আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
383 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম,আমি IOM 216 ব্যাচের একজন স্টুডেন্ট।

ঘুমের সময় আসলে ঘুমানোর আমলগুলো করতে পারি না,তখন ঘুম এসে যায়...

তাই ঘুমানোর কতক্ষণ পূর্বে এই আমলগুলো করা যাবে??
বা এশার নামাজের পর কি ঘুমানোর পূর্বের এই আমলগুলো করা যাবে??
জাযাকাল্লাহ খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

ঘুমের আগে আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সা.) কোন দোয়াটি পাঠ করতেন মুসলমান হিসেবে তা আমাদের সবারই জানা দরকার।

আল্লাহ বলেন,

وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا. وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا. وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا

তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ। দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, (সুরা আন-নাবা; আয়াত: ৯-১১)

 

ঘুমানোর সুন্নাত সমূহ

 

১. ইশার নামাযের পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করা, যাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ হয়। (বুখারী, হাদীস নং- ৫৪৭)

বি.দ্র. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীন, চৌকি, কাপড়ের বিছানা, চাটাই, চামড়ার বিছানা ইত্যাদির উপর শয়ন করেছেন বলে হাদীসে বর্ণিত আছে। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ২০৬৯/ শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)

 

২. উযু করে শয়ন করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩১১)

৩. শোয়ার পূর্বে বিছানা ভালভাবে ঝেড়ে নেয়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩২০)

৪. শয়নের পূর্বে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে ঘুমের কাপড় পরিধান করা। (আল মাদখাল, ৩ : ১৬২)

৫. শয়নের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো করা : ১. দরজা বন্ধ করা। ২. মশক বা পানির পাত্র এবং খাদ্য দ্রব্যের পাত্র ও অন্যান্য পাত্রসমূহ ঢেকে রাখা। যদি ঢাকার জন্য কোন বস্তু না পাওয়া যায়, তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তার মুখে একটি লাটি বা ছড়ি রেখ দেয়া, ৩. বাতি নিভানো। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫৬২৩-২৪)

 

৬. ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো। (মুস্তাদরাক, হাদীস নং- ৮২৪৯)

৭. ঘুমানোর পূর্বে কিছু পরিমাণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। যথা : আলহামদু শরীফ, সূরা কাফিরূন, আয়াতুল কুরসী, আমানার রসূল থেকে সূরা বাক্বারার শেষ পর্যন্ত, সূরা মুলক, আলিফ লাম মীম সিজদাহ ইত্যাদি তিলাওয়াত করা বেশি পড়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ছোট ২/ ৩ টি সূরা পড়ে নেয়া। (তাবারানী কাবীর হাদীস নং-২১৯৫/ আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং- ১২০৯/ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩২৭৫)

 

৮. ঘুমানোর পূর্বে কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং তাসবীহে ফাতেমী অর্থাৎ ৩৩ বার সূবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৩১১৩)

৯. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস প্রত্যেকটা তিনবার করে পড়ে হাতে দম করে যতটুকু সম্ভব মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে হাত মুছে দেয়া। তিনবার এরূপ করা। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫০১৭)

 

১০. ঘুমানোর সময় ডান কাতে কিবলামুখী হয়ে শোয়া সুন্নাত। উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এভাবে শয়ন করাকে আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩১৪/ সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং- ৫৫৪৯)

১১. শয়ন করে এ দু‘আ পড়াঃ

بِاسْمِكَ رَبِّـىْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ اَرْفَعُهٗ اِنْ اَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَاغْفِرْلَهَا وَاِنْ اَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ.

(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩২০)

 

১২. ঘুমানোর পূর্বে তিনবার এই ইস্তিগফার পড়াঃ

اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لَاۤ  اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَاَتُوْبُ اِلَيْهِ.

(তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৩৯৭)

১৩. এই দু‘আটিও পড়া:(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬৩১৪) 

اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا.

 

১৪. সর্বশেষে এ দু‘আটি পড়াঃ

اَللّٰهُمَّ اَسْلَمْتُ وَجْهِيْ اِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ اَمْرِيْ اِلَيْكَ وَاَلْجَاْ تُ ظَهْرِيْ اِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً اِلَيْكَ لَا مَلْجَاَ وَلَا مَنْجَاَ مِنْكَ اِلَّا اِلَيْكَ اَللّٰهُمَّ اٰمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِيْ اَ نْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِيْ اَرْسَلْتَ.

(বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ২৪৭)

 

১৫. শয়ন করার পর ভয়ে ঘুম না আসলে এই দু‘আ পড়াঃ

بِسْمِ ا للّٰهِ اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهٖ وَشَرِّ عِبَادِهٖ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَاَنْ يَّحْضُرُوْنَ.

(তিরমিযী, হাদীস নং- ৩৫২৮)

 

১৬. স্বপ্নে ভয়ংকর কিছু দেখে চক্ষু খুলে গেলে তিনবার

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ.

পড়ে বাঁ দিকে থু-থু ফেলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া। তাতে ক্ষতির আর কোন আশংকা থাকে না এবং এ দু‘আটি পড়াঃ

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هٰذِهِ الرُّؤْيَا.

(মুসলিম, হাদীস নং- ২২৬২)

 

১৭. সুযোগ হলে দুপুরে খানার পর কিছুক্ষণ কাইলূল্লাহ করা অর্থাৎ শয়ন করা। চাই ঘুম আসুক বা না আসুক। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৯৩৯)

(সংগৃহিত)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

ঘুমানোর পূর্বের কিছু আমল আছে যা ইশার নামাজের পরে পড়লেও হবে । যেমন সূরা মুলক তেলাওয়াত করা ইত্যাদি। আর কিছু আমল আছে যা ঘুমানোর পূর্বেই আমল করা সুন্নাত। যেমন, ঘুমানোর পূর্বের দোয়া পাঠ করা ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, ঘুমানোর সুন্নাত আমলগুলো  শয়নের পর পরই আদায় করা যাবে। যদিও ঘুম আসতে কয়েক ঘন্টা লেগে যায়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...