উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নেককার লোকের সাথে উঠা-বসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যখন ভালো লোকের সাথে চলা-ফেরা করবে, তার প্রভাব একজন মানুষের মধ্যে অবশ্যই থাকবে। । সৎ সঙ্গ একজন মানুষকে ভালো হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে যদি একজন যুবকের সাথী-সঙ্গীরা অসৎ, খারাপ ও দুশ্চরিত্র হয়, তখন তার ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে না। যখন একজন মানুষ অসৎ ও মন্দ আখলাকের লোকের সাথে থাকবে তার প্রভাব ও তার দুশ্চরিত্রের প্রভাব তার মধ্যে পরিলক্ষিত হবে।
,
এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل» رواه الترمذي وحسَّنه
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধু বানাবে”।
তিরমিযি, হাদিস: ২৩৭৮
একজন বন্ধুই মানুষের ভালো হওয়া ও খারাপ হওয়ার মূল চালিকা শক্তি। এটি শুধু মুখের কথা বা দাবি নয় বরং বাস্তবতা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيَوۡمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيۡهِ يَقُولُ يَٰلَيۡتَنِي ٱتَّخَذۡتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلٗا ٢٧ يَٰوَيۡلَتَىٰ لَيۡتَنِي لَمۡ أَتَّخِذۡ فُلَانًا خَلِيلٗا ٢٨ لَّقَدۡ أَضَلَّنِي عَنِ ٱلذِّكۡرِ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَنِيۗ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِلۡإِنسَٰنِ خَذُولٗا ٢٩ ﴾ [الفرقان: ٢٧، ٢٩]
আর সেদিন যালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম,! হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশ-বাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।
সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৭-২৯
আবুদ দরদা রা. আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنما مثل الجليس الصالح والجليس السوء كحامل المسك ونافخ الكير، فحامل المسك إما أن يحذيك وإما أن تبتاع منه وإما أن تجد منه ريحاً طيبة، ونافخ الكير إما أن يحرق ثيابك، وإما أن تجد ريحاً خبيثة».
“নেককার সাথী ও অসৎ সাথীর দৃষ্টান্ত: একজন আতর বহনকারী ও একজন কামারের মত। আতর বহনকারী সে হয় তোমাকে আতর দেবে, অথবা তুমি তার থেকে খরিদ করবে অথবা কম পক্ষে তুমি তার থেকে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামার সে হয় তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করবে”
মুসলিম, হাদিস: ২৬২৮।
যারা নেক লোকদের সাথে উঠা-বসা করবে, তারা অবশ্যই ভালো কিছু অর্জন করবে। বিশেষ করে, তারা তাদের সংশ্রব থেকে ভালো কিছু শিখবে বা দো‘আ লাভ করবে। যদিও তাদের আমল ঐ সব ভালো লোকদের আমলের পর্যায়ে পৌছবে না। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وله قد غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسهم»
“আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম, আর তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসবে তারাও বঞ্চিত হবে না”।
মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৯।
অনুরূপভাবে অনুকরণীয় হিসেবে তাদের গ্রহণ করে তাদের ইলম, আমল ও আখলাক দ্বারা প্রভাবিত হওয়া দ্বারাও উপকৃত হবে। যেমনটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়,
«المرء على دين خليله، فلينظر أحدكم من يخالل»
“মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর, তাকে অবশ্যই চিন্তা করতে হবে, কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে”।
তিরমিযি হাদিস: ২৩৭৮
যখন কোনো ব্যক্তির বন্ধু সৎ হয়, তার ভালো হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে। তার মধ্যে যে সব দোষত্রুটি আছে, তা যখন তার বন্ধুদের সামনে ধরা পড়ে তখন তারা তাকে সংশোধন করে এবং তার দোষত্রুটি ধরিয়ে দেয়। তখন সে নিজেই সংশোধন হতে এবং দোষত্রুটির চিকিৎসা গ্রহণে চেষ্টা করে। হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المؤمن مرآة المؤمن»
“একজন মুমিন অপর মুমিনের আয়নাস্বরূপ।”
আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৮
আয়নায় যেমন একজন মানুষ তার চেহারা দেখে অনুরূপভাবে সে তার অপর ভাইয়ের মধ্যে নিজেকে দেখতে পায়।
নেকলোকদের সাথে উঠা-বসা করা, আল্লাহর মহব্বত লাভের কারণ হয়ে থাকে। হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
«وجبت محبتي للمتحابين فيَّ والمتجالسين فيَّ»
“আমার মহব্বত ওয়াজিব হয়ে যায়, তাদের জন্য যারা আমার জন্য একে অপরকে ভালোবাসে এবং আমার জন্য একে অপরের সাথে একত্রে বসে।”
মুসনাদে আহমাদ ৫/২৩৩, নং ২২০৮৩।
পক্ষান্তরে যারা সৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে না এবং অসৎ লোকদের সাথে উঠা-বসা করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অসংখ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
,
ভালো মানুষের সংস্পর্শে মানুষ ভালো কাজের দিকে ধাবিত হয়। আর অসৎ লোকের সংস্পর্শে ভালো মানুষও খারাপ হয়ে যায়।
তাই সৎ সঙ্গ লাভের পাশাপাশি অসৎ লোকদের সংস্পর্শ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই।
অসৎ সঙ্গ ত্যাগের আল্লাহর কাছে দোয়া বেশি বেশি করা যায়
اَللَّهُمَّ وَفِّقْنِي لِمُوَافِقَةِ الْأَبْرَارِ، وَجَنِّبْنِيْ مُرَافَقَةَ الْأَشْرَارِ، وَآَوِنِيْ بِرَحْمَتِكَ إِلَى دَارِ الْقَرَارِ, بِإِلَهِيَّتِكَ يَا إِلَهَ الْعَالَمِيْنَ
তাই নেক বান্দাদের সংস্পর্শ লাভ এবং অসৎ লোকদের সঙ্গ ছাড়তে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা জরুরি।
.
★★সুতরাং আপনি যেই পরিবেশেই থাকুন না কেনো,আপনাকে শরীয়তের পুরোপুরি আহকাম মেনে চলতে হবে।
এক্ষেত্রে বাবা মা যদি শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজের হুকুম দেয়,তা মানা যাবেনা।
তবে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহারও করা যাবেনা।
রাসুল সাঃ বলেছেন
وَقَالَ: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
তিনি বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় কারোর আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে।
(আবু দাউদ ২৬২৫)
,
★★প্রিয় বোন! আপনি নামাজ রোযা পর্দা সবকিছুই ভালো ভাবে মেনে চলবেন।
পরিবারেত সকলকে হেকমতের সাথে বুঝাইতে থাকবেন।
,
আপনি লাইব্রেরি থেকে ইসলামের বিধি বিধান সংক্রান্ত কিতাব,রাসুল সাঃ ছাহাবায়ে কেরামদের জীবনী পড়ুন,বুযুর্গানে দ্বীনদের জীবনী,তাদের লেখা কিতাব পড়ুন।
নসিহাহ মূলক কিতাবাদী পড়ুন।
,
তাতেই অনেক উপকার হবে, ইনশাআল্লাহ
এবং পরিবারের সকলকে হেকমতের সাথে দ্বীন বুঝাইতে থাকবেন।