তালাকের ক্ষেত্রে সন্দেহ মনে না থাকা ইত্যাদি বিষয়।

Question

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শায়েখ।
কোন একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রী বললো ঃ আমি চলে যাবো থাকবো না
স্বামী ঃ যা চলে যা তোর বাপের বাড়ি ( এমন ওতো হতে পারে যা চলে যা তোর বাপের বাড়ি তালাক দিতে পারবোনা)                                 
স্ত্রী ঃ তালাক দে আমার আমি  থাকবো না
স্বামী ঃ চুপ
(তালাকের কথা শুনে স্বামী যেহেতু চুপ আছে তাহলে তো ধরা যায় চলে যা বলতে তালাক বোঝানো হয়নি) আপনি কি মনে করেন শায়েক।
আমার মনে আসছেনা তখন কি উদ্দেশ্য ছিলো আমারতো মনে হয় এমনি রাগে বলেছি তালাক উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ ই ভালো জানেন।

উপরের বিষটা স্বামীর মনে ছিলোনা স্বামীর মনে না থাকা ও সন্দেহের রোগ আছে। আর প্রায় ২ বছর পর বিভিন্ন কারনে স্বামীর মনে সন্দেহ হয় তার পর  স্ত্রীকে বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন করে উপরের বিষয় গুলো পাওয়া যায় তাহলে করনীয় কি?

উপরের বিষয় যেহেতু দুবছর আগের সেহেতু এমন ঘটনা যদি এর ভিতর আবার ঘটে তাহলে কি হবে?

আর উপরের বিষয়ে যদি তালাক হয় তাহলে কি স্বামী - স্ত্রী সম্পর্ক থাকবে নাকি আবার বিয়ে পড়ানো  লাগবে? আর এর ভিতর কোন সন্তান হলে তার কি অবস্থা হবে? যেহেতু প্রায় ২ বছর পর সিদ্ধান্তে আসছে।
এরকম সংসার জীবনে আরো হয়েছে কিন্ত কেনায়া শব্দ ব্যাবহার হয়েছে কিনা মনে পড়েনা কিন্তু সন্দেহ হয় আর স্ত্রী ও বলতে পারেনা স্ত্রী বলে তুমি বলোনি এক্ষেত্রে করনীয় কি?
আর স্পষ্ট তালাক কখনো বলেছি কিনা সেটা ও বলতে পারিনা সেক্ষেত্রে সন্দেহ থেকে গেলে কি করতে পারি? স্ত্রী ও বলতে পারেনা তাহলে?( যেহেতু মনে পড়ে না সন্দেহের রোগ আছে সেহেতু ওয়াসওয়াসা হতে পারে)

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শায়েখ। প্রশ্নঃ সংসারে সামান্য বিষয় নিয়ে প্রায় ঝগড়া হয় কথা কাটাকাটি হয় স্ত্রী তালাক ও চাই আত্মহত্যার কথা ও বলে পরে বলে ভয় দেখানোর জন্য বলেছি ইত্যাদি। আমি ও মাথা গরমে অনেক রকম বলে ফেলি যেমন যাও তুমি আরো অনেক কিছু কিন্তু পরে আর স্পষ্ট মনে করতে পারিনা কি বলেছি আর চিন্তা ও হয় যে আমার কোন কথার দ্বারাই স্ত্রী তালাক হয়ে যায় কিনা আমার সন্দেহ হয়। এই অবস্থায় আমার করনীয় কি? আমি চিন্তায় কোন কাজে মন বসাতে পারছিনা শুধু চিন্তা হয় আমার পরকাল নষ্ট হবে নাতো? আমি খুবই মানসিক অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
আমি চাই সব কিছুর বিনিময়ে হলেও আল্লাহর ক্ষমা।
(আমার আবার কিছুটা শুচিবায়ু রোগের সমস্যা আছে পবিত্রতায় নামাজে অজু ইত্যাদিতে সন্দেহ হওয়া। সহজে কোন কিছুর সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা) এই অবস্থায় আমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন।
আশা করি কোরআন হাদিসের আলোকে উত্তর দিবেন। জাজাকাল্লাহু খাইরান।

Answer 1

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 

بسم الله الرحمن الرحيم 

তালাক খুবই মারাত্মক একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই    

তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।

কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে উল্লেখিত (যা চলে যা তোর বাপের বাড়ি) জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت

برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  

কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তুমি তোমার পরিবারের সাথে যুক্ত হও (অথবা নিজ পরিবারে ফিরে যাও) তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।

কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।

কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

বিস্তারিত জানুনঃ  

https://ifatwa.info/24050/

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কেনায়া বাক্য বলার সময় আপনার  যেহেতু তালাকের নিয়ত ছিলোনা,তাই এতে তালাক হবেনা।

,

আপনি সন্দেহের রুগী।

আপনি জীবনে তালাক দিয়েছেন কিনা সন্দেহে রয়েছেন।

সন্দেহের ভিত্তিতে তালাক হয়না,তাই আপনাদের ঘর সংসার বৈধ, এতে কোনো সমস্যা নেই।

,

আপনারা নিশ্চিত থাকুন।    

Comments

হুজুর আপনারা বলেন মনে মনে তালাক দিলে হইনা সেটা শয়তানী ধোকা ধরা হই তাহলে কেনেয়া তালাকের সময় মনের নিয়ত ধরা হই ব্যাপার টা একটু বুঝিয়ে বলুন না খুব চিন্তাই আছি 

---

আসসালামু আলাইকুম হুজুদ হুজুর তালাকের মজলিস এর ব্যাপারে মনে না থাকলে কি করবো খুব চিন্তাই আছি