়েজ ও বৈধ হবে। এছাড়া ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে নাজায়েয ও অবৈধ হবে।
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সাধারণত নারীদের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত, সেসব ক্ষেত্র ছাড়া যা নারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত এসব ক্ষেত্রে উপরোক্ত শর্ত সাপেক্ষে পড়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
এই শর্তগুলি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী স্বামীর অনুমতি নিয়ে শিক্ষার জন্য যেতে পারবে, পিতা-মাতার নিষেধ করার অধিকার নেই।
আর শর্ত পূরণ না হওয়া অবস্থায় স্বামী চাইলেও
যাওয়া জায়েয হবে না।
একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
[ফাতাওয়া নং ১৪৪০১২২০০৭৯৭]
ফাতাওয়া বিভাগ
জামিয়া ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউন,করাচী
অনুবাদ ও সম্পাদনা: মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম
আমি এই ফতোয়া মানতে চাই।অনেকে আবার মানে দ্বীনের খাতিরে পড়লে সহশিক্ষায় পড়া যাবে।কিন্তু আমি ভাবি অনেকেই সহশিক্ষায় যায় হয়তো নাফসের তাড়নায়, কেউবা নারীবাদী, কেউ আবার ফেমিলির চাপে।এইখানে সঠিকভাবে কেউ দ্বীনের খাতিরে আসলেই পড়ছে এরসংখ্যা হয়তো কম।আল্লাহু আলাম।যেমন আমার এক বোন ঢাকা ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হলো সেইখানে গিয়ে উনি এক বিপরীত পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। উনার সেই জায়গা টা জাহান্নামের মতো লাগছে!এরকম আর ও অনেক বোন হয়তো ফিতনায় পড়ছে।কেউ যিনায় লিপ্ত হচ্ছে।আসলে উদ্দেশ্য নিয়ে ঠিকই যাওয়া হয় কিন্তু সেই ফিতনাময় পরিবেশে ঢুকার পর বুঝা যায় কি অবস্থা হবে!আমি কোনো মুফতী না।কিন্তু একজন মেয়ে ও বোন হিসেবে যা বুঝতেছি,প্রায়সংখ্যক মেয়েরা এভাবে বাইরে বের হলে তো ফিতনা বাড়বে!ক=আফে*র দের উদ্দেশ্য তো এটায়!মেয়েদের ঘর থেকে বের করানো।রইলো দ্বীনের উদ্দেশ্যে পড়া!সেইটা কি আসলেই সেভাবে করা হচ্ছে।তারা বলছে তারা সেখানে গিয়ে দাওয়াহ দিবে।কিন্তু মেয়েদের প্রথম ফরজ কাজ চারটা তো ঠিকমতো হচ্ছেনা।নামায কাযা যাচ্ছে,হয়তো কারো পর্দা নষ্ট হচ্ছে।এছাড়া পাবলিক ভার্সিটিতে গ্রুপভিত্তিক কাজ করা লাগে যেখানে ছেলেমেয়ে একসাথে কাজ করা লাগে।করতেই হয়!তখন একটা মেয়ে বিপরীত পরিস্থিতিতে পড়ে যায়।
যারা নতুন হিদায়তপ্রাপ্ত তারা তো এসব পরিস্থিতি ভালোকরে হ্যান্ডেল করতে পারবেনা!তারা হ্যান্ডেল না করে উলটা গুনাহ করে ফেলবে।এভাবে করে কয়জন টিকে থাকবে এই পরিবেশে?এছাড়া মেয়েদের এভাবে বেশি বের হওয়া ভাইদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।এখন এমন ফিতনা যে একজন দ্বীনি ভাই দ্বীনি বোনকে সামনে ফেলে তার মনে কুধারণা আসে নেক সুরুতে।মেয়েরা কোনো না কোনোভাবে বাইরের দিকে যাচ্ছে। ঘরে থাকবে কে তাহলে?সন্তানকে সহিহ তারবিয়াহ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত কে হবে?এখনকার মেয়েরা বরং আমি ই ঘরের কাজ এতো পারিনা।কিন্তু ঘরের কাজ পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আর রইলো দুনিয়াবি পড়াশোনা এইটা এখন অনলাইনেও নানাভাবে করা যায়!এছাড়া গার্লস কলেজ ও আছে!তাহলে মেয়েরা কেনোই বা পাবলিক ভার্সিটিতে যাবে?
মূলত আমার প্রশ্ন-এখন আমি কি এই কথাগুলো আমার কোনো বোনকে বুঝাতে পারবো যাতে সে সহশিক্ষায় না যায়?আমি যেহেতু একটা ফতোয়া ফলো করি তো সেই অনুযায়ী কাউকে কি বুঝাতে পারবো। আমি আমার কয়েকটা বোনকে এইটা বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু তাদের কেউ কেউ এই ফতোয়ায় আছে যে দ্বীনের খাতিরে পড়বে।কিন্তু শর্ত গুলো কি আসলেই মানছে?আমার কি গুনাহ হবে কারণ ও তো দ্বীনের উদ্দেশ্য নিয়ে পড়ছিলো?কিন্তু আমার কারণে সে আর পড়লো না?
এক দ্বীনিবোন বুঝাতে চেয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত সেকুলার ফেমিলিতে আছে, অন্য কেউ অভিভাবক হচ্ছেনা ততক্ষণ এইখানে না পড়তে।কারণ ফেমিলির চাপে অনেকে সহশিক্ষায় গিয়ে পড়ে।এরপর যখন অন্য কেউ অভিভাবক হয়ে যাবে অর্থাৎ বিয়ে হয়ে সংসার করবে তখন আর সহশিক্ষায় না পড়তে।কারণ ফেমিলি প্রেশার দিলে তো আর কিছু করার থাকেনা।অনেকটা কষ্টকর হয়ে যায়।ওর যুক্তি কি ঠিক আছে?