আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,047 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
retagged by
আসসালামু'আলাইকুম।

১) মৃত ব্যক্তির মুখ দেখার যে রুসুম তা বিদআত বলে জেনেছি। এখন কেউ মারা গেলে কোন ব্যক্তি যদি   এই উদ্দেশ্যে মৃতের ঘরে যায় যে, আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎহবে, মৃতের মুখ দেখার নিয়্যাতে নয়, তবে এটা করতে পারবে কি?

২) কোন ব্যক্তির মধ্যে যদি মুনাফিক্বের প্রায় সমস্ত  আলামত প্রকাশ পায় তবে এমন ব্যক্তির গীবত করা জায়েয কি?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো জানাযার পূর্বে মৃত ব্যাক্তির চেহারা দেখা জায়েজ আছে।
কাফনের পরেও চেহারা দেখা জায়েজ আছে। 
 (ফাতাওয়ায়ে ফরিদিয়্যাহ  ৩/১৯৯)
তবে একটি বিষয় খিয়াল রাখতে হবে তাহলো জীবিত অবস্থায় যাদের সাথে পর্দা করা জরুরী মৃত্যুর পরেও তাদের সাথে পর্দা করতে হবে।

উল্লেখ্য জানাযার পর মৃত ব্যাক্তির চেহারা দেখানো ঠিক নয়।
মাকরুহ হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছে  
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَعِيلَ بْنِ سَمُرَةَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْحَسَنِ حَدَّثَنَا أَبُو شَيْبَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ لَمَّا قُبِضَ إِبْرَاهِيمُ ابْنُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُمْ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لَا تُدْرِجُوهُ فِي أَكْفَانِهِ حَتَّى أَنْظُرَ إِلَيْهِ فَأَتَاهُ فَانْكَبَّ عَلَيْهِ وَبَكَى
(سنن ابن ماجۃ ۱:۱۰۷ باب ماجاء فی النظر الی المیت اذا ادرج فی اکفانہ)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -তনয় ইবরাহীম ইন্তিকাল করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের বলেনঃ আমি না দেখা পর্যন্ত তোমরা তাকে তার কাফনে আবৃত করো না। অতঃপর তিনি এসে তার উপর ঝুঁকে পড়েন এবং কাঁদেন।
(ইবনে মাজাহ ১৪৭৫)
,
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে  
ما فی الہندیۃ ۵: ۳۸۷ ولا بأس بان یرفع ستر المیت لیری وجہہ وانما یکرہ ذلک بعد الدفن کذا فی القنیۃ ۔ وھوالموفق
 (فتاویٰ عالمگیریۃ ۵: ۳۵۱ الباب السادس عشر فی زیارۃ القبور وقرأۃ القرآن فی المقابر)
যার সারমর্ম হলো দাফনের পূর্বে মৃত ব্যাক্তির চেহারা দেখা জায়েজ আছে। 
তবে জানাযার পর এটা মাকরুহ।     
,
জানাযার নামাযের পরে তার চেহারা দেখানো ঠিক না। তবে জানাযা নামাযের আগে চেহারা দেখাতে কোন অসুবিধা নেই। আজকাল জানাযা নামাযে লোক বেশি হবে কখন?  সেই সময়ের জন্য জানাযে পিছিয়ে দিতে থাকে এটা কোনভাবেই ঠিক না। তবে আরো একটি বিষয় খিয়াল রাখতে হবে তাহলো জীবিত অবস্থায় যাদের সাথে পর্দা করা জরুরী মৃত্যুর পরেও তাদের সাথে পর্দা করতে হবে। [দারুল উলুম ৫/৪০৬]
,
সুতরাং  প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতঃ  কেউ মারা গেলে কোন ব্যক্তি যদি   এই উদ্দেশ্যে মৃতের ঘরে যায় যে, আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে, মৃতের মুখ দেখার নিয়্যাতে নয়, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এতে  কোনো সমস্যাই নেই। 
,
(০২) 
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে।

وقد تجب الغيبة لغرض صحيح شرعي لا يتوصل إليه إلا بها وتنحصر في ستة أسباب الأول : التظلم فلمن ظلم أن يشكو لمن يظن له قدرة على إزالة ظلمه أو تخفيفه . الثاني : الاستعانة على تغيير المنكر بذكره لمن يظن قدرته على إزالته . الثالث : الاستفتاء فيجوز للمستفتي أن يقول للمفتي : ظلمني فلان بكذا فهل يجوز له أو ما طريق تحصيل حقي أو نحو ذلك؛ والأفضل أن يبهمه .الرابع : تحذير المسلمين من الشر كجرح الشهود والرواة والمصنفين والمتصدين لإفتاء أو إقراء مع عدم أهلية فتجوز إجماعاً بل تحب ، وكأن يشير وإن لم يستشر على مريد تزوج أو مخالطة لغيره في أمر ديني أو دنيوي ويقتصر على ما يكفي فإن كفى نحو لا يصلح لك فذاك وإن احتاج إلى ذكر عيب ذكره أو عيبين فكذلك وهكذا ولا يجوز الزيادة على ما يكفي ، ومن ذلك أن يعلم من ذي ولاية قادحاً فيها كفسق أو تغفل فيجب ذكر ذلك لمن له قدرة على عزله وتولية غيره الخالي من ذلك أو على نصحه وحثه للاستقامة ، والخامس : أن يتجاهر بفسقه كالمكاسين وشربة الخمر ظاهراً فيجوز ذكرهم بما تجاهروا فيه دون غيره إلا أن يكون له سبب آخر مما مر . السادس : للتعريف بنحو لقب كالأعور . والأعمش . فيجوز وإن أمكن تعريفه بغيره (روح المعاني في تفسير القرآن العظيم والسبع المثاني، سورة حجرات- 12)

ছয়টি কারণে গীবত করা জায়েজ আছে। যথা-

১- জুলুম থেকে নিচে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে। এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে, যে একে প্রতিহত করতে পারবে।

২- খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গীবত করতে পারবে যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

৩- বিষয়টি সম্পর্কে শরয়ী সমাধান জানতে গীবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন বলা যে, আমাকে অমুক ব্যক্তি আমার উপর জুলুম করেছে, তাই আমারও কি তাকে আঘাত করা জায়েজ আছে? ইত্যাদি

৪- সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী ধোঁকা ও খারাবী থেকে বাঁচাতে গীবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদীস, আসার ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা ইত্যাদি সম্পর্কে দোষ জনসম্মুখে বলে দেয়া, যেন তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে মানুষ বাঁচতে পারে। 
,
এমন ভ্রান্ত মানসিকতা ও মিথ্যাচারকারী ব্যক্তিদের দোষ মানুষের কাছে বলা সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আমল হিফাযতের জন্য জায়েজ।

৫- প্রাকাশ্যে যদি কেউ শরীয়তগর্হিত করে, তাহলে তার খারাবী বর্ণনা করা এমন ব্যক্তির কাছে যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদ খায়, তাহলে মানুষের সামনে তার সরাসরি বদনাম করা জায়েজ আছে। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।

৬- কারো পরিচয় প্রকাশ করতে। যেমন কেউ কানা। তার পরিচয় দেয়া দরকার। কিন্তু নাম কেউ চিনতেছে না। কিন্তু কানা বলতেই সবাই চিনে ফেলে। তখন কানা বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গীবত হলেও এটা বলা জায়েজ আছে। এতে গীবতের গোনাহ হবে না। {তাফসীরে রুহুল মাআনী- ১৪/২৪২, সূরা হুজরাত-১২}
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...